গ্লুকোমা চোখের এমন একটি রোগ, যার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি চিরতরে দৃষ্টি হারাতে পারেন। দেশের প্রায় ২০ লাখ মানুষ চোখের রোগ গ্লুকোমায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ৪০ বছর বয়সের পর থেকে গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এমন পরিস্থিতিতে রোগটি নিয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শনিবার (১৫ মার্চ) বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ উপলক্ষে শনিবার বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটি ও অ্যারিস্টোভিশনের উদ্যোগে রাজধানীর সোবহানবাগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
একটি গবেষণা জরিপে দেখা গেছে, দেশে সর্বমোট ২০ লাখের মতো গ্লুকোমা আক্রান্ত রোগী আছে। তবে আক্রান্ত এসব রোগীদের মধ্যে চিকিৎসাসেবার আওতায় রয়েছে মাত্র ২ লাখ মানুষ। বাকি ১৮ লাখ রোগীই চিকিৎসার বাইরে। শতকরা বিবেচনায় দেশে গ্লুকোমা আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসা না নেওয়ায় প্রায় ৯০ শতাংশ রোগীই অন্ধত্বের ঝুঁকিতে আছে।
সভায় বিশেষজ্ঞরা জানান, মানুষের শরীরে যেমন ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ থাকে, তেমনি চোখেরও প্রেসার আছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের ব্লাড প্রেসার থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি; তেমনি সাধারণত চোখের ভেতরের প্রেসার ১০ থেকে ২১ মিলিমিটার অব মার্কারি। এই প্রেসার যখন ২১ মিলিমিটারের উপরে চলে যায়, তখন চোখের ভেতরে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত চাপ যখন চোখের ভেতরের অপটিক নার্ভে চাপ দেয় তখন তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। এর ফলে চোখে কম দেখা শুরু হয় এবং প্রেসারের কারণে অপটিক নার্ভ যত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তত ধীরে ধীরে অন্ধত্বের দিকে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এই সমস্যাটিই হচ্ছে গ্লুকোমা।
এদিন সকাল ১০টায় গ্লকোমা সোসাইটির কার্যালয় ধানমন্ডির হারুন আই ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ফ্রি স্ক্রিনিং ক্যাম্প ও বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়। র্যালির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শাহাবউদ্দিন। একইসঙ্গে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিনামূল্যে চক্ষু রোগী দেখা হয়। পরে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচনা সভা ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এসময় গ্লুকোমা সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা শহীদ, হারুন আই ফাউন্ডেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. শেখ এম এ মান্নাফ গ্লুকোমা রোগের সচেতনতামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। হারুন আই ফাউন্ডেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডা. জুয়েলা নাসরিন অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য দেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন গ্লুকোমা সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা শহীদ। তিনি গ্লুকোমা রোগ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণমাধ্যমকে অগ্রনী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। গ্লুকোমা প্রতিরোধে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা কামনা করেন।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির মহাসচিব ডা. মো. জিননুরাইন (নিউটন) গ্লুকোমার ভয়াবহতা ও চিকিৎসা সম্পর্কে বক্তব্য প্রদান করেন।
আলোচনা সভায় অধ্যাপক এম নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. মো. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ডা. মো. আরিফ মিয়া, ডা. এম জিয়াউল করিম ও অধ্যাপক ডা. হাসান শহীদ গ্লুকোমা রোগের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
সভায় গ্লুকোমা সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. সিদ্দিকুর রহমান গ্লুকোমা সোসাইটির কার্যক্রম তুলে ধরেন। এসময় তিনি জানান গ্লুকোমা সপ্তাহ উপলক্ষে দেশের সরকারি-বেসরকারি ৭০টি প্রতিষ্ঠানে সভা-সিম্পোজিয়ামসহ প্রচারণা চালানো হয়েছে। এছাড়া তিনি রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেন।
এসএইচ/এফএ