শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ঢাকা

তীব্র শীতে নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে শিশুরা

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

তীব্র শীতে নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে শিশুরা

কনকনে শীতে কাঁপছে সারাদেশ। অনেক জেলায় সূর্যের দেখাও মেলে না। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে সারাদেশের মতো নাকাল রাজধানী ঢাকাও। শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ শীতকালীন রোগ। সব বয়সী মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হলেও বয়স্ক ও শিশুদের আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি। বিশেষ শিশুরা নিউমোনিয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। শীতকালে এর সর্বোচ্চ সংক্রমণ দেখা যায়।

পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান সংক্রামক কারণ নিউমোনিয়া। এ রোগে বিশ্বে প্রতি বছর ৭ লাখ শিশু মারা যায়, যা পাঁচ বছরের কমবয়সী মোট শিশু মৃত্যুর শতকরা ১৪ শতাংশ। অপরদিকে নিউমোনিয়া নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের তথ্য মতে, রোগটিতে বাংলাদেশে প্রতি ঘণ্টায় আনুমানিক ২-৩টি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়। বছরে সংখ্যাটি প্রায় ২৪ হাজার। এটি পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের ২৪ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

তিন কারণে কনকনে শীত
তাপমাত্রা কমে আরও বাড়তে পারে শীত
জেঁকে বসেছে শীত: ফুটপাতে শীতের কাপড় কিনতে ক্রেতাদের ভিড়
আরও ২ দিন স্থায়ী হবে উত্তরের শীত, পড়বে অতি ঘন কুয়াশা

নিউমোনিয়ার জীবাণু মানুষের ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ও যক্ষ্মার জীবাণুর মাধ্যমে নিউমোনিয়া ছড়ায়।

দেশে শীতকালে সবচেয়ে বেশি শিশুকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগ থেকে নিউমোনিয়া দেখা দেয়। সামান্য অসতর্কতা ও ঠান্ডাও শিশুকে মারাত্মক নিউমোনিয়ার কারণ হতে পরে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) ভর্তি চার মাস বয়সী শিশু লাবিব। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিশুটি ১৫ দিনের বেশি দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছে। তার অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। শিশুটি ব্রেন স্ট্রোক করেছে বলেও জানিয়েছে পরিবার।


বিজ্ঞাপন


শিশুটির চাচা আলাউদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, বাবু ও বাবুর মা চট্টগ্রাম বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানেই বাচ্চার ঠান্ডা লাগে ও জ্বর আসে। তখন স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ঢাকায় রেফার করে। নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (এনআইসিইউ) প্রয়োজন হওয়ায় তাকে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুইদিন চিকিৎসা গ্রহণের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের এনআইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই ভর্তি রয়েছে।

শিশুটির শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবস্থা তেমন ভালো না। চিকিৎসকরা লাইফ সাপোর্ট দেওয়ার কথা বলেছিল। তার পালস ও প্রেশার পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে অবস্থা স্থিতিশীল থাকায় লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়নি।

এমন অবস্থায় নবজাতকসহ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা করতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, নিউমোনিয়া হয়ে গেলে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসহ শিশুর মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। শিশুরা নিজেদের খেয়াল রাখতে পারে না। ফলে তাদের বাবা-মা ও নিকট আত্মীয়দের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে শীতকালে সামান্য অসতর্কতা ও ঠান্ডা হতে পারে তীব্র নিউমোনিয়া ও মৃত্যুর কারণ।

আরও পড়ুন

ঠান্ডা লেগে নয়, শীতে টানা কাশি হতে পারে এসব রোগের লক্ষণ
শীতে ঘর গরম রাখার উপায়

আসছে শীত, ফুসফুস ভালো রাখতে করণীয়

তবে শিশুদের ঠান্ডা থেকে রক্ষা করাটাও অত্যন্ত কঠিন বিষয়। বিশেষত তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের। তিন বছর বয়সী আফিফা বাবা-মা ও দাদির সাথে থাকে। বাবা-মা দুজনই চাকরিজীবী হওয়ায় দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে দাদির সাথে। শীতে শিশুটিকে সামাল দিতে হিমশিম খাওয়া কথা জানিয়ে তার দাদি নার্গিস আক্তার ঢাকা মেইলকে বলেন, শীতের আগে থেকেই আফিফা সর্দি-কাশিতে ভুগছে। এ কারণে তাকে সাবধানে রাখার চেষ্টা করি। তার যেন ফের ঠান্ডা না লাগে সে জন্য শীতের কাপড় ও জুতা-মোজা পরানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তাকে রুমের ভেতর জুতা-মোজা পরানো খুবই কঠিন। গত কয়েকদিন তীব্র শীত, ফ্লোরে পা-ই রাখা যায় না। কিন্তু সে জুতা পরবে না। আমরা পরছি দেখিয়ে বললে অল্প কিছুক্ষণের জন্য পরবে। এরপর খালি পায়েই সারা ঘরজুড়ে ঘুরবে। এমনকি শীতের কাপড়ও পরতে চায় না।

দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার তাগিদ

জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, শীত ও ঋতু পরিবর্তনের সময় রোগ-ব্যাধির সংক্রমণ বেড়ে যায়। এ অবস্থায় সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ফ্লু সংক্রমণ ঘটে। এমনকি তা জটিল অবস্থায় নিউমোনিয়া পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের। তাই এই দুই শ্রেণির মানুষকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘুরাফেরা করা যাবে না। বাইরের ভাজা-পোড়া, শরবত, আইসক্রিম ও ঠান্ডা জাতীয় খাবারের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। শিশুদের যেন ঠান্ডা না লাগে সে বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। ঠান্ডা বা কাশি হলে গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশু ও বয়স্ক মানুষদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তাদের মাঝে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেশি। এসব শিশুর মৃত্যুর একটা বড় অংশ হয় নিউমোনিয়ার কারণে। নানা কারণে নিউমোনিয়া হয়। এটি ভাইরাস ও ব্যকটেরিয়া ঘটিত হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী কিছু নিউমোনিয়া রয়েছে যেখানে মৃত্যু রোধ করা যায় না। কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে হওয়া নিউমোনিয়ার মতো কিছু নিউমোনিয়া প্রতিরোধ সম্ভব।

প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, টিকার মাধ্যমে টিউমোনিয়া প্রতিরোধ করার সুযোগ রয়েছে। আর ব্যাকটেরিয়াল ও ভাইরাল সংক্রমণও কিছু স্বাস্থ্য সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। শিশুকে স্পর্শ করার আগে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া উচিত। এতে শিশুর সংক্রমণ ঝুঁকি হ্রাস পায়। এটি যদি নবজাতকের মা, নিকট আত্মীয়রা অনুসরণ করে, বাচ্চাকে ধরার আগে যদি হাত ধুয়ে নেয় তাহলে কিছুটা প্রতিরোধ হয়ে যাবে। মাস্ক ব্যবহারের মাধ্যমেও শিশু ও বয়স্করা কিছুটা সুরক্ষা পেতে পারে।

এমএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর