বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

৬ মাস পর ছন্দ ফিরছে স্কুল ব্যাংকিংয়ে

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
ডিসেম্বরে আমানত বেড়েছে ৩০ কোটিরও বেশি। ছবি: সংগৃহীত
  • আমানত বেড়েছে ৩০ কোটি টাকারও বেশি
  • হিসাব সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩৮ হাজার
  • শিক্ষার্থীদের আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করার পরামর্শ

দেশে দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এর বড় প্রভাব পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারগুলোর ওপর। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের শিক্ষা ব্যয়ও বাড়ছে প্রতি মাসে। এতে এর প্রভাব পড়েছে স্কুল শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়েও। গেল অর্থবছরের শেষের দিকে অর্থাৎ জুন মাসে কিছুটা প্রবৃদ্ধি থাকলেও নতুন অর্থবছরের শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়। তবে গত ডিসেম্বরে এসে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ওই মাসে প্রায় সব সূচকেই ইতিবাচক প্রবাহ দেখা গেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে এই খাতের আমানত বেড়েছে ৩০ কোটিরও বেশি। আর হিসাব সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩৮ হাজার। যেখানে এক মাস আগেও প্রায় ৪৬ কোটি টাকা সঞ্চয় কমেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।


বিজ্ঞাপন


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে স্কুল শিক্ষার্থীদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭১ কোটি টাকা। যা তার আগের মাস নভেম্বরে ছিল দুই হাজার ৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসে আমানত ৩০ কোটি টাকা। তবে এর আগের বছর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে আমানতের স্থিতি ছিল দুই হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে আমানতের স্থিতি কমেছে কমেছে প্রায় ১০৮ কোটি টাকা। তবে গত নভেম্বর মাসে এক বছরের ব্যবধানে ফারাক ছিল ১৫৮ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে ফারাক কিছুটা কমেছে। এছাড়াও চলতি অর্থবছরের শুরুতে তথা জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানতের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা আগস্টে কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৭২ কোটি, সেপ্টেম্বরে দুই হাজার ১৩৫ কোটি টাকা, অক্টোবরে কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে আমানত কমলেও ডিসেম্বর মাসে কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে।

আরও পড়ুন

এজেন্ট ব্যাংকিং এখন আরও জনপ্রিয়

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সাধারণত যেকোনো শ্রেণির হিসাবে আমানত অল্প হলেও বাড়তে থাকে। কারণ কেউ যদি নতুন করে টাকা জমা নাও দেয় তবুও আগের জমাকৃত আমানতের সুদ যোগ হয়ে মোট অঙ্ক বাড়তে থাকে। আর যদি গ্রাহকরা তার মুনাফার টাকা উত্তোলন করে ফেলে তাহলে হিসাব অপরিবর্তিত থাকে। তা ছাড়া নতুন বাড়তে থাকা হিসাবের আমানত যোগ হয়। গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে আমানত কমে যাওয়ার অর্থ হলো নতুন করে যেসব হিসাব খোলা হয়েছে কিংবা আগের হিসাবে যে পরিমাণ টাকা জমা হয়েছে তার চেয়ে বেশি অঙ্কের টাকা উত্তোলন হচ্ছিল। অর্থাৎ আর্থিক চাপের কারণে শিক্ষার্থীরাও তাদের সঞ্চয় ভেঙে ফেলছে। তবে ডিসেম্বরে কিছু নতুন হিসাব খোলা হয়েছে এবং যুক্ত হয়েছে কিছু নতুন আমানত।

তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের গত ডিসেম্বর মাসের ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ১৫৯টি। আর তার আগের মাস নভেম্বরে হিসাব সংখ্যা ছিল ৪৩ লাখ ৪২ হাজার ২৫৯টি। সে হিসেবে এক মাসে হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৩৭ হাজার ৯০০টি। গত নভেম্বরেও আগের মাসের তুলনায় ২২ হাজার হিসাব কমেছিল। এর মধ্যে সর্বশেষ ছেলেদের হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ লাখ ৩২ হাজার ৬৭২টি আর মেয়েদের হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৮৭টি। তার আগের মাস নভেম্বরে ছেলেদের হিসাব সংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৫ হাজার ৯৮৪টি আর মেয়েদের হিসাব সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৫টি। সে হিসেবে ডিসেম্বরে ছেলেদের হিসাব বেড়েছে  ২৬ হাজার ৬৮৮ ও মেয়েদের হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ১১ হাজার ২১২টি।

Bank3

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, সাধারণত বছরের শুরুতে কিংবা শেষের দিকে অনেকের টাকা উত্তোলনের চাপ থাকে। অনেকে নভেম্বর-ডিসেম্বর সময়ে বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বেড়াতে যান। আবার অনেকে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধ করতে গিয়ে আমানত ভাঙেন। কিন্তু বছরের পুরো সময়জুড়ে শিক্ষার্থীদের আমানত কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে নিয়মিত খরচ মেটাতে হিমশিম অবস্থার মধ্যেই আমানত উত্তোলন করতে হচ্ছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি ও ঊর্ধ্ব মূল্যস্ফীতি এমনটাই ইঙ্গিত করছে। এত কিছুর পরও ডিসেম্বরে যে উন্নতি হয়েছে তা বড় ইতিবাচক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে আমাদের ব্যাংক খাতের ওপর একধরনের আস্থাহীনতা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যদিও সেটা ধীরে ধীরে কেটে উঠছে। এর একটা প্রভাব স্কুল ব্যাংকিংয়েও পড়েছিল। এখন ব্যাংকগুলোকে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’

আরও পড়ুন

ইচ্ছাকৃত খেলাপি নির্ধারণে গুরুত্ব দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো

শিক্ষার্থীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনা ও তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। এই কার্যক্রমের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে টাকা জমানোর অভ্যাস তৈরি করা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তাদের আরও উপযোগী করে তোলা। ২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। প্রথম বছরে ২৯ হাজার ৮০টি স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয়। এর পরের বছর ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ব্যাংকগুলোতে এক লাখ ৩২ হাজার ৫৩৭টি হিসাব খোলা হয়। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব ও আমানতের পরিমাণ কিছুটা কমে আসছে। এরপর থেকেই স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় মুনাফার নানা স্কিম চালু করে।

এ পর্যন্ত ৫৯টি ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করেছে। ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এই অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন- সব ধরনের ফিস ও চার্জের ক্ষেত্রে রেয়াত পাওয়া, বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া, ন্যূনতম স্থিতির বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে ছাড় ও স্বল্প খরচে ডেবিট কার্ড পাওয়ার সুযোগ। মাত্র ১০০ টাকা আমানত রেখেই এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।

টিএই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর