রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে রোয়াংছড়িতে নিহতের স্বজনদের শঙ্কা

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি খামতাং পাড়ায় ৬ এপ্রিল দুই সশস্ত্র গ্রুপের গোলা গুলিতে নিহত ৮ জনের মধ্যে জেইহিম বম একজন। স্বামীকে হারিয়ে পাড়ার অন্যদের মতো জীবন বাঁচাতে ৪ মেয়ে নিয়ে  তিনিও আশ্রয় নিয়েছেন রোয়াংছড়ি সরকারি আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

কান্নার শব্দ শুনে আশ্রয় নেওয়া স্কুল রুমে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের কয়েকটি বেঞ্চ জড় করে তার উপর বসে আছেন তিনি। কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করাতে আরও বেশি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার মতো আশ্রয় নেওয়া পাশের ব্যক্তি বলেন, তিনি বাংলা বলতে পারেন না। তবুও তাকে বম ভাষায় বলার জন্য অনুরোধ করা হলে তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে আর্তনাদ ও হতাশার কথা জানান।


বিজ্ঞাপন


বলছিলাম খামতাং পাড়ায় গোলাগুলিতে নিহত পাইংক্ষ্যং পাড়ার জেইহিম বমের স্ত্রী সাংখুম বমের কথা। রোববার (৯ এপ্রিল) বিকেলে রোয়াংছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া অবস্থায় তিনি বলেন, তার ৪ মেয়ে ও স্বামী-স্ত্রীসহ ৬ সদস্যের সংসার ছিল। বড় মেয়ে ভানএংজির বম বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে, দ্বিতীয় মেয়ে বাঙ্গাল হালিয়া সেভেনডে অ্যাডভেন্টিস স্কুলে নবম শ্রেণিতে,  তৃতীয় মেয়ে জিং চেও সাং বম রুমা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে, সবচেয়ে ছোট মেয়ে জিংদত লম বম মাত্র পাঁচ বছরের এখনও স্কুলে যায় না। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি ছিলেন তার স্বামী নিহত জেইহিম বম। পেশা হিসেবে জুম চাষের পাশাপাশি কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতেন নিহত জেইহিম বম।

তিনি আরও বলেন, ৬ এপ্রিল নিজ পাড়া হতে প্রায় ৭ কি:মি: দূরে  জুরভারং পাড়ায় গিয়েছিলেন ঘর নির্মাণের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে। ৭ এপ্রিল শুনি সন্ত্রাসীর গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন। সন্ত্রাসীরা স্বামীকে সন্ত্রাসী ভেবে মেরে ফেলেছে। আমার স্বামী নির্দোষ, আমার স্বামী হত্যার বিচার আপনারা করে দেন, আমি এখন একা, স্বামী ছাড়া কি করব? কোথায় যাব? আমার এই চার মেয়েকে কিভাবে মানুষ করব। চার মেয়ে নিয়ে কিভাবে বাঁচব,তাদেরকে কিভাবে ভরনপোষণ করব, লেখাপড়ার ব্যবস্থাই বা কি হবে? বম ভাষায় কান্না ও আর্তনাদ করতে করতে একথাগুলো বলছিলেন তিনি।

Death

নিহত জেইহিম বমের বড় মেয়ে ভান এং জির বম বলেন, বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন তিনি। কলেজের হোস্টেলে মাসিক আড়াই হাজার টাকার বিনিময়ে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তার বাবা প্রতি মাসে শ্রমিকের কাজ করে তার লেখাপড়ার জন্য খরচ পাঠাতেন। তার বাবার মৃত্যুতে লেখাপড়া কিভাবে চলবে, এই দুঃশ্চিন্তায় ঘুম আসে না। আর এই দিকে পরিস্থিতির কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে স্কুলে আশ্রয় নিতে হয়েছে। এখন তাদের পরিবার উভয় সংকটে রয়েছে বলে জানান তিনি।


বিজ্ঞাপন


রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা ১০ এপ্রিল সন্ধ্যায় বলেন, নতুন করে আর কোনো পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আসেনি। ৮ ও ৯ এপ্রিল যারা ছিল তারাই আছে। আশ্রয় গ্রহীতাদের সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে খাবারসহ যাবতীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, খামতাংপাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ আটজনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ভয়ে আশপাশের কয়েকটি পাড়া থেকে রুমা ও রোয়াংছড়ি সদর এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মধ্যে রুমাতে ৬৫ জন, রোয়াংছড়ি সরকারি আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বম সম্প্রদায়ের ৩১ পরিবারের ১০৮ জন, রোয়াংছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে খেয়াং সম্প্রদায়ের ৪৯ পরিবারের ১৯২ জন মিলে মোট ৩৬৫ জন এখনও আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। তবে পাইক্ষ্যং পাড়ার বম সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবার তাদের আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন আজ।

তাদেরকে সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যৌথভাবে খাবার, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন