রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

চুয়াডাঙ্গায় ১০ম শ্রেণির ছাত্রের সঙ্গে ৫ম শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ে

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২২, ০৩:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
প্রতীকী ছবি

পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে নিজের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলের সঙ্গে বিয়ে করিয়ে দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শামসুন্নাহার। এ নিয়ে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। একজন শিক্ষিকার এহেন দায়িত্ব জ্ঞানহীন কাণ্ডে হতবাক হয়েছে সুশীল সমাজ। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকতাদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।

জানা যায়, গত ২০ মার্চ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের ছোটশলুয়া গ্রামের বিলপাড়ার দিনমজুর অসোক আলীর মেয়ে শারমীন খাতুনকে (১১) বেগমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা শামসুন্নাহার তার ছেলে যদুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আব্দুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে দেন। শারমীন বেগমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। 


বিজ্ঞাপন


বিয়ের বিষয়টি প্রথম কয়েকদিন গোপন ছিল। তবে নব্যবিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে আব্দুর রহমান শশুর বাড়ি ছোটশলুয়া গ্রামে বেড়াতে আসলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।

খবর পেয়ে সরেজমিনে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বেগমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে হাতে মেহেদী রং নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে দেখা যায় বাল্যবিবাহের শিকার স্কুলছাত্রী শারমীন খাতুনকে। বিয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে অপকটে স্বীকারে বলে, ‘গত এক সপ্তাহ আগে ম্যাডামের ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে সে (স্বামী) আমাদের বাড়িতে আছে। আমি বাড়ি থেকে এসে স্কুলে ক্লাস করছি।’

ওই ক্লাসেই শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে তখন ক্লাস নিচ্ছিলেন শিক্ষিকা শামসুন্নাহার। বিয়ে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার মায়ের খুব শরীর খারাপ। মায়ের ইচ্ছা নাত-বউ দেখবে। মূলত, মায়ের ইচ্ছা পূরণ করার জন্যই নিজের ছেলের সঙ্গে ওই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়নি। বেগমপুর দাখিল মাদরাসার শিক্ষক ও বেগমপুর ইউনিয়নের কাজি মফিজুল ইসলাম ধর্মীয়রীতি মেনে বিয়ে পড়িয়েছেন।’


বিজ্ঞাপন


ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদের কাছে জানতে এ সম্পর্কে চাইলে তিনি ‘বিয়ের বিষয়টি জানেন না’ বলে এ প্রতিবেদককে জানান। ‘তবে একজন স্কুল শিক্ষিকার কাছে এধরনের কর্মকাণ্ড কাম্য নয়’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  

জানতে চাইলে বেগমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘বেগমপুর ইউনিয়নকে বাল্য বিবাহমুক্ত করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ বদ্ধপরিকর। একজন স্কুল শিক্ষিকা কীভাবে এই ধরনের কাজ করতে পারে আমার বুঝে আসে না।’

কাজি মফিজুল ইসলামের কাছে এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো বিয়ে আমি পড়াইনি। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামীম ভুইয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘটনার সত্যতা পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন