বাগেরহাটে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ৬০০ বছরের অধিক সময় ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী খানজাহান আলীর (রহ.) মাজারের মেলা আজ রোববার (১৩ এপ্রিল) শেষ হচ্ছে। এর আগে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথি অনুযায়ী শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ফজরের নামাজের পর থেকে মেলা শুরু হয়।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার সকাল থেকেই মেলায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার নারী পুরুষ ভক্ত আশেকান মাজারে জড়ো হয়েছিল।
৬০০ বছরের অধিক সময় ধরে চলে আসা খানজাহানের (র.) মাজারে এই বাৎসরিক মেলায় যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে জেলা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করছেন মেলা এলাকায়। পাঁচ শতাধিক মৌসুমি ব্যবসায়ী বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
মেলা প্রাঙ্গণে জড়ো হওয়া ভক্তরা তিন দিন মাজার এলাকায় অবস্থান করে নিজের মনোবাসনা পূরণের আশায় স্রষ্টার আরাধনায় মগ্ন থাকবেন তারা। এই তিন দিন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে লালন, মুর্শিদি, ভাটিয়ালী ও বিভিন্ন আধ্যাত্মিক গান পরিবেশন করবেন ভক্তরা। রাতভর লোকে-লোকারণ্য ছিল মাজার প্রাঙ্গণ। এছাড়া সারাদিন হাজার হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থী রোগ ও পাপ মুক্তির আশায় মাজার সংলগ্ন দীঘিতে গোসল করে থাকেন। আগত ভক্তদের বিশ্বাস এখানে এসে দোয়া করলে যেকোনো সমস্যার সমাধান মেলে।
বিজ্ঞাপন
যশোর থেকে আসা নার্গিস নামে এক ভক্ত বলেন, অনেক বছর ধরে মাজার মেলায় আসি। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত ভাই বোনদের সঙ্গে দেখা হয়। এই মেলায় আসতে পারলেই মনটা ভরে যায়। খানজাহানের এ দীঘিতে গোসল করলেই অজানা তৃপ্তিতে শান্তি পাই।
গোপালগঞ্জ থেকে মেলায় আসা নিগার সুলতানা নামের আরেক ভক্ত বলেন, শুক্রবার ভোরে এসেছি। রবিবার রাতে যাব। এখানে ভাই-বোনদের সঙ্গে গান করব। মনের আশা পূরণে সবাই মিলে প্রার্থনা করব। আশা করি, চাওয়া পূরণ হবে।
রোববার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই মেলা শেষ হলেও, অনানুষ্ঠানিকভাবে মেলা থাকবে আরও এক সপ্তাহ পর্যন্ত। এই সময়ে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা যেমন আসবেন ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য বিক্রয় করবেন।
হজরত খাজা খানজাহান আলীর (রহ.) মাজারে প্রধান খাদেম ও ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফকির তরিকুল ইসলাম জানান, চৌদ্দশ খ্রিষ্টাব্দে হজরত খাজা খানজাহান আলী (রহ.) পুণ্যভূমি বাগেরহাটে আসেন। তার পর থেকেই চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দেশবিদেশের হাজারও ভক্তের সমাগম ঘটে মাজারে। তারা এখানে এসে মাজার জিয়ারত ও দীঘিতে গোসল করেন। তারা তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য আল্লার দরবারে কান্নাকাটি করেন।
তিনি আরও বলেন, এটি দক্ষিণবঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় মেলা। মেলায় দেশের দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে ব্যবসা পরিচালনাও করেন এ মেলায়।
প্রতিনিধি/এসএস