বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

প্রকৌশলীর গাফিলতিতে আটকে ৫ সড়কের নির্মাণকাজ, চুরি হচ্ছে উপকরণ

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:২৬ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে প্রকৌশলীর গাফিলতিতে পাঁচটি সড়কের কাজ প্রায় ১ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। এতে বিভিন্ন সময়ে কাজের উপকরণগুলো চুরি হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় ভোগান্তি বাড়ছে সাধারণ মানুষের। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোমস্তাপুর উপজেলার ৫টি ছোট সড়কের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৫ টাকা। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর-এলজিইডির এস্টিমেট বা প্রাক্কলিত ব্যয় সেসব রাস্তায় থাকা ইটের দাম নির্ধারণ করা হয় ২৩ লাখ টাকা। অথচ তা হবে ১১ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই ৫ সড়কের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে কাজের প্রাথমিক বিল নিতে গিয়ে এমন ভুল দেখতে পেলে তারা কাজ বন্ধ করে দেয়। 


বিজ্ঞাপন


গোমস্তাপুর উপজেলা এলজিইডি চকপুস্তম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রবেশের ৫০ মিটার, কাঞ্চনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রবেশের ১১৭ মিটার, আালমপুরে ১৮০ মিটার, দোসীমনি গুচ্ছগ্রামের ১৩৬ মিটার ও সাহেবগ্রামের ১৭২ মিটার সড়কে একসাথে এস্টিমেট বা প্রাক্কলিত ব্যয় করে। এতে পুরাতন ইট উঠিয়ে তাতে পিচ ঢালায় রাস্তা করার কথা রয়েছে। আর এলজিইডি এসব পুরাতন ইটের মূল্যমান নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ লাখ টাকা। যা প্রকৃত দামের দ্বিগুন বলে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। 

chapai

চকপুস্তুম এলাকার বাসিন্দা সালাম আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের ইটের রাস্তা ছিল, সেটাই ভালো ছিল। খামাখা পিসের ঢালায় রাস্তা করতে গিয়ে আগের রাস্তা ভেঙে ফেলেছে। এক বছর ধরে এভাবে ইট উঠিয়ে রাস্তায় বালু ফেলে রেখেছে। কাজ শুরু করার পর এক বছর ধরে এভাবে কাজ ফেলে চলে গেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কেন কীভাবে এমন অবস্থায় রাস্তার চলমান কাজ ফেলে গেল, তা আমরা জানি না। তাই বেশ কিছু ইটসহ উপকরণ নিয়ে গেছে স্থানীয়রা।

স্কুলশিক্ষক মাহবুব আহমেদ জানান, স্কুলের শিক্ষার্থীদের এমন বালুর ওপর দিয়ে যেতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। বছর ধরে এমন পড়ে থাকা রাস্তার কাজ দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। তা না হলে সামনে বর্ষা মৌসুমে বড় ধরনের বিপদে পড়বে স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও শিক্ষার্থীরা। 


বিজ্ঞাপন


গৃহবধূ সোনিয়া বেগম বলেন, প্রায় বছরখানেক আগে রাস্তার কাজ শুরু হয়। সেসময় আগের ইটগুলো তুলে নেওয়া হয়। পরে তাতে বালু ভরাট করা হয়। রাস্তার দুই দিকে ফেলে রাখা হয় ইট খোয়া বালু। এরপর হঠাৎ করেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে কাজ বন্ধের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলে স্থানীয়রা এসব মালামাল নিজেদের কাজে ব্যবহার করার জন্য নিয়ে চলে যায়। 

chapai

এই কাজের ঠিকাদার মেসবাহুল সাকের জঙ্গি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা সকল নিয়ম মেনেই কাজ শুরু করেছিলাম। এরপর প্রাথমিক বিল নিতে গেলে জানতে পারি, এলজিইডির ক্যালকুলেশনের ভুলে ১১ লাখ টাকার পরিবর্তে ২৩ লাখ টাকা টাকা হয়েছে। যা ১২ লাখ টাকায় বেশি। পরে এনিয়ে সঠিক এস্টিমেট বা প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করার আবেদন করলেও তা সংশোধন না করায় কাজ শুরু করতে পারিনি। 

তিনি আরও বলেন, একটি দায়িত্বশীল অফিসে থেকেও উপজেলা এলজিইডি'র এমন ভুল কাজের খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদেরসহ স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের। এমনকি জেলা এলজিইডি অফিসের তদারকির পর তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়। ভুল পাওয়ার পর একাধিকবার তাদের বলার পরেও কোনো সুরাহা হয়নি। অন্যদিকে এক বছরে মালামালের দাম অনেক বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তবুও আমরা কাজ শুরু করতে চাই। 

নিজেদের দায় স্বীকার করলেও এবিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি গোমস্তাপুর উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী নূরুল আফসার মোহাম্মদ সুলতানুল ইমাম। তিনি জানান, উপজেলা এলজিইডির এস্টিমেট বা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ভুলের কারণেই এই পাঁচটি রাস্তার কাজ আটকে আছে। আমরা সংশোধন করে তা আবারও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর-এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোজাহার আলী ঢাকা মেইলকে জানান, কাজ শুরুর পর আমাদের অফিসের ভুলের বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। পরে তা সংশোধনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে। সংশোধিত এস্টিমেটের অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

প্রতিনিধি/এইউ 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub