পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় আলহাজ্ব জামাত আলী নামের ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামিকে কবরস্থানে আটকে রেখে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। এ সময় ভুক্তভোগীর স্ত্রী ও কন্যাকে শারীরিক লাঞ্ছিত করারও অভিযোগ উঠেছে।
এবিষয়ে প্রতিকার চেয়ে মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী আসমা খাতুন। এর আগে রোববার (৬ নভেম্বর) মধ্যরাতে পারভাঙ্গুড়া কবরস্থানে এই ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
অভিযুক্তরা হলেন— পুলিশ কর্মকর্তা ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক এএসআই জাহিদ হাসান ও পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম। ভুক্তভোগী জামাত আলী পৌরশহরের সরদারপাড়া মহল্লার বাসিন্দা।
অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, জমিসংক্রান্ত রাষ্ট্রপক্ষের এক মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ছিলেন জামাত আলী। এর জেরে রাত পৌনে ১১টার দিকে জামাত আলীর বাড়িতে যান এএসআই জাহিদ ও কাউন্সিলর জহুরুল। এসময় আসামিকে নিয়ে তারা নির্জন স্থানে যেতে চান। এসময় আসামির স্ত্রী ও কন্যা বাধা দিলে তাদের লাঞ্ছিত করা হয়। পরে জামাত আলীর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যান তারা। তাকে উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পারভাঙ্গুড়া কবরস্থানের সামনে নির্জন স্থানে আটকে রেখে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়। অবশেষে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার কথা স্বীকার করলে কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম জামাত আলীর বাড়ি গিয়ে নগদ ৬০ হাজার ও ৯০ হাজার টাকার একটি চেক নিয়ে আসে। এরপর রাত ১টার দিকে জামাত আলীকে বাড়ি পৌঁছে দেয় ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও কাউন্সিলর। পরের দিন পৌরসহরের শরৎনগর বাজারের অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে ওই চেকের টাকা উত্তোলন করে নেয় তুহিন নামে এক ব্যক্তি।
ভুক্তভোগী জামাত আলী পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার মেয়ে রিয়া আক্তার মিম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার বাবা ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি কিনা তা জানা নেই। মধ্যরাতে কাউন্সিলর জহুরুল ও পুলিশ অফিসার জাহিদ কোনো কাগজপত্র না দেখিয়ে বাবাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। এসময় বাধা দিলে আমার হাতে হ্যান্ডকাফ পড়ায়। এ সময় আমার সঙ্গে ও মায়ের সঙ্গে নোংরা আচরণ করে। আমার ও মায়ের গায়েও হাত দেয় পুলিশ কর্মকর্তা। আমার বাবা মূর্খ হওয়ায় বাড়ির ফোন নম্বর বলতে পারেনি। পরে কাউন্সিলর জহুরুল বাড়িতে এসে ফোন ধরিয়ে দিয়ে দেড় লাখ টাকা দিতে বলে। টাকা দেওয়ার পরে বাবাকে তারা বাড়িতে রেখে যায়।’
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে সহকারী উপ-পরিদর্শক এসআই জাহিদ হাসান বলেন, ‘জামাত আলী হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত। তাই ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়ায় তাকে আটক না করে জামিন নেওয়ার জন্য সময় দিতে একটু দূরে নিয়ে কথা বলা হয়েছে মাত্র। টাকা পয়সা নেওয়া ও স্ত্রী কন্যাকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
বিজ্ঞাপন
এ বিষয় জানতে কাউন্সিলর জহুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। একজন ব্যক্তির অপকর্মের দায় পুরো বিভাগ নিবে না। তাই ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।’
অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আকবর আলী মুন্সিও। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। বিষয়টি এডিশনাল এসপির থেকে জেনেছি। তদন্তে যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য আমি তাকে পুলিশ লাইনে নিয়ে আসার নির্দেশনা দিয়েছি। আগামীকাল অথবা পরশুর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছি। তদন্তে দোষী প্রামাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
টিবি