রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ইপিজেডে বিনিয়োগে আগ্রহী বিদেশি বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের তিনটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। সোমবার (৭ এপ্রিল) চট্টগ্রামের দু’টি ইপিজেড পরিদর্শন শেষে এই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারী দলের প্রতিনিধিরা।

বিদেশি বিনিয়োগকারী দলের প্রতিনিধিরা সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত কোরিয়ান রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ও দুপুর ২টার দিকে মিরসরাইয়ে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন।


বিজ্ঞাপন


বিনিয়োগকারী দলে চীন, কোরিয়া, সৌদি আরব, জাপানসহ ৪০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বেপজা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, মূলত যারা শিগগিরই শিল্প কারখানা স্থাপনে আগ্রহী তাদের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে বিডা ও বেপজা যৌথভাবে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫ শীর্ষক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

বিডা ও বেপজা কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ৭ থেকে ১০ এপ্রিল ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজন করা বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনে ইতোমধ্যেই ৫০টি দেশ থেকে ২ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি নিবন্ধিত অংশগ্রহণকারী অংশগ্রহণ করেছেন। যার মধ্যে ৫৫০ জনেরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী রয়েছেন। 

শীর্ষ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এটা করতে হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভূদৃশ্য এবং প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা দেওয়া প্রয়োজন।


বিজ্ঞাপন


সেই লক্ষ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে ৭ এপ্রিল পরিদর্শনকারী বিনিয়োগকারী, তাদের উপদেষ্টা এবং পরামর্শদাতাদের একটি দল চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুসন্ধান করে।

আরেকটি দল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (যা জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল নামেও পরিচিত) পরিদর্শন করে। এছাড়াও, চীন, সৌদি আরব, ভারত এবং জাপানের নির্মাণ, শিল্প উন্নয়ন, প্রকৌশল, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং রাসায়নিক ক্ষেত্রে পরিচালিত কয়েক ডজন বিদেশি কোম্পানিও উপস্থিত ছিল।

বিনিয়োগকারীরা ইয়াং ওয়ানের বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখেন। বর্তমান বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শনকালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধা তুলে ধরে স্পেশাল প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়। এরপর তারা পরিদর্শন করেন মিরসরাই শিল্পনগর। যাতে তাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়।

পরিদর্শন শেষে ইপিজেড পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন বিদেশি বিনিয়োগকারী দলের প্রতিনিধিরা। এসময় তারা ইপিজেডে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে জানান বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারো কাওয়াচি।

তিনি বলেন, আমরা এখন বিদেশি কোম্পানিগুলির কাছ থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণের ওপর মনোযোগ দিচ্ছি। যারা তাদের পণ্য রফতানি করবে, কারণ এটি বাংলাদেশকে এফডিআই’র জন্য আরও আকর্ষণীয় গন্তব্য করে তুলবে।

তারো কাওয়াচি আরও বলেন, ২০২৫ সালের বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনের সাফল্যের বিষয়ে আমি আশাবাদী। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও পানি পাওয়া যাচ্ছে এবং গ্যাস সংযোগ স্থাপনের কাজ এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে সম্পন্ন হবে।

বেপজার প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল হকের তথ্য মতে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড ও মিরসরাই এবং ফেনীর সোনাগাজীতে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এনএসইজেড) বেজা কর্তৃক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।

এশিয়ান পেইন্টস, বার্জার, নিপ্পন, ম্যাকডোনাল্ডসহ মোট ১১টি কারখানা ইতোমধ্যে এনএসইজেডে উৎপাদনে রয়েছে। আরও ২৮টি কারখানা নির্মাণাধীন রয়েছে।

Kepz

বেপজা কর্তৃক পরিচালিত এনএসইজেডের ১ হাজার একর উপ-জোনে, বিভিন্ন দেশের ৪১টি কোম্পানি কারখানা স্থাপনের জন্য ইজারা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে ২৪টি চীনা সংস্থা যথাক্রমে ৮৬৭.২২ মিলিয়ন ডলার এবং ৬১৪.৫৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

প্লাগ-অ্যান্ড-প্লে অবস্থাসহ অন্য দুটি শিল্প অঞ্চল বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করবে যারা তাদের বাণিজ্যিক উৎপাদন দ্রুত শুরু করতে চান। উদাহরণস্বরূপ, আনোয়ারায় ২,৫০০ একরের কোরিয়ান ইপিজেড ৪৮টি অত্যাধুনিক উৎপাদন সুবিধায় প্রায় ৩৪,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। যার মধ্যে পোশাক রফতানিকারক জায়ান্ট ইয়ং ওয়ানও রয়েছে।

১ হাজার একরের জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল, যেখানে ইতোমধ্যেই সিঙ্গারের উৎপাদন কারখানা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন ১,০০০ ইউনিট রেফ্রিজারেটর এবং টেলিভিশন তৈরি করে। বহুজাতিক ইলেকট্রনিক্স এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্স কোম্পানিটি ৩৩.৪ একর জমি দখল করে থাকা কারখানায় ৭৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

জাপানের একটি প্রধান ভোগ্যপণ্য কোম্পানি লায়ন কল্লোল লিমিটেড এপ্রিল মাসে উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে। সেখানে নির্মাণাধীন আরও তিনটি কোম্পানি প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানি তাদের কারখানা নির্মাণ শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাসায়নিক, খাদ্য, গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি এবং নির্মাণ সামগ্রীর মতো খাতে বেশ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি রফতানির উদ্দেশ্যে এই অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া ৩০টি কোম্পানি এখনও আলোচনার অধীনে রয়েছে। ইতোমধ্যে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নে অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ।

কেইপিজেডের কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেডের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। প্রথমে দুই দেশের সরকার উদ্যোগ নিলেও কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ইয়াং ওয়ান গ্রুপ শিল্পাঞ্চলটি গড়ে তোলে বেসরকারিভাবে। আড়াই হাজার একরের এ ইপিজেডে বর্তমানে ৮ শতাধিক একর জায়গায় ৪৮টি ভবনে ১৫টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। এই ইপিজেডের ৫২ শতাংশ জমি বনায়ন ও পরিবেশের জন্য নির্ধারিত। ফলে এটিকে বড় পরিবেশবান্ধব ইপিজেড বলা হয়।

একইভাবে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ১১৩৮.৫৫ একর জমিতে দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (পূর্বের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর) গড়ে তোলা হচ্ছে। এই ইপিজেডকেও পরিবেশ বান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানান প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক।

কেআই/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন