শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

নতুন আবহে বর্ষবরণে প্রস্তুত জাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৫ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img
বর্ষবরণে মাতবে গোটা জাতি। ছবি: সংগৃহীত

মুছে যাক সব গ্লানি, সুন্দর সূচনা হোক নতুনের- এই প্রত্যয়ে পুরনো বছর ১৪৩১ বঙ্গাব্দকে বিদায় জানিয়েছে জাতি। রোববার পালিত হয়েছে বাংলা বছরের শেষ দিন ও চৈত্র সংক্রান্তি। এবার প্রস্তুতি ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে বরণের। ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে সব প্রস্তুতি। রাত পোহালেই শুরু হবে বর্ষবরণের নানা অনুষ্ঠান। এবার স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টমুক্ত দেশে নতুন আবহে উদযাপিত হবে বাংলা নববর্ষ। নতুন বাংলাদেশে এজন্য অনেক কিছুতেই এসেছে পরিবর্তনের ছাপ।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মাতবে সারাদেশ। ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। রাজধানী এবং সারাদেশজুড়ে থাকবে বর্ষবরণের নানা আয়োজন।


বিজ্ঞাপন


‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩২’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ নেওয়া হয়েছে। এদিন সরকারি ছুটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রতি বছর ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বের করলেও এবার বের হবে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। এছাড়া এই শোভাযাত্রার আঙ্গিকেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। নতুন বাংলাদেশে বৈচিত্র্য এসেছে পহেলা বৈশাখ উদযাপনেও।

বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে চলছে বর্ষবরণ শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হবে।

আরও পড়ুন

‘পহেলা বৈশাখ ঐক্য ও মহাপুনর্মিলনের দিন, দেশবাসীকে শুভেচ্ছা’

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে জানানো হয়েছে, শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা শুধু নীলক্ষেত ও পলাশী মোড় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।


বিজ্ঞাপন


চলছে শোভাযাত্রার জন্য মোটিফ তৈরির শেষ পর্যায়ের কাজ। এবার শোভাযাত্রায় অংশ নেবে বাঘ, মাছ, পাখি, পালকিসহ সাতটি বড় আকারের মোটিফ। এছাড়া সাতটি মাঝারি এবং সাতটি ছোট আকারের মোটিফও অংশ হবে শোভাযাত্রার। অনুষদে তৈরি মুখোশ বহন করা হবে শোভাযাত্রায়।

এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বহর থাকবে শোভাযাত্রার দুপাশে, সামনে নয়। নববর্ষের দিন বিকেল ৫টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্যাম্পাসে প্রবেশ বন্ধ থাকবে।

New-Year

নববর্ষের সকালে রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে সুরের ধারা। বাঙালি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, খিয়াং, খুমি, সাঁওতাল, বম, লুসাইসহ মোট ২৮টি জাতিগোষ্ঠী অংশ নেবে বর্ষবরণের শোভাযাত্রায়। প্রথমবারের মতো রক মিউজিয়ানদের সংগঠন বামবা এতে অংশ  নেবে। ২০ নারী ফুটবলারসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ থাকবে এতে।

বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে হবে নববর্ষের অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা সাতটায় সেখানে চীনা দূতাবাসের সহযোগিতায় হবে ড্রোন শো।

প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা

এদিকে বাংলা নববর্ষকে জাতির ঐক্য ও মহাপুনর্মিলনের দিন হিসেবে আখ্যায়িত করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

রোববার (১৩ এপ্রিল) এক বার্তায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শুভ নববর্ষ ১৪৩২। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে, আমি দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। এটি বাঙালির ঐক্য এবং মহাপুনর্মিলনের দিন।

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতি নববর্ষকে নবচেতনা এবং নতুন অঙ্গীকারের সঙ্গে গ্রহণ করে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দিনে মানুষ বিগত বছরের দুঃখ, বোঝা এবং হতাশাকে দূরে সরিয়ে রেখে সম্প্রীতি, বন্ধুত্ব, আনন্দ এবং ভালোবাসার চেতনায় একত্রিত হয়।

আরও পড়ুন 

‘ফ্যাসিস্টের মুখায়ভবে’ আগুন দেওয়া যুবক সম্পর্কে যা জানা গেল

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মুঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন শুরু হয়েছিল। কৃষিকাজ সহজতর করার জন্য তিনিই বাংলা বছরকে ‘ফসলি বছর’ হিসেবে গণনা শুরু করেছিলেন। একটি ঐতিহ্য যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত বাঙালির জন্য ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্যের চেতনার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

ড. ইউনূস বলেন, নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর সময়, আসুন আমরা অতীতের দুঃখ, কষ্ট এবং দুর্ভাগ্যকে পেছনে ফেলে নতুন আশা ও উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে যাই। ২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সকল প্রকার বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথ খুলে দিয়েছে। এটি আমাদেরকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, সুখী, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ এবং প্রাণবন্ত একটি বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়।

পহেলা বৈশাখে ডিএমপির নির্দেশনা

পহেলা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রা উপলক্ষে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ- ডিএমপি ।

Boishak

ডিএমপি জানিয়েছে, আগামী সোমবার ১৪ এপ্রিল বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হবে। আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে এ অনুষ্ঠান উদযাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম আকর্ষণ আনন্দ শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়ে ইউটার্ন-টিএসসি মোড়-শিববাড়ী ক্রসিং-রোমানা ক্রসিং-দোয়েল চত্ত্বর-টিএসসি মোড় হয়ে পুনরায়  চারুকলা বিভাগে গিয়ে শেষ হবে এ আনন্দ শোভাযাত্রা।

আরও পড়ুন

পহেলা বৈশাখ ঘিরে নাগালের বাইরে ইলিশের দাম

আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক নগরবাসীকে নিম্নবর্ণিত রুট অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো-

১। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল থেকে শাহবাগ মোড় হয়ে ডানে গিয়ে কাঁটাবন ক্রসিং হয়ে নীলক্ষেত মোড় দিয়ে ভিসি বাংলো মোড়ে যোগ দিতে পারবেন।

২। নিউমার্কেট দিয়ে আসা লোকজন নীলক্ষেত হয়ে ভিসি বাংলো মোড়ে সংযুক্ত হতে পারবেন।

৩। পলাশী দিয়ে আসা লোকজন পলাশী হয়ে নীলক্ষেত মোড় থেকে ডানে গিয়ে ভিসি বাংলো মোড়ে যোগদান করতে করবেন।

৪। চাঁনখারপুল ও বকশী বাজার হয়ে আসা লোকজন পলাশী মোড় হয়ে নীলক্ষেত থেকে ডানে মোড় নিয়ে ভিসি বাংলো মোড়ে যোগদান করতে পারবেন।

আনন্দঘন পরিবেশে পহেলা বৈশাখের এ সার্বজনীন উৎসব উদযাপনে সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর