পটুয়াখালী উপকূলের নবীন ও প্রবীণ কৃষক উদ্যোক্তারা একত্রিত হয়ে অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষ করছেন তরমুজ। অধিক ফলনের আশায় আগাম তরমুজ চাষে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কৃষকরা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের নিজেদের তেমন কৃষি জমি নেই। তাই তরমুজ চাষাবাদে অভিজ্ঞ ও তরমুজ চাষে আগ্রহী নবীন কৃষক মিলে আগাম তরমুজ চাষে নেমে পড়েছেন। অন্যের জমি লিজ নিয়ে উচ্চ ফলনশীল তরমুজ চাষ করে লাভবান হয়েছেন বিগত বছরগুলোতে।
বিজ্ঞাপন
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের নিজেদের তেমন কৃষি জমি নেই। তাই তরমুজ চাষাবাদে অভিজ্ঞ ও তরমুজ চাষে আগ্রহী নবীন কৃষক মিলে আগাম তরমুজ চাষে নেমে পড়েছেন। অন্যের জমি লিজ নিয়ে উচ্চ ফলনশীল তরমুজ চাষ করে লাভবান হয়েছেন বিগত বছরগুলোতে।
এমন এক কৃষক দলের দেখা মিলেছে কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের গঙ্গামতির ৩৩ কানি নামক এলাকায়। এসব কৃষকদের বাড়ি মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের মম্বিপাড়া গ্রামে। জমিতে অস্থায়ীভাবে তাবু তৈরি করে তাতে অবস্থান নিয়ে কৃষিকাজ করেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাঁচজনের একটি কৃষক টিম প্রায় ১৮ একরের একটি জমিতে উচ্চ ফলনশীল তরমুজের বীজ বপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর আগে ওই জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে। ধান কাটার পরপরই জমি হালচাল দেওয়া হয়ে গেছে। কয়েকজন কৃষি শ্রমিক জমি তৈরি করছেন। কেউ বীজ বপন করছেন। ইতোমধ্যে বীজ থেকে চারা বেরিয়ে দুই থেকে তিন পাতা গজিয়েছে। এরই মধ্যে তারা জমির এককোণে একটি তাবু তৈরি করে নিয়েছেন। পুরো মৌসুমজুড়ে কৃষক এবং কৃষি শ্রমিকরা ওই তাবুতে থেকে চাষাবাদ ও পরিচর্যা করবেন। প্রয়োজনীয় সার এবং বীজ রাখা হয়েছে তাবুতে। সঙ্গে তাদের খাদ্য সামগ্রীও নিয়ে এসেছেন।
বিজ্ঞাপন
নবীন কৃষক সালাউদ্দিন বলেন, চলতি তরমুজ মৌসুমে আমরা ৫ জনের একটি দল প্রায় ১৮ একর জমি লিজ নিয়ে তরমুজের বীজ বপন শেষ করছি। গত কয়েক বছর ধরে এসব এলাকায় অন্যের জমি লিজ নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে তরমুজের চাষ করছিলাম। আমি এ বছরে প্রবীণ কৃষকের সঙ্গে একত্রিত হয়ে তরমুজ চাষে এসেছি। আমাদের সঙ্গে যারা অভিজ্ঞ রয়েছেন তারা গত বছরে তরমুজ চাষাবাদে সফলতা পেয়েছিলেন।
প্রবীণ কৃষক মজিদ ও নিজাম বলেন, চলতি মৌসুমে আমরা ৫ জন মিলে তরমুজ চাষ শুরু করেছি। জমির মালিকদের কাছ থেকে ৫ মাসের জন্য কানি প্রতি ৩০ হাজার টাকা করে লিজ নিয়েছি। জমি তৈরি শুরু করে মৌসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রায় চার মাস সময় লাগে। উৎপাদিত তরমুজ বিভিন্ন ফলের আড়তে পাইকারি বিক্রি করা হয়। চাষাবাদ শুরু থেকে মৌসুমের পুরো সময়টা আমরা ক্ষেতে অবস্থান করব। দলবদ্ধ হয়ে জমিতে কাজ করি। মৌসুম শেষ করে সবকিছু গুটিয়ে চলে যাব।
দলবদ্ধ হয়ে চাষাবাদের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে আমরা দলবদ্ধ হয়ে কৃষিকাজ করে আসছি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করতাম। তবে গত কয়েক বছর থেকে তরমুজের চাষাবাদ করে আসছি। এতে প্রচুর খরচ পড়ে। প্রতি কানি জমিতে ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। একসঙ্গে ১৮ একর জমিতে চাষাবাদ করছি। এতে মোটা অঙ্কের টাকার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এত বড় চাষাবাদ খরচ একজনের পক্ষে বহন করা সম্ভব হয় না। তাই দলবদ্ধ হয়ে চাষাবাদ করি। খরচ সমান ভাগে ভাগ করে নেব। আবার লাভ-লোকসানও সমানভাবে ভাগ করে নেব। বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড তরমুজ চাষ করি আমরা। এক্ষেত্রে খরচ বেশি পড়লেও উৎপাদন ভালো হয়।
তারা আরও বলেন, দলবদ্ধভাবে কৃষিকাজ করায় এখন এলাকার অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। তবে দলবদ্ধ এ চাষাবাদে স্থানীয় কৃষি বিভাগের সঙ্গে তাদের কোনো সমন্বয় নেই। কৃষিবিভাগ থেকে তারা কোনো সহযোগিতাও পাননি বলে জানান।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, এ বছর তরমুজের জমির লক্ষ মাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ হেক্টর। কৃষকদের পরামর্শ দিতে মাঠ পর্যায়ে আমাদের অফিসাররা কাজ করছেন।
প্রতিনিধি/এসএস