ভালোবাসা মানে না ধর্ম-বর্ণ,ধনী-গরিব। এরকম অসংখ্য উদাহারণ সমাজে রয়েছে। আবার এমন অসম ভালোবাসার কারণে অনেককেই নানাভাবে নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এমনই ঘটনা ঘটেছে রংপুরের মিঠাপুকুরে।
ধনীর মেয়েকে ভালোবেসে উত্যক্তের অপবাদ নিয়ে জেলে যেতে হয়েছে রাজু মিয়া নামের এক কিশোরকে।
বিজ্ঞাপন
পুলিশের কাছে দেওয়ার আগে ওই কিশোরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়।
এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে গ্রামবাসীর মাঝে।
সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের দুর্গামতি গ্রামের দরিদ্র সাহেব আলীর ছেলে রাজু মিয়া (১৬)। অভাবী সংসারে সে পড়ালেখা বাদ দিয়ে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে সহায়তা করে। প্রতিবেশী ধনাঢ্য হাফিজুর রহমানের মেয়ের সঙ্গে সম্প্রতি প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। এ নিয়ে দুই পরিবারে মাঝে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
বিজ্ঞাপন
গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে নিজ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল রাজু। সেখান থেকে মেয়ে পক্ষের লোকজন তাকে ধরে হাফিজুরের আঙিনায় নিয়ে যায়। একটি আম গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে শরীর এবং অন্য গাছের সঙ্গে হাত শক্তভাবে বেঁধে ফেলে। এরপর আবদুল খালেক, করিম মিয়া, রবিউল, সেহেরুল, মোস্তা, আনারুল, রউফ, তালেব, কুদ্দুস, মিজানসহ ১৫/২০ জন মিলে লাঠি দিয়ে রাজুকে বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। এক পর্যায়ে রক্তাক্ত রাজু অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবুও খ্যান্ত হননি তারা। পুলিশকে খবর দিয়ে মেয়েকে উত্ত্যক্তের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ওই কিশোরকে তুলে দেয়। পরে পুলিশ তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করে।
এ বিষয়ে সরেজমিনে খোঁজ নিতে গেলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। গ্রামের শতশত নারী-পুরুষ রাজুর বাড়ির সামনে জড়ো হন।
এদেরই একজন রেজিয়া বেওয়া (৮০), তিনি ওই কিশোরের সম্পর্কে দাদি হন। হাউমাউ করে বলেন, মোর নাতিক আনি দ্যাও। বিনা দোষে ওরা ছইলট্যাক (ছেলেটাকে) এংকা (এরকম) করি গরুর মতোন ডাংগাইলো (মারধর)।
স্থানীয় বাসিন্দা রানা মিয়া বলেন, ছেলেটার কোনো দোষ নাই। শুনেছি মেয়েটার সঙ্গে তার ভালোবাসার সর্ম্পক ছিল। এই ভালোবাসার অপরাধে ছেলেকে ধরে নিয়ে তারা বেদম মারধর করেছে।
মাহফুজা বেগম ও গাউছুল আযম বলেন, হাফিজুর রহমানের টাকা থাকায় গায়ের জোরে লোকজন ভাড়া করে ছেলেটাকে ধরে যেভাবে মারপিট করেছে, এটা অন্যায়। তারা গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে এবং পুলিশ ডেকে এনে থানায় দিয়েছে।
গাছে বেঁধে মারপিটের ব্যাপারে মেয়েটির বাবা হাফিজুর রহমান বলেন, মেয়েকে প্রায় সময় বিরক্ত করে আসছে রাজু। তাই ধরে এনে একটু শাসন করা হয়েছে। তবে অপরাধ করলে আইনের আশ্রয় না নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারপিট করা হয়েছে কেনো-এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ওভাবে তাকে মারধর করা ঠিক হয়নি। তাকে সেইফ করার জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে ১৫১ ধরায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত পূর্বক দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/এসএস