দিনাজপুরের খানসামায় মাঠে মাঠে স্বল্পমেয়াদি উচ্চ ফলনশীল আমন ধান পাকতে শুরু করায় কাটা ও মাড়াই শুরু করছেন চাষিরা। এতে করে আগাম আলুসহ শীতকালীন রবি শস্য চাষের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। আগাম ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হওয়ায় বেশ আনন্দে রয়েছেন কৃষকসহ শ্রমিকরা। ভালো ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে এখন হাসি ফুটেছে। ধানের পাশাপাশি গো খাদ্যের জন্য কাঁচা খড়ের ভালো ব্যবসা চলছে। চাহিদা থাকায় মাঠে মাঠে ধানের কাঁচা খড় কেনার জন্য মৌসুমি খড় ব্যবসায়ীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। জমিতে তিন থেকে চারটি ফসল হওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। আগাম জাতের ধান রয়েছে হাইব্রিড, এসিআই-১, এসিআই-২, বিনা-১৭, বিনা-২০, বিএডিসিসহ নানা জাতের ধান।
বিজ্ঞাপন
রোবনার (১৩ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সহজপুর, হোসেনপুর, গোবিন্দপুরসহ বিভিন্ন গ্রামগুলোতে আগাম জাতের ধান উৎপন্ন করা হয়। মাঠের পর মাঠ সবুজের মাঝে পাকা ধানখেত। আগাম ধান কাটা নিয়ে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ ধান কাটছে, কেউ আবার ধান কেটে কাঁধে করে জমি থেকে রাস্তায় তুলছেন। আবার সেই ধান শ্রমিকরা মেশিনে মাড়াই করছেন। নারীরা মাড়াই করা ধান বাতাসে উড়িয়ে পরিষ্কার করছেন। কেউ কেউ ধান মাড়াইয়ের পর শুকানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। ধান কাটা মাড়াই শেষে তারা খড় বাজারে বিক্রি করে ভালো লাভবান হচ্ছে। কৃষক খড় বিক্রি করে কিছুটা চাষের খরচ তুলছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আগাম জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান কর্তন হয়েছে। যার গড় ফলন ৬.৪৫ মেট্রিক টন (ধানে)। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬৭ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন। যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
উপজেলার হোসেনপুর এলাকার কৃষক হাসান ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি এবার ৬ বিঘা ধান লাগিয়েছি। মোটামুটি ভালো ধান দিছে আল্লাহ্ এইবার। আমার জমিতে ২ বিঘায় ৭০ মন ধান আসতেছে। আমি খুব খুশি।
আরেক কৃষক মনিরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, আগে অন্য ধান লাগিয়ে লাভবান হই নাই। এবার আগাম জাতের ধান লাগিয়ে অনেক ফলন পেয়েছি। আমি আগামীতে আবারও এই ধান রোপণ করব। আমি দুই বিঘা জমির ধান কেটে ৭৫ থেকে ৮০ মন ধান পেয়েছি শুকিয়ে। আমি ধানের খুব যত্ন নিয়েছি তাই এবছর ভালো ধান পেয়েছি।
কৃষিশ্রমিক আবুল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, এ সময়টায় এলাকায় কাজের চাহিদা কম। আগাম ধান চাষ হওয়ায় এখন ধান কাটা ও মাড়াই চলছে। মজুরি পেয়ে যা আয় হচ্ছে, তা দিয়ে সংসার চলছে।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার ঢাকা মেইলকে বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগ ও পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব কম থাকায় এ বছর রোপা আমনের উৎপাদন লক্ষমাত্রাকে ছাড়িয়ে যাবে, যা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ফসলহানির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কৃষি বিভাগের তৎপরতায় কৃষক আশার স্বপ্ন বুনছে বলে তিনি জানান।
প্রতিনিধি/এসএস