বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে আমতলী ও তালতলীতে ৩দিনের ভারী বর্ষণ ও শনিবার রাতে ঝড়ের তাণ্ডবে সহাস্রধিক গাছপালা উপড়ে পড়াসহ অর্ধশতাধিক কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছ উপড়ে পড়ায় ৩০ স্থানের বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। এতে ২৩ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় রয়েছে আমতলী ও তালতলীর বাসিন্দারা। বিদ্যুতের কারণে আমতলী পৌরশহরের পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে রয়েছে শহরবাসী।
জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণ রোববার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকায় আমতলী ও তালতলী উপজেলার হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষসহ প্রায় লক্ষাধিক মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। ভারী বর্ষণে আমনের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে পাকা ইরিধান। ৩দিনের বর্ষণে গাছের গোড়ার মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় আমতলী ও তালতলী উপজেলার কয়েক হাজার রেন্ট্রি, চাম্বল, কলাগাছ, মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ উপড়ে পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
ছুরিকাটা গ্রামের কৃষক হালিম বলেন, ইরি ধান পাইক্যা রইছে। ক্ষ্যাত তলাইয়া গ্যাছে পানির মধ্যে এহন ধান নষ্ট অইয়া যাইবে।
হলদিয়া গ্রামের কৃষক রাব্বি বলেন, আনের বীজতলা পানির নিচে তলাইয়া রইছে। আগে অররো দুইবার বীজ নষ্ট অইছে। এহন আবার দেওয়ইতে বীজ নষ্ট অইলে মোরা আর ধান লাগাইতে পারমু না।
রোববার সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আমতলী পৌরশহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে সাবরেজিষ্টার অফিসের একটি ৬০ বছরের পুরানো বিশাল আকরে রেন্ট্রিগাছ রোববার রাতের ঝড়ে উপড়ে ঘরের ওপর পড়ায় ১টি লাইব্রেরি ও ওষুধের দোকান সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এতে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঘরের মালিক মো. আবু বক্কর জানান, ঝড়ে বিশাল আকারের একটি রেন্ট্রি গাছ পড়ে আমার ঘরটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘরটিতে ১টি ফার্মেসি ও ১টিতে লাইব্রেরি ছিল। ঘরসহ তাদের প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পৌর সশহরের আমতলী সরকারি কলেজ ও বিআরডিবি অফিসের পেছনেরও অনেক গাছ উপড়ে পড়েছে। আমতলী সদর ইউনিয়নের টিয়াখালী সফেজ আকন বাড়ির সামনের ৩৩ হাজার ভোল্টের গ্রিড লাইনের ওপর, আরপাঙ্গাশিয়া বাজার ও পৌরশহরসহ ৩০টি স্থানের বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়াসহ ১৫০-২০০ স্থানের তারের ওপর গাছ উপড়ে পড়ায় ২৩ ঘণ্টা ধরে আমতলী ও তালতলী উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় শনিবার সকাল থেকে আমতলী পৌরসভার পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে শহরের অন্তত ২৫ হাজার বাসিন্দা।
বিজ্ঞাপন
পল্লী বিদ্যুৎ আমতলী জোনাল অফিসের জিএম সঞ্জয় রায় জানান, ৩০ জায়গায় গাছ উপড়ে পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। এবং ১৫০-২০০ জায়গায় তারের ওপর গাছ পড়ে আছে। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা।
৩দিনের ভারী বর্ষণে আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ২০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। গ্রামগুলো হলো- তালতলী উপজেলার খোট্টার চর, সখিনা, নিন্দ্র ও আমখোলা। আমতলী উপজেলার হলদিয়া, উত্তর তক্তাবুনিয়া, চিলা, সোনাখালী, গাজীপুর, কাঠালিয়া, হরিমৃত্যুঞ্জয় ও কেওয়াবুনিয়া হরিদ্রাবাড়িয়া, কালিবাড়ি, নাচনাপাড়া, টিয়াখালী, নীলগজ্ঞ, ইসলামপুর, পাতাকাটা ও ঘটখালী।
তালতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, উপজেলায় কয়েক হাজার গাছ উপড়ে পড়াসহ ২০-২৫ কাঁচাঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ জামাল হোসাইন জানান, রাতের ঝড়ে উপজেলার সহাস্রাধিক গাছপালা উপড়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রায় অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও তিনি জানান।
প্রতিনিধি/এসএস