কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ) অবৈধ সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করে সরকারি ১৪টি লুট করা অস্ত্র ফেরত দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রোয়াংছড়ি উপজেলায় বসবাসরত বম জনগোষ্ঠী।
সোমবার (১০ জুন) সকাল ১০টায় রোয়াংছড়ি বাজারে রোয়াংছড়ি সর্বস্তরের সাধারণ বম জনগোষ্ঠীর ব্যানারে দুই শতাধিক নারী-পুরুষ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এ সময় বক্তারা বলেন, সম্প্রতি বান্দরবানে রোয়াংছড়িতে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা, রুমা ও থানচি উপজেলায় কেএনএফের ব্যাংক ডাকাতি, সরকারি অস্ত্র লুট, অপহরণ ও চাঁদাবাজির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একইসঙ্গে পুলিশ ও আনসার সদস্যে ১৪টি অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করা অস্ত্র ফেরত দিয়ে কেএনএফ সদস্যদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।
রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নেইত পুইতিং বম বলেন, পার্বত্য জেলা বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কেএনএফ সশস্ত্র সংগঠন কর্তৃক ব্যাংক ডাকাতি, সরকারি অস্ত্র লুট, অপহরন, চাঁদাবাজি ও সেনাবাহিনীর ওপর হামলাসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার সাধারণ নাগরিকদের জানমাল রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তার ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ দমনের লক্ষ্যে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে। আমাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।
বিজ্ঞাপন
বান্দরবান সরকারি কলেজের ছাত্রী জেনেট বম বলেন, কেএনএফের ক্রমবর্ধমান বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে এলাকায় স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা ব্যহত হচ্ছে। কেএনএফের অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য সাধারণ মানুষ বিশেষ করে বম জনগোষ্ঠীর মা-বোন, বৃদ্ধ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভুক্তভোগী হতে চাই না। আজ বম জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ গ্রাম জনশূন্য। শতশত মানুষ দেশান্তরিত হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বন্ধ হচ্ছে। স্বাভাবিক গৃহস্থালি কাজ, আর্থ-সামাজিক, জীবন জীবিকা নির্বাহ কাজ ব্যহত হচ্ছে। এলাকায় সাধারণ মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসবের দায়ভার কেএনএফকে নিতে হবে। বম জনগোষ্ঠীর প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে ফলদ বাগান ও জুম চাষ। ফলদ বাগান করে শতশত পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ফল-মূল বিক্রি করার এই মৌসুমে কেএনএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ীরা বম পাড়ায় আসতে পারছেন না। শত শত একর আম,আনারস বিভিন্ন ফলদ বাগান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কেএনএফ সংগঠনের প্রতি আমাদের অনুরোধ, যদি সমাজে শান্তি চাও, লুণ্ঠিত সরকারি অস্ত্র ফেরত দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসো। তোমাদের অযৌক্তিক ও অবান্তর দাবি বম জাতির সামাজিক অবক্ষয়, বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক ধ্বংস ও এলাকার ক্ষতি ছাড়া কোনো সুফল বয়ে আনবে না।
মানববন্ধনে রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নেইত পুইতিং বমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- রোয়াংছড়ি উপজেলার ৩৪১ নম্বর মৌজার হেডম্যান বয়থাং বম, পারখুম বম ও বান্দরবান সরকারি কলেজের ছাত্রী জেনেট বম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ, টাকা লুট ও পুলিশ-আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ব্যাংক ব্যবস্থাপক উদ্ধার হলেও লুট হওয়া অস্ত্র ও টাকা দুই মাসেও উদ্ধার করা যায়নি। সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে।
সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, অস্ত্র ও টাকা উদ্ধারের অভিযানে অংশ নিচ্ছেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। অভিযান সমন্বয় করছে সেনাবাহিনী।
প্রতিনিধি/এসএস