রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

শিশু লামিয়া হত্যা: ২৪ আসামি ধরা ছোঁয়ার বাইরে

মো. রুবেল হোসেন, লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২৪, ১১:৩৪ এএম

শেয়ার করুন:

শিশু লামিয়া হত্যা: ২৪ আসামি ধরা ছোঁয়ার বাইরে

শিশু লামিয়া হত্যা মামলার সোমবার (১৩ মে) বরাবর একমাস পূর্ণ হয়েছে। এ মামলার ২৪ আসামি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু অনেকেই আবার প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক বলে মনে করছেন মামলার বাদী ও স্বজনেরা।

চলতি বছরের (১৩ এপ্রিল) নিহত শিশু লামিয়ার বাবা আল-আমিন ২৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায়। এ মামলার অনেক আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে। চিহ্নিত অনেক আসামি এলাকায় থেকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

শাশুড়িকে হত্যার অভিযোগে ছেলের বউ গ্রেফতার 

ছোট্ট শিশু-কন্যা লামিয়ার বয়স মাত্র ৪ মাস। সেই তার মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় হামলার শিকার হয় জলদস্যু ও ডাকাত দলের সদস্যদের হাতে। ঘটনার সময় হামলাকারীরা তার মা রানু বেগমের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। মা-মেয়েকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশু লামিয়ার মৃত্যু হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় তার মা রানু বেগমকে সদর হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

lokkhi-2

শিশু লামিয়া ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের (১ নম্বর ওয়ার্ড) ভোরার চর (উদয়পুর গ্রামের) আল-আমীনের মেয়ে।


বিজ্ঞাপন


মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর (শুক্রবার) সকাল ১০টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়ন ও ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মেঘা নদীর কূল ঘেঁষে জেগে উঠা চর-মেঘায় বসবাসরত বাসিন্দা আল-আমীনের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে চিহ্নিত আলতু ডাকাত ও শাহজালাল মোল্লা ওরফে লেইক্কা। দাবি করা ১০ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় ৫ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) রাত ১০টার দিকে সংঘবদ্ধ ডাকাত আলতু ডাকাত, শাহজালাল মোল্লা, করিম আখন্দ, রশিদ আখন্দ, ইব্রাহিম আখন্দ, ইয়াসমিন আখন্দ, ইসমাইল আখন্দ, আলিমুদ্দিন রাড়ী, মনির মাতব্বর, আলিম মাতব্বর, সাবের মাঝি, আল-আমীন, ফয়সাল, নিজাম মাতব্বর, মোসলেম ফকির, শাহ সর্দার, হারেছ সর্দার, সাইফুল ইয়াছিন মাতাব্বর, এরফান মোল্লা, আলমগীর মাতাব্বর, রাজিব চৌধুরী, গোলাম কিবরিয়া ওরফে খোকন চৌধুরী ও মো. কামাল সর্দার ভুক্তভোগী আল-আমিনের স্ত্রী রানু বেগমের ওপর হামলা করে। রানুকে বাঁচাতে গিয়ে ওইদিন হামলার শিকার হন- মো. মিন্টু খান, মামুন খান, মরিয়ম বিবি, রুমা আক্তার, জাহানারা বেগম ও রানুর কোলে থাকা চার মাসের ছোট্ট শিশু লামিয়া। আহত সবাই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশু লামিয়া।

 

আরও পড়ুন

ফুটবল খেলার দ্বন্দ্বে কলেজছাত্র খুন

এ ঘটনায় শিশু লামিয়ার বাবা আল-আমিন ভোলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) কোর্ট একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কাগজপত্র সবকিছু পর্যালোচনা করার পর লক্ষ্মীপুর কোর্ট ও থানাকে মামলাটি আমলে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। যেতু শিশু লামিয়া লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করছে।

তখনকার সময় লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজিজুর রহমান সুরতহাল প্রতিবেদন করেন। সুরতহাল রিপোর্টে এসেছে ‘মৃত শিশু লামিয়ার মাথার ডান পাশ্বের খুলির অংশ বিশেষ থেঁতলানো পরিলক্ষিত হয় এবং ভিকটিম মাথায় আঘাতজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করিয়াছে।’

lokkhi

শিশু লামিয়ার মা রানু বেগম মুঠোফোনে ঢাকা মেইলকে বলেন, তিনি তার নিষ্পাপ শিশুকন্যা লামিয়ার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছেন। মামলার ১ মাস চলে। এখন পর্যন্ত পুলিশ ২৪ জনের একজন আসামিকেও গ্রেফতার করতে পারেননি। এছাড়াও আসামিরা বিভিন্ন সময় তাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। যেদিন শিশু লামিয়া হামলার শিকার হয়েছে ওইদিন লামিয়া মায়ের কোলে ছিল। ডাকাতরা এতোটাই হিংস্র রড দিয়ে লামিয়ার মাথায় আঘাত করে।

র‍্যাব-১১ এর লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম মোর্শেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, শিশু লামিয়া হত্যা মামলার বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। এ প্রতিবেদকের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন শিশু লামিয়া হত্যা মামলার বিষয়টি। ইতোমধ্যে র‍্যাব বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

লক্ষ্মীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) হাসান মোস্তফা স্বপন ঢাকা মেইলকে বলেন, শিশু লামিয়া হত্যা মামলার আসামিদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে। খুব শিগগিরই আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে।

আরও পড়ুন

পাঁচশ টাকার জন্য শিশুকে নদীতে ফেলে হত্যা

উল্লেখ্য, চর মেঘা একটি বিস্তীর্ণ চর। এ চরে শতাধিক পরিবারের বসবাস। গরু-মহিষের পাল রয়েছে অসংখ্য। অনাবাদি জমিকে পরচর্চা করে চাষাবাদ করে, সেখানকার কৃষকেরা। কোটি-কোটি টাকা ফসল আবাদ হয় এ চর মেঘায়। এজন্য জলদস্যু, ভূমিদস্যু, গরু চোর ও ডাকাতদের দৃষ্টি এ চরের দিকে। প্রায় সময় লুটপাট হয় এ চরের আবাদি ফসল সয়াবিন। এপর্যন্ত দু’টি খুন হয়েছে এ চর দখলকে কেন্দ্র করে।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘চর-মেঘায় কৃষকদের ফসল লুট হয়ে যাচ্ছে এমন শিরোনামে সংবাদ প্রচার হলে। সোমবার (১২ মে) লক্ষ্মীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) হাসান মোস্তফা স্বপন ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার চর মেঘায় পরিদর্শন করেন।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর