শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

সাম্মাম চাষে বিঘা প্রতি দুই লাখের বেশি আয় দেখছেন খুলনার তরিকুল

আল আমীন
প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২২, ১০:৩৩ এএম

শেয়ার করুন:

সাম্মাম চাষে বিঘা প্রতি দুই লাখের বেশি আয় দেখছেন খুলনার তরিকুল

মরুপ্রধান দেশের জনপ্রিয় ফল ‘সাম্মাম’ এখন আমাদের দেশের মানুষের কাছেও জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে।দেখতে দেশীয় ফল বাঙ্গির মতো, ইংরেজি নাম রকমেলন, খেতে খুবই মিষ্টি, রসালো ও সুগন্ধযুক্ত— এই ফল সাধারণত দুই ধরনের হয়। একটির— হলুদ মসৃণ খোসা আর অন্যটির খোসার অংশ খসখসে। 

গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে এই ফল চাষ করে সফলতা এসেছে। এটি সাধারণত সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাষ হয়ে থাকে। তবে প্রবাসীদের মাধ্যমে বা বিভিন্নভাবে আমাদের দেশে সাম্মামের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। দিন দিন বাড়ছে এর পরিসরও।  এবার খুলনায় এই ফল চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন জেলা সদরের দিঘলিয়া উপজেলার মো. তরিকুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে গ্রাজুয়েশন ও পোস্ট গ্রাজুয়েশন করা এই যুবক এখন স্বপ্ন দেখছেন একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার।
sammamএ নিয়ে এক আলাপচারিতায় ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, কৃষি উদ্যোক্তা হিসাবে নিজের প্রজেক্টে কাজ করছি দুই বছর ধরে। তবে কৃষিতে জানাশোনা, কৃষি নিয়ে পড়াশোনা, গবেষণা বা মাঠের কাজের বয়স আমার পাঁচ বছর। আমি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলাতে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করেছি। এছাড়া বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থায়ও চাকরি করেছি। 


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, এক সময়ে স্বপ্ন দেখতাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিন্তু হবো। তবে সেটি করতে পারিনি বলে কৃষিতে আসা। এখন স্বপ্ন এই কৃষি নিয়েই। পাশাপাশি সেইফ অ্যান্ড সেফটি ফুড নিয়েও কাজ করছি।

উদ্যোক্তার হওয়ার গল্প জানতে চাইলে তরিকুল বলেন, ‘জীবনে খুব কঠিন সময় পার করেছি। পারিবারিকভাবে একটা সময় খুবই সংকটাপন্ন অবস্থায় ছিলাম। আমার মা হার্টের বড় ধরনের রোগী, দাদি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল। এর এক বছর আগে আমার দাদা ক্যান্সারে মারা যান। আমি নিরবে এমন রোগের কাছে তার অসহায়ত্ব দেখেছি। কারণ আমার পরিবারের ছিটে-ফোঁটাও সামর্থ্য ছিল না দাদার চিকিৎসা করার। ঠিক এক বছর পর দাদি ক্যান্সারে মারা যান। আমার নিরবে চোখের পানি ফেলা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। মাকে কোনোভাবে রক্ষা করা যায় আমার দুইটা টিউশনি করা আর ছোট ছোট গবেষণা কাজের অর্থ দিয়ে।’
sammam
‘এমন যখন অবস্থা— আমার একটা চাকরির খুব দরকার ছিল। কিন্তু চাকরির চেষ্টায় ব্যর্থ হই। কাঙ্খিত চাকরির ভাইভাতে ভাল ফলাফল করেও অজ্ঞাত কারণে আমি বারবার বাদ পড়ে যাই। আমি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইভা দিয়েছি, রিটেনে টপ সিরিয়াল করেছি কিন্তু চাকরি মেলেনি। নিজের অতি আপন মানুষের শেষ বিদায়ের ধাক্কা আর বিরাট অভাবের কারণে সব কিছু শূন্য মনে হতে থাকে। খুব হতাশ হয়ে পড়ি। আর এখান থেকেই আমার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্পের বীজ বোনা। অবশেষে দিঘলিয়ায় ফিরে এসে এই কৃষিকাজে নামলাম।’

তবে উদ্যোক্তা জীবনে তিনি ‘দারুণ সাড়া পাচ্ছি’ বলে জানালেন। বিদেশী এই ফলের বীজ কোথায় পেলেন— প্রশ্নের জবাবে তরিকুল বলেন, আমি চাষ করেছি তাইওয়ানের নোন ইউ সীডের বীজ। এটি ভারত থেকে সংগ্রহ করা।

‘এই ফলের চাষের পদ্ধতি দেশের অন্যান্য চাষাবাদ পদ্ধতির চেয়ে অনেক আলাদা। এখানে মালচিং, ডেলসিং, ফার্টিলাইজার ম্যানেজমেন্ট করা হয় অতি আধুনিক উপায়ে। এই ফসলে বিঘা প্রতি ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয় এবং চাষের কৌশল বা টেকনিক্যাল সাইড ঠিক থাকলে মাত্র দুই মাসে দুই লাখ বা তারও বেশি টাকা আয় করা সম্ভব। যার ফলাফল আমরা পেয়েছি।’
samma‘চারা রোপণের দিন থেকে শুরু করে ৬৫-৭০ দিনের মধ্যে পরিপক্ক ফল পাওয়া যায়। সর্বোচ্চ চার কেজি ওজনও হয় এর একেকটি ফলে। যা বিক্রি করছি কেজি প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।’ 


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যাতে এর স্বাদ মধ্যপ্রাচ্য বা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে চাষ করা সাম্মামের মতোই হয়। সেভাবেই চাষাবাদ করছি। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এতে ৯৫% সফল বলে মনে করি। দেশে বাণিজ্যিকভাবে এই ফল চাষ দারুণ সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। আমরা এটা নিয়ে প্রচুর গবেষণা এবং পড়াশোনা করছি আর এতেও আমরা ৭০-৭৫% সফল।

তবে এটি চাষ করতে গেলে ভাল করে জেনে বুঝে মাঠে নামা উচিত বলে মনে করেন এই কৃষি উদ্যোক্তা। ‘কারণ এই ফলের গাছে কিছু রোগও হয়। যেগুলো সম্পর্কে ঠিকমতো না জানা থাকলে বড় ক্ষতির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা থাকে।’
sammamতরিকুল জানান, উৎপাদিত সাম্মাম তিনি অনলাইন এবং সরাসরি দুইভাবেই বিক্রি করছেন। অনেকে অনলাইনে অর্ডার করে কুরিয়ারের মাধ্যমে নিচ্ছেন। অনেকে আবার ছুটে আসছেন ক্ষেত দেখতে। সরাসরি ক্ষেত থেকেই সংগ্রহ করছেন এই ফল। এছাড়া খুলনার পাইকারী ব্যবসায়ীরাও ক্ষেত থেকে ফল কিনে নিয়ে বাজারজাত করছেন। 

এ ব্যাপারে খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কুমড়া জাতীয় ফল বা সবজি উপকূলীয় এলাকা অর্থাৎ লবণাক্ত এলাকায় ভালো জন্মায়। রকমেলনও কিছুটা কুমড়া জাতীয় সবজি বা ফল। সে কারণে রকমেলন চাষের জন্যও আদর্শ জায়গা হয়ে উঠছে খুলনা এবং খুলনা উপকূলীয় উপজেলাসমূহ। গত দু’বছর ধরে খুলনার বিভিন্ন এলাকায় রকমেলনের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এর আগে ডুমুরিয়াতে বাণিজ্যিকভাবে রক মেলন চাষাবাদ হয়েছিল এবং তিনিও সফল হয়েছেন। এরপর খুলনার রূপসা উপজেলার একইভাবে রকমেলন চাষ করা হয় সেখানেও ভাল ফলন হয়। এবার বাণিজ্যিকভাবে রকমেলন চাষাবাদ করেছেন দিঘলিয়ার তরিকুল ইসলাম। তিনি সফল হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর