এক সময় কাজের সন্ধানে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটেছেন। কোনো উপায় না পেয়ে খুলনা গিয়ে শুরু করেন বিক্রয় প্রতিনিধির চাকরি। এরপর সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি। বেতন পেতেন সাড়ে তিন হাজার টাকা। এ টাকায় সংসার চালানো ছিল দায়। জীবন-জীবিকার তাগিদে এরপর সাতক্ষীরা গিয়ে শুরু করেন রাজমিস্ত্রীর কাজ। রাজমিস্ত্রী সহকারী হিসেবে যে পারিশ্রমিক পেতেন তা-ই দিয়ে সংসার চলত। প্রায় পাঁচ বছর করেন এ কাজ।
রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়েই জানতে পারেন অনলাইনে কাজের খবর। এরপর কাজের ফাঁকে খোঁজ নিতে থাকেন অনলাইন প্লাটফর্মে কাজের বিষয়ে। অল্পদিনেই রাজমিস্ত্রী থেকে হয়ে ওঠেন সফল ফ্রিল্যান্সার ও ইউটিউবার। সেই থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সাদ্দাম হোসেনকে। উচ্চশিক্ষার সুযোগ না পেলেও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সফল মানুষ তিনি।
বিজ্ঞাপন
খুলনার কয়রা উপজেলার দুই নম্বর কয়রা গ্রামের আব্দুস সাত্তার ও সায়রা বেগমের ছোট ছেলে সাদ্দাম। আছে বড় এক ভাই ও ছোট দুই বোন।
সাদ্দাম বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেছি। তবে হাল ছাড়িনি। বিক্রয় প্রতিনিধি থেকে শুরু করে সিকিউরিটি গার্ড, রাজমিস্ত্রীর কাজ করেছি। পরিশ্রম অনুযায়ী বেতন পাইনি। অবশেষে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মিলেছে সাফল্য।
অনলাইনে কাজে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে সাদ্দাম বলেন, ফ্রিল্যান্সার বা অনলাইন মার্কেট প্লেসের কাজটি শুরু করেছি ২০১৩ সালে। প্রথমে কাজ শেখার জন্য ভালো কোনো শিক্ষক পাইনি। তবে হাল ছাড়িনি। ‘ওয়েব ডিজাইন’ দিয়ে অনলাইন জগতে প্রথমে কাজ শুরু করি। পরে ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেজসহ ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিভিন্ন ধরনের কাজ করছি। সবমিলে বর্তমানে প্রতি মাসে আয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।
বিজ্ঞাপন
অনলাইনের আয়ের ওপর নির্ভর করেই নড়াইল উপশহর সংলগ্ন দলজিতপুর মৌজায় পাঁচ শতক জমির ওপর একতলা পাকা বাড়ি, সাড়ে তিন শতক জমিতে মার্কেটসহ ১২৬ শতক চাষাবাদের জমি কিনেছেন সাদ্দাম হোসেন। বলা যায়, জিরো থেকে কোটিপতি হয়েছেন তিনি।
এখন ইউটিউব, ফ্রিল্যান্সিং, ফেসবুক পেজসহ অনলাইন মার্কেটিংয়ের উপর নিয়মিত ক্লাস নে সাদ্দাম হোসেন। সরাসরি ও অনলাইনে সাদ্দাম হোসেনের ক্লাস করে অনেকেই এখন প্রতিষ্ঠিত ফ্রিল্যান্সার ও ইউটিউবার।
সাদ্দামের সাফল্য নিয়ে তার স্ত্রী সোনালী হোসেন জানান, স্বামীর কাজ ও আয়-উপার্জনে খুশি পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজনরা।
শূন্য থেকে সাফল্য লাভ করেছেন সাদ্দাম হোসেন। তার এই গল্প এখন অনেক হতাশাগ্রস্ত তরুণ-তরুণীকে অনুপ্রেরণা যোগায়। তার জীবন সংগ্রাম ও সাফল্যের কাহিনী নিয়ে ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়েছে ‘সিক্স ফিগার সিলভার টিউবার’ শিরোনামে একটি বই।
সাদ্দাম হোসেনের শিক্ষার্থী নড়াইলের দলজিতপুরের মেহেদী, রাজশাহী জেলার রফিকুল ইসলাম ও ময়মনসিংহের আমিনুল ইসলামসহ অনেকে বলেন, সাদ্দাম স্যারের কাছ থেকে আমরা বিনামূল্যে ক্লাস করে ফ্রিল্যান্সিং জগতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। এখন নিজেরাই দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ভালো উপার্জন করছি। আমরাও এখন অন্যদের ফ্রিল্যান্সিং শেখাচ্ছি।
দুর্গাপুর এলাকার জাকির হোসেন বলেন, সাদ্দাম এলাকার ‘ফ্রিল্যান্সার মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি নিজে সফল হয়েছেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অন্যদেরও সফল করার লক্ষ্যে সবসময় কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি প্রসেনজিৎ কুন্ডু বলেন, সাদ্দামের সফলতা দেখে আরো অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে আগ্রহী হবেন। দিন দিন অনলাইনে মার্কেটপ্লেস বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদাও বাড়ছে। এই খাতে মানুষ আগ্রহী হলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে যেমন নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারবেন, তেমনি দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে।
টিবি