বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

বৈশাখী মেলায় দেখা মিলল গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া হুক্কা

তোফায়েল হোসেন জাকির, গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫১ এএম

শেয়ার করুন:

বৈশাখী মেলায় দেখা মিলল গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া হুক্কা

কয়েক যুগ আগেও আবহমান বাংলার গ্রাম-গঞ্জে ধুমপায়ীরা হুক্কা টানার মাধ্যমে তামাক পান করতেন। সে সময় ধনী-গরিব প্রায় সবার বাড়িতেই হুক্কার প্রচলন ছিল। এখন গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেও দেখা মেলে না হুক্কার। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সেই ঐতিহ্যবাহী হুক্কা। কিন্তু সেই হারিয়ে যাওয়া হুক্কার দেখা মিলল এবার বৈশাখী মেলায়।

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার পীরের পুণ্যভূমির বান্নি মেলায় দেখা যায় হুক্কায় টান দিচ্ছেন নছিম উদ্দিন। তাকে ঘিরে জটলা পাকিয়ে বসেছে কিছু তরুণ। তিনি তাদের হুক্কায় ধূমপানের কৌশল সম্পর্কে বলছিলেন এবং দেখাচ্ছিলেন।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

সাদুল্লাপুরে বর্ষবরণে জাতীয় সংগীত বাজানো নিয়ে হট্টগোল

নিভৃত গ্রামের নছিম উদ্দিন। বয়স প্রায় ৬৫ ছুঁই ছুঁই। এক সময় ধূমপানে তার অন্যতম মাধ্যম ছিল হুক্কা। এখন কালের বিবর্তনে সেই হুক্কা হারিয়ে গেছে। ধূমপানে উদ্বুদ্ধ করতে নয়, শুধু নতুন প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ জীবনচিত্র তুলে ধরতে বান্নি মেলায় হুক্কা নিয়ে হাজির হন বলে জানান তিনি।

খেতাব উদ্দিন ব্যাপারী জানান, প্রায়  তিন-চার দশক আগেও বাংলার গ্রামগঞ্জে ধূমপায়ীরা হুক্কার মাধ্যমে তামাকপানের নেশায় ছিল অভ্যস্ত। সে সময় দেশের প্রায় সব বাড়িতেই ছিল এর প্রচলন। তখনকার দিনে সামাজিক অনুষ্ঠান বা জমায়েতে ছোটবড় সবাইকে হুক্কায় আপ্যায়নের রীতি ছিল। প্রতিটি গ্রামের বাড়িতে লম্বা পাইপযুক্ত স্ট্যান্ড হুক্কা ওই বাড়ির শোভাবর্ধন ও প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করত। বর্তমান প্রজন্মের কাছে হুক্কা একটি অপরিচিত বস্তু হয়েছে। এটি খাওয়া দূরের কথা, চোখেই দেখেনি তারা।

thumbnail_zakir_p11


বিজ্ঞাপন


পীরেরহাট বান্নি মেলায় আসা হুক্কা সেবনকারী নছিম উদ্দিন বলেন, তিন-চার দশক আগেও আমাদের বাপ-দাদারা তিন বেলা খাবার খেতে ততটা আগ্রহী হতেন না যতটা আগ্রহী ছিলেন হুক্কা টানায়। হুক্কা ছাড়া তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন কল্পনাও করা যেত না। ঘরে চালডাল না থাকলেও যথেষ্ট পরিমাণে জমা থাকত হুক্কার তামুক। তামাকপাতা টুকরা টুকরা করে কেটে এনে এতে চিটাগুড় মিশিয়ে তৈরি করা হতো বিশেষ এ তামুক। এতে নিকোটিনের পরিমাণ অনেক কম থাকে। যতটুকু নিকোটিন থাকে তা নারকেলের টোলে থাকা পানিতে মিশে যায়।

গাইবান্ধার মোসলেম উদ্দিন নামের এক শিক্ষক বলেন, বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এ হুক্কার জায়গায় বাজার দখল করেছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নিকোটিনযুক্ত বিড়ি-সিগারেটসহ অন্যান্য মাদক দ্রব্য। প্রজন্মের একটা বড় অংশ নিষিদ্ধ মাদকের নেশায় মাতোয়ারা। অথচ কম নিকোটিনযুক্ত হুক্কার প্রচলন থাকলে যুবসমাজকে মাদক গ্রহণের অধঃপতন থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করা যেত।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর