প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের সমর্থকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার ভবেরচর বাজার-সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এ হামলার ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের (সদর ও গজারিয়া) সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাসকে দায়ী করা হয়। এ সময় দলের নেতারা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ৩৬ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তবে পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পাওয়া সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ খান, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান, জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহজাহান খান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শুক্রবার মুন্সিগঞ্জ শহরে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার জন্মদিনের আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন পৌরসভার মেয়র ফয়সাল ওরফে বিপ্লব। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদের নেতৃত্বে বিকেলে ৩০-৪০টি ট্রলারে করে আসেন নেতা-কর্মীরা। তাঁরা ট্রলার থেকে নেমে মৃণাল কান্তি দাসের ‘ডানহাত’ বলে পরিচিত পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মকবুল হোসেনের এলাকা দিয়ে মিছিল করে যাচ্ছিলেন। সে সময় মিছিলে বাধা দেন কাউন্সিলর মকবুলের ভাই ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মনির হোসেন ও তার লোকজন। এ সময় সংঘর্ষ হয় দুই পক্ষের মধ্যে।
মনসুর আহমেদ খান বলেন, সংসদ সদস্যের নির্দেশে আমাদের অন্তত ৪০ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। চারজন ঢাকায় গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমরা বিচারের অপেক্ষায় আছি। যদি এর বিচার না পাই তাহলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেব, সেটি আমরাই ঠিক করব।
বিজ্ঞাপন
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে দলের সব কর্মসূচি পালন করি। স্লোগান দিতে দিতে তারা সভায় যাচ্ছিলেন। সে স্লোগান বন্ধ করার জন্য তাদের হুমকি দেওয়া হয়। স্লোগান বন্ধ না করায় হামলা চালিয়ে নেতা-কর্মীদের রক্তাক্ত করা হয়েছে।
সংসদ সদস্য ও তার অনুসারীদের উদ্দেশ করে আমিরুল ইসলাম আরও বলেন, দু-চারজন কুলাঙ্গারের জন্য আমরা লজ্জিত হতে চাই না। আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে এ হামলার বিচার না হলে ২ অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন উপজেলার সকল ইউনিয়নে বিক্ষোভ বিক্ষোভ মিছিল হবে। পরবর্তী সময় কঠোর কর্মসূচি দেব।
দলীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, পৌর মেয়র ফয়সাল বিপ্লব জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিনের ছেলে। মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে গত দুবার নৌকার মনোনয়নে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মৃণাল কান্তি দাস। সম্প্রতি আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র ফয়সাল। এ নিয়ে এ দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন।
মেয়র ফয়সাল বলেন, ১০ বছর ধরে আমার ও আমার সমর্থকদের পেছনে লেগেছে মৃণাল কান্তি। আমার ওপরে যদি তাঁর কোনো আক্রোশ থাকে, তা হলে তিনি আমার ওপর তার আক্রোশ মেটাক। আমার সমর্থকদের ওপর কেন হামলা হলো? কেন আওয়ামী লীগের এমপি হয়ে দলের লোকজনকে নির্দেশ দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করলেন?
অভিযোগের বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। শুক্রবার তিনি বলেছিলেন, ঘটনার সময় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি গজারিয়ায় ছিলেন। ঘটনার পেছনে কারা আছেন, সেটি খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের তিনি অনুরোধ জানান।
মুন্সিগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) খাইরুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পাওয়া সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/এইচই