লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মামুনুর রশিদ মিলন নামে এক ব্যক্তি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার ১৩ দিন পর মারধরের ঘটনা সাজিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মিলন তার স্ত্রী নারগিছ আক্তারকে দিয়ে এই মামলা করান।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নের পূর্ব চরসীতা গ্রামের বাড়িতে গেলে নারগিছ নিজেই জানিয়েছেন তার স্বামী মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে চরবাদাম ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুর রহিম এই মামলা করিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউপি সদস্য আবদুর রহিম একটি অপহরণ মামলার প্রধান আসামি। ওই মামলায় তিনি পলাতক রয়েছেন। মামলাটি তুলে নিতে বাদী আবদুল মাজেদ রাজীবকে তিনি হুমকি দিয়ে আসছেন। মিলনের স্ত্রীকে দিয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে তিনি সাক্ষীদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছেন। আবদুর রহিম তার স্ত্রীকে দিয়েও রান্না ঘরে আগুন লাগিয়ে মামলা করার পাঁয়তারা করছে। একটি ঘটনা ধামাচাপা দিতে আবদুর রহিম নতুন নতুন ঘটনা সাজাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মামলার বিষয়ে মিলনের নারগিছ আক্তার জানান, ২৪ জুলাই তার স্বামী মিলন একটি মামলায় জামিন চাইতে গেলে আদালত তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। সেখানেই মিলন তাকে মামলাটি করার জন্য বলে। তখন একটি ফোন আসে তার মোবাইলে। এতে তাকে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৭ তলায় উঠতে বলা হয়। সেখানে তার কাছ থেকে মামলার কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তার স্বামীকে কেউ মেরেছে কি না, তা তিনি নিশ্চিতভাবে জানেন না। তবে ১২ জুলাই জমিদার হাট বাজার এলাকায় তার স্বামী মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। পরে তিনি আহত স্বামীকে দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।
মিলনের শ্বশুর মো. ইসমাইল বলেন, মিলন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে বলে শুনেছি। পরে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনলে আমি তাকে দেখতে যায়। তাকে কেউ মারধর করেছে বলে শুনিনি। আমার মেয়েকে যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছে, সে সেভাবে মামলা করেছে। মিলন যেদিন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, সেদিন নারগিছ আমাদের বাড়িতেই ছিল। মিলনকে কেউ মারধর করেছে কি না তাও সে দেখেনি।
বুধবার (২ আগস্ট) বিকেল ৬টার দিকে চরবাদাম ইউনিয়নের কারামতিয়া বাজার এলাকার ফার্মেসি ব্যবসায়ী মো. মাহবুব বলেন, ১২ জুলাই দুপুরে জমিদারহাট বাজার থেকে আসার পথে একটি রিকসার সঙ্গে লেগে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে মিলন আহত হয়। পরে তাকে আমার দোকানে নিয়ে আসা হয়। আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। জখমও গুরুতর ছিল না। পরে ইউপি সদস্য আবদুর রহিম এসে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
এদিকে মামলায় অভিযুক্ত মো. নাছির ও মো. নিজাম জানায়, মিলন একটি অপহরণ মামলায় জেলে রয়েছে। ওই মামলায় ইউপি সদস্য আবদুর রহিম প্রধান আসামি। নাছির সাক্ষী। এজন্য আবদুর রহিম কৌশলে মিলনের স্ত্রীকে দিয়ে তাদের (নাছির ও নিজাম) দুই ভাইয়ের নামে মামলাটি করিয়েছেন। কিন্তু আদালত থেকে মিলনের মেডিকেল সার্টিফিকেট তলব করায় তিনি বিপাকে পড়েছেন। এতে সোমবার (৩১ জুলাই) রাতে আবদুর রহিম তার স্ত্রী নাছরিন বেগম আল্পনাকে দিয়ে রান্না ঘরে আগুন লাগিয়ে মামলার অপর সাক্ষী সাইফ উদ্দিনকে (নাছিরের ভাই) ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে আল্পনা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সাইফ উদ্দিন তার বসতঘরে আগুন দিয়েছে। এনিয়ে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্ত সাইফ উদ্দিন বলেন, অপহরণ মামলার সাক্ষী হওয়ায় আবদুর রহিম মেম্বার আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমরা একই বাড়ির। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্ত্রীকে দিয়ে আগুন লাগিয়ে তিনি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন।
ইউপি সদস্য আবদুর রহিম পলাতক থাকায় এ ব্যাপারে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আইনজীবী এ কে এম নুরুল আমিন রাজু বলেন, মিলন নামে এক ব্যক্তিকে মারধরের ঘটনায় মো. নাছির ও মো. নিজাম নামে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২৫ জুলাই আদালতে এজাহার দায়ের করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাতভাবে আরও ৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। আদালত এ ঘটনায় ভিকটিমের মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম সারোয়ার এ ব্যাপারে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি আদালতে মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দেবেন বলেছেন।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, আগুন লাগার ঘটনাটি তদন্ত চলছে। তবে মিলনকে কখনো কেউ মেরেছে কি না, তা জানা নেই। অপহরণ মামলার আসামি রহিমসহ পলাতকদের গ্রেফতারে আমরা কাজ করছি।
উল্লেখ্য, ৭ জুন সন্ধ্যায় রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নের পূর্ব চরসীতা গ্রামে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রহিমসহ একদল লোক মো. সুমন নামে ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে। পরে তাকে নির্জন স্থানে নিয়ে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের পর শরীরে পিঁপড়া ছেড়ে দেয়। এ ঘটনায় সুমনের ভাই আবদুল মাজেদ রাজীব বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার রহিমকে প্রধান ও মিলনকে ৭ নম্বর আসামি করা হয়। ২৪ জুলাই মিলনসহ ৩ জন আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করে। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। পলাতক আসামি রহিমসহ অন্যদের গ্রেফতারের জন্য নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু ৭ দিন পার হয়ে গেলেও পলাতক আসামির কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো মিলনের স্ত্রী নারগিছকে দিয়ে ইউপি সদস্য রহিম প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করিয়েছেন।
প্রতিনিধি/এইউ