অনেক তরুণীর ‘ড্রিম জব’ বিমানবালা। যাদের এয়ার হোস্টেস নামেও ডাকা হয়। কেবিন ক্রু হিসেবে এই পেশার পরিচিতি আছে। কিছু কিছু বিমান পরিবহন সংস্থা ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট নামে বিমানবালাদের পরিচয় দেয়।
বিমানের অন্যতম প্রয়োজনীয় কর্মী বাহিনী বিমানবালা। আকাশে যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে কাজ করেন এরা।
অনেকে ভাবেন বিমানবালার কাজ কেবল বিমানের যাত্রীদের খাবার ও পানীয় পরিবেশন করা। এই কাজও তারা করেন, কিন্তু এর পাশাপাশি বিমানবালারা অসুস্থ হয়ে পড়া যাত্রীদের সাহায্য করেও থাকেন।
বিমানবালার কাজ কী?
বিমানবালার কাজ অনেক। বিমানে জরুরি সরঞ্জাম রয়েছে কিনা পরীক্ষা করেন তারা। বিমানের যাত্রীরা নিরাপত্তা বিধান পুরোপুরি মেনেছেন কিনা তা নিশ্চিত করেন। জরুরি পরিস্থিতিতে বিমান বালাযাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা তথ্য প্রদান করেন।
আরেকটু বিশদভাবে বললে, বিমান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রয়েছে কিনা, ফার্স্ট এইড আছে কিনা এসব দেখেন বিমানবালা। সি পকেট থেকে শুরু করে খাবার-দাবার সবকিছুর খোঁজ রাখতে হয় তাকে।
যাত্রীদের টিকিট মিলিয়ে দেখা, কেবিন লাগেজ সিটে পৌঁছাতে সহায়তা করা, যাত্রীদের নিজ সিট খুঁজে পেতে সাহায্য করার কাজও করেন থাকেন বিমানবালা। বিমান ওড়ার আগে সিট বেল্ট লাগিয়ে নেওয়ার বার্তা দিয়ে থাকেন তিনি। পাইলটের পক্ষ থেকে বিমান ওঠানামা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যও যাত্রীদের দিয়ে থাকেন একজন বিমানবালা।
বিভিন্ন জরুরি সরঞ্জাম কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা যাত্রীদের শিখিয়ে দেন বিমানবালা। জরুরি অবতরণ বা কোনো সমস্যায় কী করে নিরাপদ থাকা যাবে সেই সংক্রান্ত তথ্যও দেন তিনি।
কোনো যাত্রীর বালিশ বা কম্বল প্রয়োজন হলে তিনি তা এগিয়ে দেন। যেসব যাত্রীরা বিমান ভ্রমণে ভয় পান, তাদের সঙ্গে সান্ত্বনা দেওয়া বা পরামর্শ দেওয়ার কাজটি করেন বিমানবালা।
বিমানবালা হওয়ার শারীরিক যোগ্যতা
যেহেতু একজন বিমানবালা যাত্রীদের নানান ধরনের পরিষেবা দিয়ে থাকেন, তাই তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হয়। কেননা, তাকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাটাতে হয়। একজন বিমানসেবিকাকে একটানা ১২ ঘণ্টাও কাজ করতে হতে পারে। তাদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময় থাকে না। রাতে, সপ্তাহে বন্ধের দিনে এমনকি ছুটির দিনেও বিমানবালাকে কাজ করতে হতে পারে। এ কারণে এই পেশা চ্যালেঞ্জিং।
বিমানবালা কীভাবে হবেন?
সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যে কেউ বিমানবালা হতে পারেন। কিছু প্রতিষ্ঠান অবশ্য স্নাতক সম্পন্ন বিমানবালা চেয়ে থাকেন। বিমানবালা হতে চাইলে উচ্চতা হতে হবে সাধারণের চেয়ে একটু বেশি (মেয়েদের জন্য কমপক্ষে ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি এবং ছেলেদের জন্য ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি)। উচ্চতার সঙ্গে থাকতে হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ ওজন। যোগাযোগ দক্ষতায় অবশ্যই ভালো হতে হবে। জানা থাকতে হবে সাঁতার। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকা লাগবে।
নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও বিমানবালার পেশা হিসেবে বেশ রোমাঞ্চকর। তরুণরা সহজে এতে আকর্ষিত হন। এই পেশায় বেতনও ভালো পাওয়া যায়।
বিমানবালা হওয়ার যোগ্যতা
বিমানবালা হতে চাইলে আপনাকে সাবলীল বাচনভঙ্গির অধিকারী হতে হবে। থাকতে হবে নজরকাড়া সৌন্দর্য। স্বাভাবিক গড় উচ্চতার চেয়ে একটু বেশিই হতে হবে। কেবিন ক্রু হওয়ার জন্য যোগ্যতা হিসেবে ন্যূনতম এইচএসসি বা এ লেভেল কিংবা সমমানের হতে হয়। সাধারণত বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছর এর মধ্যে হতে হবে।
মেয়েদের জন্য কমপক্ষে ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি এবং ছেলেদের জন্য ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতা থাকতে হয়, আর ওজন উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। চোখের মাপ-৬/৬ (চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স গ্রহণযোগ্য নয়)। হাতে কোনও কাটা দাগ কিংবা শরীরে কোনও ট্যাট্টু থাকতে পারবে না, যা সহজে দেখা যায়। সাঁতার জানা আবশ্যক। কোনও কারণে বিমান যদি পানিতে অবতরণ করতে হয় সেজন্য বিমানবালাদের কমপক্ষে ২০ মিটার সাঁতার কাটার সক্ষমতা থাকতে হয়। ইংরেজি ও বাংলায় কথা বলা ও লেখায় দক্ষ হতে হবে, অন্য ভাষা জানা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে দেখা হয়। সাধারণত বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কেবিন ক্রুর জন্য অবিবাহিতদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
বিমানবালা নিয়োগে কী কী ধরনের পরীক্ষা নেওয়া হয়?
যারা আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন দেখেন, পাখির মতো আকাশে উড়ে বেড়াতে চান, সারা বিশ্বকে খুব কাছ থেকে দেখতে চান, তাদের জন্য কেবিন ক্রুর চাকরি অনেকটা সোনার হরিণের মতো। কেবিন ক্রু হওয়ার জন্য নিজেকে সেভাবে তৈরি করতে হয়। কেবিন ক্রু হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ কয়েকটি শর্ত থাকতেই হবে।
বিমানবালা হতে চাইলে প্রথমেই শিক্ষাগত যোগ্যতা জরুরি। এরপর বয়স, শারীরিক সৌন্দর্য দেখা হয়। লাগে কিছু অতিরিক্ত গুণাবলী। যার মধ্যে আছে আপদকালীন সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের রাখার কৌশল জানা।
বিমানবালা হতে চাইলে হাতে কোনো কাটা দাগ কিংবা শরীরে কোনো ট্যাট্টু থাকতে পারবে না, যা সহজে দেখা যায়। সাঁতার-সাঁতার জানা আবশ্যক। ভাষাজ্ঞান-ইংরেজি ও বাংলায় কথা বলা ও লিখায় দক্ষ হতে হবে।
মোটকথা, বিমানবালা হতে চাইলে যেমন শারীরিক সৌন্দর্য লাগে, তেমনি কিছু বাড়তি যোগ্যতাও লাগে।
এজেড