রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

যাদের জাকাত দিলে আদায় হবে না

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

যাদের জাকাত দিলে আদায় হবে না

জাকাত ফরজ ইবাদত এবং ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। পবিত্র কোরআনে যেখানে নামাজের কথা এসেছে, সেখানেই দেখা যায় জাকাতের কথা। সুরা বাকারার এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, সালাত প্রতিষ্ঠা করেছে এবং জাকাত দিয়েছে, তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের নিকট। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৭৭)

যাদের জাকাত দেওয়া যাবে, পবিত্র কোরআনে তাদের পরিচয় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই জাকাত ফকির, মিসকিন ও সেসব কর্মচারীর জন্য, যারা সদকা উসুলের কাজে নিয়োজিত এবং যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য। আর দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধ, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের (সাহায্যের) জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবা: ৬০)


বিজ্ঞাপন


আলোচ্য আয়াতে আটটি খাতে জাকাতের অর্থ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খাতগুলো হলো—
১. ফকির। বাংলায় তাদেরকে গরিব বলা হয়।
২. মিসকিন। যাদের আর্থিক অবস্থা গরিবদের চেয়েও খারাপ। এক কথায় যার মালিকানায় কোনো ধরনের সম্পদ নেই।
৩. আমেল। জাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি। তবে বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জাকাত সংগ্রহে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কমিশন হারে জাকাত থেকে বিনিময় দেওয়া কোনোভাবেই শরিয়তসম্মত নয়।
৪. মন জয় করার জন্য। ইসলামের বিরোধিতা বন্ধ করা বা সহায়তার লক্ষ্যে কারও মন জয় করার জন্য। বর্তমানে এই খাতের খুব একটা প্রয়োজন নেই।  ওমর (রা.)-এর শাসনামলে ইসলামের বহুমুখী প্রসার, ইসলামী রাষ্ট্রের সম্প্রসারণ ও মুসলমানদের ব্যাপক শক্তি অর্জিত হওয়ার পর অমুসলিমদের জাকাত দেওয়ার বিধান রহিত হয়ে যায়। ওই সময়ে সব সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এই সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেন। তবে নও-মুসলিমদের সমস্যা দূর করার জন্য জাকাত তহবিল থেকে অর্থ ব্যয় করা যাবে।
৫. দাসমুক্তি তথা দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ লোক। বর্তমানে এই খাতও বিদ্যমান নেই। তবে ইসলামের জন্য বন্দিদের মুক্ত করাতে তাদের জন্য জাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে।
৬. ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধে জাকাত দেওয়া যাবে। যার ঋণ আদায় করার পর তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকে না।
৭. আল্লাহর পথে ব্যয়। কোরআনের ভাষায় এ খাতের নাম বলা হয়েছে ‘ফি সাবিলিল্লাহ’, যার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর পথে। মুসলমানদের সব নেক কাজ আল্লাহর পথেরই কাজ। সুতরাং যেসব মুসলমান আল্লাহর পথে আছে তাদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ-সম্পদ না থাকলে তাদের জাকাত দেওয়া যাবে। তবে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম ও ইমামের মতে, ‘আল্লাহর রাস্তা’ বলতে এখানে আল্লাহর পথে যুদ্ধরত ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে।
৮. মুসাফির। মুসাফির বা প্রবাসী লোকের বাড়িতে যত ধন-সম্পত্তিই থাকুক না কেন, পথে বা প্রবাসে সে যদি অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ে তাহলে তাকে জাকাত তহবিল হতে প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়া যাবে। 

এই খাতগুলো ছাড়া অন্য কোনো খাতে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না—সেটি যতই ভালো কাজ হোক না কেন।

আরও পড়ুন
কিছু স্বর্ণ কিছু রুপা থাকলে কোন হিসাবে জাকাত দেবেন?
আপন বোনকে জাকাত দেওয়া যাবে?
যেসব সম্পদের জাকাত দেওয়া ফরজ

যাদের জাকাত দেওয়া যাবে না
১) কাফির
২) নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক। 
৩) নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের নাবালক সন্তান। 
৪) বনু হাশেমের লোক। 
৫)  মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি—এভাবে ওপরের স্তরের কাউকে জাকাত দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ যাদের মাধ্যমে দুনিয়ায় এসেছে, তাদেরসহ ওপরের স্তরের কাউকে জাকাত দেওয়া যাবে না। 
৬) নিজের মাধ্যমে যারা দুনিয়ায় এসেছে, অর্থাৎ ছেলে-মেয়ে ও তাদের সন্তানাদি একইভাবে তাদের সন্তানদেরও জাকাত দেওয়া যাবে না। 
৭) স্ত্রী ও স্বামী একে অন্যকে জাকাত দিতে পারবে না। 
৮) মসজিদ-মাদরাসা, পুল, রাস্তা, হাসপাতাল বানানোর কাজে ও মৃতের দাফনের কাজে জাকাতের টাকা দেওয়া যাবে না। 
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৮৮, ১৮৯; তাতারখানিয়া: ৩/২০৬; আদদুররুল মুখতার: ৩/২৯৪, ২৯৫)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন
মোবাইল ব্যালেন্সের জাকাত দিতে হবে কি?
যেসব সম্পদের জাকাত দিতে হবে না
পাওনা টাকা আদায়ে শঙ্কা থাকলে জাকাত দিতে হবে?

জাকাত গরিবের ব্যক্তিমালিকানায় দেওয়া জরুরি
জাকাতের অর্থ শুধু গরিবদের ব্যক্তিমালিকানায় দিয়ে দিলেই জাকাত আদায় হয়। সুতরাং মসজিদ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, কালভার্ট ও হাসপাতাল নির্মাণের ক্ষেত্রে জাকাতের অর্থ খরচ করা যাবে না। কারণ এসব ক্ষেত্রে জাকাতের অর্থ ব্যয় ব্যক্তিবিশেষকে মালিক বানিয়ে দেওয়া হয় না। (তাতারখানিয়া: ৩/১৯৮, ২০৮; দুররুল মুখতার: ৩/১৭১-১৭৩)

ভাই-বোন, চাচা-খালা, মামা-মাকে জাকাত দেওয়া যাবে
ইসলামি শরিয়তে ভাই, বোন, চাচা, ফুফু, মামা, মামিসহ এজাতীয় সব দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনকে জাকাত দিতে আপত্তি নেই। বরং তাদেরকে জাকাত দেওয়া অন্য কাউকে দেওয়ার চেয়ে উত্তম। কেননা এতে সদকা ও আত্মীয়তার হক একসঙ্গে আদায় হয়। এর দলিল হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ বলেছেন— الصَّدَقَةَ في الْمِسْكِينِ صَدَقَةٌ وفي ذِي الرَّحِمِ صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ অর্থ: মিসকিনকে জাকাত দেওয়া সদকা; আর আত্মীয়কে দেওয়া সদকা ও আত্মীয়তার হক আদায়।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৫৭৯৪ সুনানে নাসায়ি: ২৫৮২)

জাকাতের টাকা দিয়ে কাপড় কিনে দিলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে। অন্তরে জাকাতের নিয়ত রেখে মুখে তা উল্লেখ না করে দিয়ে দিলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে। (হেদায়া: ১/২০৬, বাদায়ে: ২/৪৯) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে জাকাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর