শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রমজানে কবর আজাব কি মাফ থাকে?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৩, ০২:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

রমজানে কবর আজাব কি মাফ থাকে?

মাহে রমজান মাগফেরাতের মাস। রহমত ও নাজাতের মাস। এই মাসের অনেক ফজিলত এবং রোজাদারের অনন্য মর্যাদার আলোচনা এসেছে কোরআন ও হাদিসে। কিন্তু রমজান মাসে কবরের আজাব মাফ থাকে—এ ধারণা সঠিক নয়। কোরআন-হাদিসে এ ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য নেই।

তেমনিভাবে কিছু মানুষকে একথাও বলতে শোনা যায় যে, ‘দাফনের পর জুমা বা রমজান শুরু হলে কেয়ামত পর্যন্ত কবরের আজাব মাফ হয়ে যায়!’ এই কথারও ভিত্তি নেই। 


বিজ্ঞাপন


মূলত কবর আজাব হওয়া বা না-হওয়ার সঙ্গে রমজানের সম্পর্ক নেই। বরং বান্দার নেক আমল, ঈমানের বিশুদ্ধতা ও গুনাহ না করার সঙ্গে এর সম্পর্ক। 

গিবত-পরনিন্দা, প্রস্রাব থেকে পরিচ্ছন্ন না হওয়া, অন্যের দোষ খোঁজা, সম্পদ হরণ, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা ও প্রাপ্য থেকে অন্যকে বঞ্চিত করা, কোরআন-হাদিস অস্বীকার করা, কোরআন তেলাওয়াত বা অধ্যয়ন না করা, ফরজ নামাজ না পড়ে ইচ্ছাকৃত ঘুমানো, মিথ্যা বলা, সুদ খাওয়া ও জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া কবর আজাবের অন্যতম কারণ। (ড. আবদুল্লাহ ইবনে হামুদ আল-ফারিহ; মিন আসবাবি আজাবিল কাবরি মাআদ দলিল, শাবকাতুল আলুকাহ: ০৪-১১-২০১৮)

আরও পড়ুন: সুন্দর মৃত্যুর ১০ আমল

‘তাওহিদ-বিশ্বাস, তাকওয়ায় অটলতা, আল্লাহর রাস্তায় গমন ও শাহাদাত বরণ, ইসলামি রাষ্ট্রের পাহারা দেওয়া, নিয়মিত সুরা মুলক পাঠ এবং সময়োপযোগী আমল-ইবাদত ইত্যাদি কবর আজাব থেকে রক্ষা করে।’ (ড. খালিদ রাতিব, আল-আসবাব আল-মুনজিয়া মিন আজাবিল কবর; শাবকাতুল আলুকাহ: ০৪-১১-২০১৮)

তাই বান্দার উচিত ওই সকল আমল থেকে বিরত থাকা, যার কারণে কবরের আজাব হয় এবং ওই সকল আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া, যার মাধ্যমে কবরের আজাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

তবে হ্যাঁ, রোজা অবস্থায় মৃত্যু হলে তার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন রোজা রাখে এবং এই রোজাই তার জীবনের শেষ আমল হয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৩২৪; বায়হাকি: ৬৫১; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১১৯৩৫)

অর্থাৎ রোজা অবস্থায় ইন্তেকাল করলে আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন—সেই আশা করা যায়, কিন্তু রমজানে কবরের আজাব মাফ থাকে—এমন কথা পাওয়া যায় না। তাই এই কথাটি বলাও উচিত নয়।

সম্ভবত একটি হাদিস থেকে এই অনুমানটি করে থাকে মানুষ। হাদিসটি হলো—‘যখন রমজানের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জ্বিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, (সারা মাস) একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, (সারা মাস) একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে- হে কল্যাণের প্রত্যাশী! আরো অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের যাত্রী! ক্ষান্ত হও। আর আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন।’ (ইবনে মাজাহ: ১৬৪২; সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১৮৮৩; মুসতাদরাক হাকেম: ১৫৩২)

এ বর্ণনায় ‘জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়’- এখান থেকে হয়ত এ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, তাহলে বুঝি কবরের আজাবও বন্ধ থাকে। এটি যেহেতু সঠিক বক্তব্য নয়, এ ধরণের কথা ও প্রচারণা থেকে সাবধান হওয়া জরুরি।

তবে, কোনো মুসলিম ভাইয়ের মৃত্যু হলে তাকে কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে দোষ নেই। তাই আমরা মৃত ভাই-বোনদের জন্য দোয়া করব— আল্লাহ যেন তাদের সব গুনাহ মাফ করে দেন, কবর আজাব থেকে রক্ষা করেন, সর্বোপরি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করান। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিন। কবরের আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো আমল করার তাওফিক দিন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর