তালাক আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। এতে যে শুধু একটি সম্পর্ক ভেঙে যায় তা নয়, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সন্তানের ওপর; দুই পক্ষের আত্মীয় স্বজনদের ওপর। তালাক শব্দটা উচ্চারণ করাও বিপজ্জনক। ইসলামি শরিয়ত তালাকের চিন্তা করতেও নিরুৎসাহিত করে।
কেননা তালাক শব্দের খামখেয়ালি উচ্চারণ মুহূর্তেই একটি পবিত্র সম্পর্ককে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে। পরে হাজারো অনুশোচনা করলেও পতিত তালাক মুছে ফেলা যায় না। ধরেন, রাগের বশে কেউ একসঙ্গে তিন তালাক দিয়ে দিল, রাগ প্রশমিত হওয়ার পর অনুতপ্ত হলেও কিংবা তালাকের ইচ্ছা ছিল না, রাগের মাথায় বলেছি—এসব বললেও তালাক তুলে ফেলা যাবে না। কারণ সুস্পষ্ট তালাক পতিত হওয়ার জন্য নিয়তের প্রয়োজন নেই। ফতোয়ার কিতাবে এসেছে, ‘রাগের অবস্থায় তালাক দিলেও তালাক হয়ে যায়’ (আদ্দুররুল মুখতার: ৪/৪৫২)। ইবনু হাজার আসকালানি (রহ) বলেন, ‘সাধারণত মানুষ রাগান্বিত হয়েই তালাক দেয়।’ (ফাতহুল বারি: ১০/৪৮৯)
বিজ্ঞাপন
এমনকি হাস্যরস বা ঠাট্টাচ্ছলে তালাক দিলেও তা পতিত হয়ে যায়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তিন জিনিস ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছাকৃত বলেই গণ্য হবে। বিবাহ, তালাক ও রজয়িপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা।’ (আবু দাউদ: ২১৯৪)
আরও পড়ুন: ‘তোমাকে তালাক দিলাম’ বললে কয় তালাক হবে?
এখানে রজয়িপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা বলতে সেই প্রকারের তালাকের কথা বলা হচ্ছে, যেভাবে (যথাযথ পদ্ধতিতে) তালাক দিলে ইদ্দতের মধ্যে স্ত্রীকে বোঝাপড়ার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা যায়। কিন্তু একসঙ্গে তিন তালাক দিলে সেই সুযোগ থাকে না এবং ইদ্দতের পরেও নতুনভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সুযোগ থাকে না। একে অন্যের জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যায়। এমতাবস্থায় আপসের জন্য আগ্রহী হলেও তা কাজে আসে না।
তাই একসঙ্গে তিন তালাক দেওয়া ইসলামি শরিয়তে নিকৃষ্ট বিষয়। আল্লাহ তাআলা এর শাস্তি হিসেবে এই বিধান দিয়েছেন যে, তারা পুনরায় একসাথে বসবাস করতে চাইলে স্ত্রীর ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর অন্যত্র তার বিয়ে হওয়া এবং পরবর্তী স্বামীর সঙ্গে তার মিলন হওয়া অপরিহার্য। এরপর কোনো কারণে সে তালাকপ্রাপ্তা হলে কিংবা ওই স্বামীর মৃত্যু হলে ইদ্দত পালনের পর এরা দুজন নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। (সুরা বাকারা: ২৩০)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: স্ত্রী স্বামীকে তিন তালাক দিলে শরিয়তের বিধান কী
বুঝা গেলো- তালাক খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। তালাক শব্দ উচ্চারণ করাটাই আত্মঘাতী। এ কারণেই বিয়ের আগে তালাকের মাসয়ালা ভালোভাবে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন আলেমরা। বাস্তবেই যদি তালাক শব্দের অনাকাঙ্ক্ষিকত উচ্চারণে একটি বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়, এরপর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসঙ্গে বসবাস করে, এর অর্থ হলো- তারা জঘন্য ব্যভিচারে লিপ্ত।
উল্লেখ্য, তালাক ইসলামে অপছন্দনীয় জায়েজ বিষয়। তালাকের বিধান না থাকলে নারীরা বা পুরুষেরা জুলুমের শিকার হত, শধুমাত্র এই হেকমতেই তা বৈধ রাখা হয়েছে। কিন্তু এর মাসয়ালাগুলো জেনে নেওয়া জরুরি। না জানা পর্যন্ত অন্তত তালাক শব্দের উচ্চারণ কিংবা তালাকের চিন্তা থেকেও বিরত থাকা চাই। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তালাকের মাসয়ালা জানার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মানার তাওফিক দান করুন। আমিন।