আয়-রোজগার ভালো হওয়া সত্ত্বেও অনেকের অভাব দূর হয় না। মূলত কিছু গুনাহে লেগে থাকা ও শুকরিয়া না থাকার কারণে সম্পদের বরকত নষ্ট হয়ে যায়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বরকতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কোনো জিনিসে আল্লাহর কল্যাণ নিহিত থাকাকে এক কথায় বরকত বলা হয়। নিচে সম্পদের বরকত কমে যাওয়ার কারণগুলো তুলে ধরা হলো।
শুকরিয়া আদায় না করা: মহান আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে বরকত ও কল্যাণ লাভ করা যায় না। উপরন্তু শাস্তির হুঁশিয়ারি রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তা হলে আমি অবশ্যই তোমাদের বেশি বেশি করে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে (মনে রেখো) নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)
বিজ্ঞাপন
পাপাচার: পাপাচারের কারণে যেমন আজাব-গজব নাজিল হয়, তেমনি জীবিকার বরকতও দূরীভূত হয়ে যায়। (সুরা আরাফ: ৯৬)
অন্যায় পথে সম্পদ আহরণ: হারাম উপায়ে সম্পদ অর্জন করলে তার বরকত দূরীভূত হয়ে যায়। রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে তাকে বরকত দান করা হয়। আর যে ব্যক্তি অসংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে সে এমন ব্যক্তির মতো যে আহার করে, কিন্তু তৃপ্ত হয় না।’ (মুসলিম: ১০৫২)
প্রতারণা ও ধোঁকা: প্রতারণা ও ধোঁকার কারণে সম্পদের বরকত চলে যায়। (বুখারি: ২০৭৯)
অধিক কসম খাওয়া: প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে অধিক কসম খাওয়া উচিত নয়। এটি বরকত ধ্বংস করে। (মুসলিম, মেশকাত: ২৭৯৩)
বিজ্ঞাপন
সুদের আদান-প্রদান: সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মানুষ সুদ গ্রহণ করে, অথচ সুদের আদান-প্রদানে জীবিকার বরকত দূর হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিঃশেষ করেন ও সদকায় প্রবৃদ্ধি দান করেন...।’ (সুরা বাকারা: ২৭৬)
কৃপণতা: কৃপণতা মানুষকে পাপাচারে লিপ্ত করে, যা ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ। (আবু দাউদ: ১৬৯৮)
সন্তুষ্ট না থাকা: আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য রিজিক বণ্টন করে থাকেন। মানুষ সেই রিজিকের ওপর সন্তুষ্ট থাকলে তার জীবিকায় বরকত লাভ হয়। পক্ষান্তরে ওই রিজিকের ওপর সন্তুষ্ট না হলে জীবিকার বরকত চলে যায়। (মুসনাদে আহমদ: ২০২৭৯)
অপচয় ও অপব্যয়: বাজে কাজে বা অপ্রয়োজনে খরচ করা হচ্ছে অপব্যয়। এটি নিন্দনীয়। অপব্যয়কারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না। সুতরাং এটিও বরকত কমে যাওয়ার কারণ। (সুরা আরাফ: ৩১)
জাকাত না দেওয়া: সম্পদের হক হচ্ছে জাকাত প্রদান করা। এ হক প্রদান করলে সম্পদে বরকত হয়, অন্যথায় বরকত দূরীভূত হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, জাকাত আদায় করা ফরজ। রাসুল (স.) বলেন, ‘যখন কোনো জাতি জাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি ভূপৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকত তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না।’ (ইবনে মাজাহ: ৪০১৯)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবিকায় বরকত বৃদ্ধি এবং তা অব্যাহত থাকার জন্য উপরোক্ত কাজগুলো পরিহার করার তাওফিক দান করুন। প্রত্যেক কাজ, সম্পদ ও রিজিকে বরকত দান করুন। আমিন।