ওমরা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ওমরা শব্দের অর্থ জিয়ারত করা, পরিদর্শন করা ও সাক্ষাৎ করা। হজের সময় ছাড়া অন্য যেকোনো সময় পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফসহ নির্দিষ্ট কিছু কাজ করাকে ওমরা বলে। ওমরার জন্য নির্দিষ্ট সময় নেই। শুধু হজের মৌসুমে বা জিলহজ মাসের ৯-১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঁচ দিন ওমরা করা মাকরুহ।
ওমরা পালন সুন্নত। সামর্থ্য থাকলে জীবনে একবার ওমরা করা সুন্নতে মোয়াক্কাদা। এটি পুরুষ ও মহিলা সবার জন্য প্রযোজ্য। তবে, একাধিক ওমরা করলেও সমস্যা নেই। এক সফরেই একাধিক ওমরা করা যাবে। তবে শর্ত হলো, প্রত্যেক ওমরার জন্য হারামের বাইরে গিয়ে নতুন ইহরাম বাঁধতে হবে।
বিজ্ঞাপন
হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, তোমরা ধারাবাহিক হজ ও ওমরা আদায় করতে থাকো। এ দুটি আমল দারিদ্র্য ও গুনাহ বিদূরিত করে দেয় যেমন—ভাটার আগুনে লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা-জং দূরীভূত হয়ে থাকে। (তিরমিজি: ৮১০)
অন্য হাদিসে নবী কারিম (স.) ইরশাদ করেন, ‘এক ওমরার পর আরেক ওমরা, উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারা। আর জান্নাতই হজে মাবরুরের একমাত্র প্রতিদান।’ (সহিহ মুসলিম: ১৩৪৯) হজরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- ‘হজ ও ওমরাকারীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা দোয়া করলে তাদের দোয়া কবুল করা হয় এবং তারা কিছু চাইলে তাদেরকে তা দেওয়া হয়।’ (মুসনাদে বাজজার: ১১৫৩; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৫২৮৮; তবারানি: ১৭২১)
আরও পড়ুন: হজে গিয়ে যেসব কাজ করার চিন্তাও করবেন না
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হজ ও ওমরাকারীগণ যখন দোয়া করে, তাদের দোয়া কবুল করা হয়। তারা যখন কারো জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে তাদেরকে ক্ষমা করা হয়। (ইবনে মাজাহ: ২৮৯২; নাসায়ি: ৫/১১৩)
বিজ্ঞাপন
অতএব, ওমরা যত করা যায়, ততই ভালো। আবার বেশি বেশি কাবা তাওয়াফ করাও উত্তম আমল। তাওয়াফ শব্দের অর্থ ঘোরা বা প্রদক্ষিণ করা। পরিভাষায় তাওয়াফের নিয়তে পবিত্র কাবাঘরের হাজরে আসওয়াদের কোনা থেকে শুরু করে চারপাশে সাত বার ঘোরাকে তাওয়াফ বলা হয়। তাওয়াফ হজ ও ওমরার অপরিহার্য আমল।
পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে মহান আল্লাহ পবিত্র ঘরের তাওয়াফের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন—সুরা হজের একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারপর তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে এবং তাদের মানত পূর্ণ করে ও তাওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের।’ (সুরা হজ: ২৯)
এখানে প্রাচীন ঘর বলতে পবিত্র কাবাঘরের কথা বলা হয়েছে। কাবাঘরের তাওয়াফ এতটাই ফজিলতপূর্ণ ইবাদত যে, একে নামাজের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে কোরআনে। ইরশাদ হয়েছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে তোমারা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।’ (সুরা বাকারা: ১২৫)
আরও পড়ুন: তাওয়াফের সময় পিরিয়ড শুরু হলে করণীয়
এই আয়াতে মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম তাওয়াফকারীদের কথা উল্লেখ করেছেন। একইভাবে সুরা হজেও মহান আল্লাহ তাওয়াফকারীদের কথা সর্বপ্রথম উল্লেখ করে বলেন, ‘আর আমার ঘরকে পবিত্র রাখবে তাওয়াফকারী, নামাজ কায়েমকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য।’ (সুরা হজ: ২৬)
তাই তাওয়াফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। তাওয়াফের ফজিলত সম্পের্ক আবদুল্লাহ ইবন ওমর (রা.) হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করল এবং দু’রাক’আত সালাত পড়ল, সে একটি ক্রিতদাস মুক্ত করার সমতুল্য সওয়াব পাবে।’ (ইবন মাজাহ: ২৯৫৬) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি যখন বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলে, পাপ থেকে এমনভাবে বের হয়ে গেলে যেমন আজই তোমার মাতা তোমাকে জন্ম দিল।’ (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ৯১১০)
হাদিসে আরও এসেছে, যখনই কোনো ব্যক্তি তাওয়াফ করতে গিয়ে এক পা রাখে এবং অপর পা তোলে আল্লাহ তখন তার একটি করে গুনাহ মাফ করে দেন এবং একটি করে সওয়াব লিখে দেন। (তিরমিজি: ৯৫৯)
অতএব, একই সফরে যার ইচ্ছা সে একাধিক ওমরা করবে অথবা যার ইচ্ছা বেশি বেশি তাওয়াফ করবে। দু’টি আমলের আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ওমরা করার তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি কাবাঘরের তাওয়াফ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

