মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম আমল হলো পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফ। এই আমল ছাড়া হজ-ওমরা শুদ্ধ হয় না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারপর তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে এবং তাদের মানত পূর্ণ করে ও তাওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের।’ (সুরা হজ: ২৯) এখানে প্রাচীন গৃহ বলতে পবিত্র কাবাঘরের কথা বলা হয়েছে। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে তোমারা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।’ (সুরা বাকারা: ১২৫)
নারীদের তাওয়াফ করার আদব হলো দ্রুত গতিতে না হাঁটা, বরং সাধারণ গতিতে হাঁটা। এছাড়া চেহারার পর্দা রক্ষা করা জরুরি। যদিও তাওয়াফের সময় মুখে কাপড় লেগে থাকতে পারবে না। দুইটার ওপর যেন আমল হয় সেটা খেয়াল রাখবেন। প্রয়োজনে ক্যাপ পরবেন। বাতাসে কিংবা চলাফেরার সময় নেকাবের কাপড় চেহারায় লেগে গেলে সমস্যা নেই। মাসয়ালা হলো- অল্প সময় মুখে কাপড় লাগলে কোনো অসুবিধা হয় না। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে হজের ইহরাম অবস্থায় ছিলাম। হাজিদের কাফেলা যখন আমাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করত তখন আমরা মাথা থেকে চেহারার উপর চাদর ঝুলিয়ে দিতাম। যখন তারা আমাদেরকে অতিক্রম করে যেত তখন চাদর সরিয়ে ফেলতাম।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১/২৫৪, হাদিস নং-১৮৩৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: নারীরা কি স্বামীর টাকায় ফরজ হজ করতে পারবেন?
নারীর স্রাব চলা অবস্থায় তাওয়াফ করা নিষেধ। তাই পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। (সহিহ বুখারি: ১/২২৩) তাওয়াফ করা অবস্থায় হায়েজ শুরু হয়ে গেলে তাওয়াফ বন্ধ করে মসজিদের বাইরে (বাসায় বা হোটেলে) চলে যাওয়া জরুরি। সেক্ষেত্রে তিন চক্কর বা তার চেয়ে কম হয়ে থাকলে পবিত্র হওয়ার পর নতুন করে তাওয়াফ শুরু করবে। চার বা চারের অধিক চক্কর হয়ে থাকলে তাওয়াফের ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়। তাই পবিত্র হওয়ার পরে বাকীগুলো পুরা করা উত্তম, জরুরি নয়। (কিতাবুল মাসাইল: ৩/৪০৩)
আর তাওয়াফ শুরুর আগেই ঋতুস্রাব শুরু হলে শুধু তাওয়াফ ও সাঈ ব্যতীত অন্য সব আমল সম্পাদন করতে পারবে, হজ শেষ করে স্রাব বন্ধ হওয়ার অপেক্ষা করবে, অতঃপর বন্ধ হলে তাওয়াফ ও সাঈ করে হজ শেষ করবে। (আল মাবসুত: ৪/১৭৯)
হায়েজ বা নেফাস অবস্থায় থাকার কারণে তাওয়াফে জেয়ারত করতে না পারলে, আর তার দেশে ফেরার সময় হয়ে যায়, কোনোভাবেই তা বাতিল করা বা বিলম্ব করা সম্ভব না হয় তবে এই অপারগতার কারণে সে এ অবস্থাতেই তাওয়াফ করবে। আর এজন্য একটি উট বা গরু জবাই করবে। সাথে আল্লাহর দরবারে ইস্তেগফারও করবে। মোটকথা কোনো অবস্থাতেই তাওয়াফে জিয়ারত না করে দেশে যাবে না। অন্যথায় তাকে আবার মক্কায় এসে তাওয়াফ করতে হবে। যতদিন তাওয়াফ না করবে ততদিন স্বামীর সাথে থাকতে পারবে না। (রদ্দুল মুহতার: ২/৫১৮-৫১৯; মাআরিফুস সুনান: ৬/৩৫৭-৩৫৮)
বিজ্ঞাপন
হায়েজ বন্ধ হওয়ার আগেই ফেরত ফ্লাইটের তারিখ হয়ে গেলে ওষুধ খেয়ে হায়েজ বন্ধ করে তাওয়াফ করা যাবে। যদি শুরু থেকেই ওষুধ-বড়ি খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ রেখে কেউ হজের সমস্ত কাজ করেন, তাতেও শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো আপত্তি নেই। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৫/৪৯১; তাতারখানিয়া: ২/৪৭১ ফাতহুল কাদির: ২/৩৩৭ রহিমিয়া: ৮/৮৭)

