সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ব্যানার-ফেস্টুন-স্লোগানে নতুন সংযোজন ডা. জুবাইদা!

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬ মে ২০২৫, ০১:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

ব্যানার-ফেস্টুন-স্লোগানে নতুন সংযোজন ডা. জুবাইদা!

রাজনৈতিক পরিবারে দিন কাটলেও দীর্ঘসময়ে কখনো রাজনীতিতে সক্রিয়তা দেখা যায়নি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানকে। বিএনপি, অঙ্গ সংগঠন কিংবা বিএনপিপন্থী কোনো সংগঠনের পদ পদবীতেও ছিলেন না এতদিন। দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনে সময় দিয়েছেন পরিবারকে।

অবশ্য মাঝে আলোচনা শুরু হয়, দেশে ফিরলে কি রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন জুবাইদা রহমান? এ নিয়ে জিয়া পরিবার থেকে তেমন কিছু পরিষ্কার না করা হলেও নেতাকর্মীরা ঠিকই তাকে সামনে নিয়ে আসছেন!


বিজ্ঞাপন


বিশেষ করে নির্বাসিত জীবন শেষে মঙ্গলবার (০৬ মে) দেশে ফেরার পর অভ্যর্থনা জানাতে সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক এবং শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে অবস্থান নেওয়া নেতাকর্মীদের ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে জুবাইদার রহমানের ছবিও শোভা পাচ্ছিল। ১৭ বছরের 'নির্বাসিত জীবন শেষে' জুবাইদার আগমনকেও বিশেষভাবে উদযাপন করছেন নেতাকর্মীরা।

এতদিন বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুনে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি শোভা পেত। তাদের নামেই স্লোগান দেয়া হত। কিন্তু এবার জুবাইদা রহমানের দেশে ফেরাকে ঘিরে এতে নতুন সংযোজন করেছেন নেতাকর্মীরা। তার নামেও দিয়েছেন স্লোগান।

494819448_583573607511152_8704615967173025263_n

গত নভেম্বরে প্রয়াত শ্বশুর সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নামে গড়া সংগঠনে পদ দেওয়া হয়েছে জুবাইদা রহমানকে। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) পরিচালনা পর্ষদ (বোর্ড অব ডাইরেক্টরস) গঠন করা হয়েছে। এতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. জুবাইদা রহমান। ডিরেক্টর হিসেবে আছেন মেয়ে জাইমা রহমানও। শুধু তাই নয়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল কিছু অনুষ্ঠানে স্বামী তারেক রহমানের পাশে দেখা গেছে তাকে। বক্তব্যও রেখেছেন এই চিকিৎসক।


বিজ্ঞাপন


২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন জুবাইদা। এরপর একে একে ১৭টি বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে চিকিৎসা শেষে বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরেছেন। সঙ্গে এসেছেন জুবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান।

494831784_3613009565666671_2836285734445023312_n

এদিকে স্বামী তারেক রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমানকে রেখে জুবাইদা রহমান দেশে ফেরার পর রাজনীতিতে সময় দেবেন কি না তা একান্তই পরিবারের বলে মনে করেন দলটির নেতারা। রাজনীতিতে সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথিও সক্রিয় হতে পারেন এমন গুঞ্জনও আছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, জিয়া পরিবারের সদস্য হিসেবে তারেক রহমানই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। সেখানে নতুন করে কাউকে সামনে আনা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে তা ভেবে দেখা উচিত।

তবে দেশকে একাধিকবার পরিচালনা করা দলের প্রধানের পরিবারে থেকে যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা পেয়েছেন, পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষিত, নারী হিসেবে জুবাইদা নেতাকর্মীদের বাইরেও গ্রহণযোগ্যতা পাবেন। যা বিএনপির রাজনীতির জন্যও বাড়তি সুবিধা বয়ে নিয়ে আসতে পারে মনে করেন কেউ কেউ।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, ‘যেহেতু তারা রাজনৈতিক পরিবারের, সে কারণে সম্ভাবনা থাকে। তবে আমার কাছে মনে হয় না এই মুহূর্তে তাদের দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া উচিত হবে। কারণ জিয়াউর রহমানের উত্তরসূরি হিসেবে সবাই তারেক রহমানকে মেনে নেবে। কিন্তু শেখ হাসিনা যেভাবে প্রত্যেকটা জায়গায় পারিবার তন্ত্র কায়েম করেছেন, সেই উদাহরণ থেকে কিছু মানুষ হয়তো বিষয়টা ভালোভাবে নেবে না। এ কারণে মনে হয় তাদের এই মুহূর্তে সক্রিয় হওয়া উচিত হবে না।’

jubaida-rahman
শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণের পর এয়ার অ্যাম্বুলেন্স থেকে বের হচ্ছেন ডা. জুবাইদা রহমান। ছবি: সংগৃহীত

আর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা তাদের রয়েছে। তবে এটা তাদের পারিবারিক সিদ্ধান্তের বিষয়। খালেদা জিয়ারও রাজনীতিতে আসার কথা ছিল না। কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতিতে তিনি দল ও দেশের হাল ধরেছেন। বাংলাদেশে এখনো তো নেতৃত্বশূন্যতা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওনারা যদি পারিবারিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এগিয়ে আসেন তাহলে নেতাকর্মীরা আনন্দিত হবেন। বিষয়টি জানার জন্য কর্মীদের অধীর আগ্রহ রয়েছে।’

এক নজরে জুবাইদা রহমান

সিলেটে জন্ম নেওয়া জুবাইদা ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করে ১৯৯৫ সালে বিসিএস পরীক্ষায় স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার করে সরকারি চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডন যাওয়া পর সরকার তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। পরে তিনি সেখানকার ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি ডিগ্রি নেন।

সিলেটে জন্ম নেয়া জুবাইদার বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান ১৯৭৮ সালের ৪ নভেম্বর থেকে ১৯৮৪ সালের ৬ অগাস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। এরপর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের সময়ে তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জুবাইদা রহমানের চাচা।

494857294_1063523385648904_921505744414584127_n
মেয়ে জাইমা রহমান ও স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে ডা. জুবাইদা রহমান।

ওয়ান ইলেভেনের পর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। ওই মামলায় জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয় ঢাকার একটি আদালত।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জুবাইদার ওই সাজা স্থগিত করে আদালত।

বিইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর