এনসিপির সমাবেশে হামলা এবং পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জেরে গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করেছে সরকার। বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ৮টা থেকে শুরু হয়েছে ২২ ঘণ্টার সেই কারফিউ। চলবে পরদিন বিকেল ৬টা পর্যন্ত।
বিজ্ঞাপন
এর আগে সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে কারফিউ ঘোষণার বিষয়টি জানানো হয়।

এছাড়া গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘের্ষের ঘটনায় এক বিবৃতিতে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে কঠোরভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
আরও পড়ুন: এনসিপির অবরুদ্ধ নেতাদের দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা নিন: চরমোনাই পীর
বিজ্ঞাপন
বিবৃতিতে বলা হয়, আজ গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতা সম্পূর্ণরূপে অমার্জনীয়। বিপ্লবী আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাওয়া তরুণ নাগরিকদের বাধা দেওয়া তাদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন এবং অত্যন্ত লজ্জাজনক। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর বর্বর হামলা চালানো হয়েছে, তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে এবং অনেককে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে।

আরও বলা হয়, এই নিন্দনীয় কর্মকাণ্ড—যা নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে— কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে কঠোরভাবে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের প্রতি এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জের ঘটনায় কেউ ছাড় পাবে না, সরকারের বিবৃতি
সরকার জানায়, আমরা সেনাবাহিনী ও পুলিশের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের জন্য প্রশংসা জানাই এবং যেসব ছাত্রছাত্রী ও জনগণ এই হুমকি উপেক্ষা করে সমাবেশ চালিয়ে গেছেন, তাদের সাহস ও দৃঢ়তার জন্য অভিনন্দন জানাই। এই নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বিচারের মুখোমুখি হবেন। এটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে: আমাদের দেশে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। ন্যায়বিচার অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে।

এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গোপালগঞ্জ শহরে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জ থেকে খুলনায় এনসিপি নেতারা, আসছেন সংবাদ সম্মেলনে
বুধবার গোপালগঞ্জে ছিল এনসিপির পথসভা। এদিন দুপুর ২টার পর পৌর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চে সভা শুরু হয়। সভা শুরুর আগে বেলা দেড়টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় আয়োজিত সমাবেশের মঞ্চে এক দফা হামলা চালায় সেখানকার আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ।

এই হামলার পরও সমাবেশে যোগ দেন এনসিপির নেতা। এরপর সমাবেশ শেষ হলে ফের তাদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। ভাঙচুর করা হয় নতুন এ দলটির গাড়িবহর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এগিয়ে গেলে তাদের উপরও হামলা হয়।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জ নিয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জামায়াত আমিরের
এদিন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে হঠাৎ করে মিছিল নিয়ে এসে মঞ্চে চড়াও হয়। এসময় সাউন্ড বক্স, মাইক ও চেয়ার ভাঙচুর করার পাশাপাশি এনসিপির উপস্থিত নেতাকর্মীদেরও মারধর করে তারা। পরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন এনসিপির নেতারা।

এনসিপির সমাবেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের এই হামলার প্রতিবাদে বিকেলে ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে সারাদেশে ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। যদিও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের আহ্বানে পরে তা স্থগিত করা হয়।
আরও পড়ুন: বেঁচে ফিরতে পারলে মুজিববাদের কবর রচনা করবই: সারজিস
অন্যদিকে হামলার ঘটনার পর কড়া হুঁশিয়ারি দেন জুলাই বিপ্লবী ও এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম। বিকেল সোয়া তিনটার দিকে ফেসবুকে তিনি লেখেন, তারা যদি গোপালগঞ্জ থেকে বেঁচে ফেরেন, তবে মুজিববাদের কবর রচনা করে ছাড়বেন।

এদিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। উভয় নেতা এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা কত?
এছাড়া এই হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আলাদা বিবৃতি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিও জানিয়েছে দলটি। পাশাপাশি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরও কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের গ্রেফতার চেয়েছেন।
এএইচ










































