শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

তিন মাস জেল খাটেন সাইফুল, পরিবার খোঁজ পায় এক মাস পর

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০৫ মে ২০২৫, ১০:৫৯ এএম

শেয়ার করুন:

তিন মাস জেল খাটেন সাইফুল, পরিবার খোঁজ পায় এক মাস পর

সাইফুল ইসলাম ২০১৩ সালে ৩ মে ঢাকা এসেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে তিনিসহ ৫৪ জন যোগ দেবেন। কিন্তু তার আগেই হোটেলে ওঠার ঘণ্টা দেড়েক পরেই তাদেরকে আটক করা হয়। পরদিন বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। তাকে কারাগারে পাঠানো হলেও জানতো না পরিবার। এক মাসের বেশি সময় কোনো খোঁজ না পাওয়ায় সাইফুলের পরিবার ধরেই নিয়েছিল, তিনি আর কখনো বাড়ি ফিরবেন না। কিন্তু এক মাস পর অবশেষে তার কারাগারে থাকার খবর মেলে।

সাইফুলের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মীরেরসরাই উপজেলায়। তিনি এক সময় ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সংগঠনের উচ্চপদে নয়, কর্মী পর্যায়ের ছিলেন। সেই সুবাধে অন্যদের সঙ্গে হেফাজতের সমাবেশে যোগ দিতে আগাম ঢাকায় আসেন তিনি। তিন মাস জেল খাটার পর বাড়িতে ফেরেন। আজও সাইফুল জানেন না তার অপরাধ কি! আর কেন তাকেসহ ৫৪ জনকে গভীর রাতে আবাসিক হোটেল থেকে ধরা হলো। ধরার পর পরিবারকে তাদের বিষয়ে অবগত না করেই পাঠানো হলো কারাগারে। তখন তাদের প্রত্যেকের নামে দুটি করে মামলা দেওয়া হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সেই মামলার ঘানি টেনেছেন। যদিও সেসব মামলা এখন কী করবে বর্তমান সরকার, তা জানেন না তিনি।


বিজ্ঞাপন


সাইফুল সেদিন চট্টগ্রাম থেকে দিনে রওনা হয়ে রাত ১২টায় এসে পৌঁছেন ঢাকার ফকিরাপুলে। এরপর আগে থেকে বুকিং করা হোটেল জোনাকিতে ওঠেন। তার সঙ্গে আসা সবাই একই হোটেলে ওঠেছিল।

সাইফুল জানান, তারা রুমে ওঠার ঘণ্টা দেড়েক পরেই হাজির হয় পুলিশ। এরপর একে একে প্রত্যেকটি রুমে তল্লাশি চালায়। তাদের সবাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই রাত ও পরদিন তাদেরকে থানা হাজতেই রাখা হয়। তখনো বলা হচ্ছিল না কি তাদের অপরাধ আর কি কারণে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে! এরপর ৫ মে তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়। তারা আদালতে ওঠার পর জানতে পারেন তাদের প্রত্যেকের নামে দুটি করে মামলা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলছিলেন, আমরা হোটেলের যাবতীয় ফরমালিটি সেরে ১টায় রুমে ঢুকেছি মাত্র। খাওয়া শেষ করে কেবল তখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন সময় রুমের দরজা ঠকঠক শব্দ। তখন আমার মন বলছিল এই বুঝি পুলিশ আসলো। ঠিকই দরজা খুলে দেখি পুলিশের দুজন সদস্য। একজন বলছিল, এই ব্যাটারা সবাই জামায়াত-শিবির। সবাইকে ধরে নিয়ে আয়। হোটেলে কোনো জামায়াত-শিবির থাকতে দেব না।


বিজ্ঞাপন


সাইফুল বলেন, তখন আমার বৃদ্ধ মা ও আমি সংসারে। বাড়িতেও কেউ নেই। আমার মা তো এক মাস খবরই পায়নি। ধরে নিয়েছিল তার ছেলে আর বাড়িই ফিরবে না। কিন্তু আমার চাচাতো ভাই শফিউল অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারে আমাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রাখা হয়েছে। এরপর তিন মাস জেল খেটে বের হই। আদালতে জামিন নেই। কিন্তু সেদিনের কথা আজও ভুলব না।

তিনি আরও জানান, তাদের ধরে নেওয়ার পর মতিঝিলে আর কি ঘটেছিল জানতে পারেননি। তবে ৫ মে এর হত্যাকাণ্ডের কথা জেনেছিলেন অনেক পরে। জেল থেকে বের হয়ে।

সেই সময় তার সঙ্গে থাকা যাদের ঠিকানায় পুলিশ যেতে সক্ষম হয়েছিল তাদের আত্মীয়স্বজনকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। এমনকি অনেকে ২০১৩ সালের মে মাসের পর বাড়িতেও থাকতে পারেননি।

এমআইকে/এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর