শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

তোয়াক্কা নেই আইনের, ব্যানার-বিলবোর্ডে বিদেশি ভাষার দৌরাত্ম্য!

মাহাবুল ইসলাম, মাল্টিমিডিয়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৩ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img
ব্যানার-বিলবোর্ডে ইংরেজির দাপট। ছবি কোলাজ: ঢাকা মেইল

শত বছর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি, তারপর ইংরেজি শিক্ষার পত্তন।’ এভাবে শুধু তিনিই ইংরেজিকে বাংলার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতাকে ভৎর্সনা করেননি, বর্তমান বাংলা সাহিত্যের লেখক, গবেষক ও সচেতন নাগরিক সমাজও একই কথা বলছেন। যেটিকে অনেকে ‘ভাষা দূষণ’ও বলছেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় ইংরেজির আধিপত্য যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বাংলা শব্দের ভুল প্রয়োগ। আবার ইংরেজি ও বাংলার মিশেলে, বাংলা ভাষা হারাচ্ছে তার গৌরব। ভাষার মাসে বাংলা ভাষার গৌরবকে সমুন্নত রাখতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা।

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও আবাসিক এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ডে ইংরেজি ভাষার দৌরাত্ম্য। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আবাসিক এলাকাগুলোতেও বাড়ির পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছে ইংরেজি ভাষায়। অথচ ২০১৫ সালে একটি রিট আবেদনে দেওয়া রুলের শুনানিতে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজ্ঞাপন বা প্রচারে যেসব ক্ষেত্রে ইংরেজি ব্যবহার প্রয়োজন, সেখানে বাংলার পাশাপাশি সীমিত পরিসরে ইংরেজি ব্যবহার করা যেতে পারে বলে আদেশ দিয়েছিলেন। এছাড়া সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদ এবং বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭-এর ৩ ধারা অনুসারে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে (বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া) চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব এবং অন্যান্য কাজ বাংলা ভাষায় হওয়ার কথা থাকলেও আইনটি অনুসরণ করা হচ্ছে না।


বিজ্ঞাপন


হাইকোর্টের ওই আদেশে বলা হয়, দেশের সব সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বর প্লেট, সরকারি দফতরের নামফলক (দূতাবাস, বিদেশি সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র ছাড়া) এবং গণমাধ্যমে ইংরেজি বিজ্ঞাপন ও মিশ্র ভাষার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

আরও পড়ুন

বাংলা ভাষার বিকৃতি: যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

সামাজিক মাধ্যমে থেমে নেই ভাষার বিকৃতি

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, ইংরেজি নয়; বরং বাংলার ব্যবহার সীমিত হয়েছে। সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানারে অনেকে বাংলার কোনো স্থানই রাখেননি। আবার কেউ কেউ ইংরেজি শব্দকে বড় করে এবং বাংলাকে ছোট করে উপস্থাপন করেছেন।

রাজধানীর ইউনাইডেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থী ফারহানা সাদিকা বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে বিলবোর্ডগুলো দেখতে পাই, সেখানে ইংরেজিতেই বেশি থাকে। অথচ হওয়ার কথা ছিল বিপরীত। আমরা জানি মার্কেটিং পলিসি হলো, মানুষ যেটা পছন্দ করে সেটাকে তুলে ধরা। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ীরা ভাবেন ইংরেজি মানেই স্মার্ট। এটা বন্ধ করা উচিত। কেননা এই বাংলা ভাষার জন্যই আমরা প্রাণ দিয়েছি।


বিজ্ঞাপন


রাজধানী ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক তাসলিমা আকতার। তিনি বলেন, আমরা চলাফেরার পথে যে সাইনবোর্ডগুলো দেখি, সেগুলোতে বেশির ভাগই ইংরেজি থাকে। অথচ আমরা বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এই ভাষার প্রতি আমাদের সম্মান জানানো উচিত। শুধু মুখে বললেই হবে না। আমাদের হৃদয় দিয়ে ধারণ করতে হবে।

লেখক জয়নাল আবেদিন জয় বলেন, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মের মাঝেও এ ভাষার সঠিক চর্চাটা দেখতে চাই। কিন্তু আমরা দেখছি, বাংলা ভাষাকে নানাভাবে ছোট করা হচ্ছে। আমার প্রত্যাশা থাকবে, মায়ের ভাষা হিসেবে এই ভাষার প্রতি যে ভালোবাসা থাকা উচিত সেটা অন্তত থাকবে।

আরও পড়ুন

উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় কতটুকু সম্ভব

শুধু ফেব্রুয়ারি নয়, ভাষার প্রসার হোক বছরব্যাপী

লেখক, কবি ও গবেষক ইমরান মাহফুজ বলেন, ভাষার প্রতি সজাগ দৃষ্টি না থাকা এবং প্রেম ও মমতার অভাবের কারণে এমনটি হচ্ছে। ভাষার শক্তিকে না বোঝার কারণে ভিনদেশি বন্ধুর কাছে আমার ভাষার শক্তির প্রয়োগটা কমে যায়। ভাষা তার নিজস্বতা হারায়। বাংলা ভাষা শুধু আমাদের মাতৃভাষা না, এটা রাষ্ট্রভাষাও। রাষ্ট্রের কর্তাদের উদাসীনতার কারণে এটা অহরহ ঘটছে। অথচ এটা হওয়ার কথা ছিল না।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, বাংলা ভাষা আমাদের প্রাণের ভাষা। দেশে ৪১টি ভাষা আছে। সবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটি জাতিসত্তা বিকাশিত হয় তার আপন মাতৃভাষার মাধ্যমে। ইংরেজি এখন আন্তজার্তিক ভাষা হয়ে উঠেছে। এটা শেখাটা দোষের না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমার অন্তরে থাকতে হবে মাতৃভাষা বাংলা। মানুষ মাতৃভাষা না জানলে অন্য ভাষাও ভালো করে ধারণ করতে পারে না। আইন করে ভাষা টিকিয়ে রাখা যায় না। ভাষার ব্যবহারেই ভাষা টিকে থাকে। সুতরাং ভাষার মাধ্যমেই আমাদের সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

এমআই/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন