প্রচণ্ড গরমে হেঁটে ক্লান্ত, বন্ধুদের সঙ্গে পিৎজা কিংবা বার্গার, পারিবারিক আয়োজন— উপলক্ষ্য যা ই হোক না কেন, সঙ্গে থাকে নানা ফ্লেভারের সফট ড্রিংকস। চটজলদি ঠান্ডা স্বস্তি মেলাতে এর জুড়ি কমই আছে। বিশেষ করে তরুণরা হরহামেশাই কোমল পানীয় দিয়ে গলা ভেজান। আর ছোট্ট এই অভ্যাসেই বাড়ছে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি।
এক গ্লাস সফট ড্রিংকসে যত চিনি তা সারাদিনের চাহিদার চেয়েও বেশি
একটি সাধারণ ২৫০ মিলি লিটারের সফট ড্রিংকে গড়ে ৭–১০ চা চামচ চিনি থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক চিনি গ্রহণের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৬ চা চামচের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।

অর্থাৎ, এক গ্লাস সফট ড্রিংক খেলেই আপনি যে পরিমাণ চিনি খাচ্ছেন তা পুরোদিনের চিনির চাহিদার চেয়েও বেশি। তার সঙ্গে অন্যান্য খাবার তো বাকি আছেই।
তরুণদের ডায়াবেটিস বাড়ছে নীরবে
বাংলাদেশে বর্তমানে ২৫ বছরের নিচের তরুণদের মধ্যেও টাইপ-২ ডায়াবেটিস ধরা পড়ছে। একসময় এটিকে শুধু বয়স্কদের রোগ বলে মনে করা হতো। চিকিৎসকদের মতে, এর মূল কারণ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, রাতজাগা, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা—আর তার সঙ্গে প্রতিদিনের মিষ্টি পানীয়।
এন্ডোক্রাইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সফট ড্রিংকস নিয়মিত খাওয়া মানে শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করা। তরুণরা বুঝতেই পারে না, তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে। ফলে নীরবেই বাড়ছে ডায়াবেটিস।

‘ডায়েট’ বা ‘জিরো সুগার’ সফট ড্রিংকস খাওয়া যাবে?
অনেকে মনে করেন ‘ডায়েট কোক’ বা ‘জিরো সুগার’ লেখা পানীয় নিরাপদ। এসব পানীয়তেও কিন্তু কৃত্রিম মিষ্টিকারক (অ্যাসপারটেম, সুক্রালোজ) থাকে যা দীর্ঘমেয়াদে লিভার, কিডনি ও গাট হেলথের ক্ষতি করে। গবেষণা বলছে, এগুলোও ইনসুলিন সেনসিটিভিটি কমিয়ে দেয়।
সফট ড্রিংকসের বিকল্পে কী খাবেন?
লেবুর শরবত বা ফলের পানি (ইনফিউজড ওয়াটার): চিনি ছাড়া বা অল্প মধু দিয়ে লেবুর শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। ভারী খাবার খাওয়ার পর এটি হজমে সাহায্য করে।

ডাবের পানি: খেতে পারেন ডাবের পানি। প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ এবং কম ক্যালোরিযুক্ত।
গ্রিন টি বা লেমন টি: ফাস্টফুড জাতীয় খাবার যত কম খাবেন ততই মঙ্গল। তারপরও খেলে তারপর গ্রিন টি বা লেমন টি খান। এসব পানীয় হজমে সহায়ক এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর।
ডায়াবেটিস শুধু বয়সের নয়, অভ্যাসের রোগ। সফট ড্রিংকস হয়তো মুহূর্তে তৃষ্ণা মেটায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা শরীরের মিষ্টি ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। তাই এখন থেকেই পানীয় অভ্যাস বদলান।














