কয়েক দশকে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগী সংখ্যা বিপুল হারে বেড়েছে। সাধারণত আগে বয়স্কদের মধ্যে এই রোগ দেখা যেত। বর্তমানে যুবক ও মধ্যবয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়াবেটিসে। অনেকের শরীরে এই রোগ জিনগতভাবে চলে আসে, আবার কেউ কেউ অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে আক্রান্ত হন।
চিকিৎসকরা বলছেন, নিয়মিত চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার সতর্কতা মানলেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে সমস্যা হলো, নিয়ম মেনে চললেও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা কোনো না কোনো অঙ্গহানির শিকার হন। কারও চোখে ছানি পড়ে, কারও পা অবশ হয়ে যায়, কারও ঘা শুকাতে দীর্ঘসময় লাগে, যা রোগীকে দীর্ঘদিন ভোগায়।
বিজ্ঞাপন
দিনাজপুর শহরের বাসিন্দা নাজমুল হক মোল্লা। তিনি ছাড়াও পরিবারের সাত ভাই-বোন ও বাবা-মা সবাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। নাজমুল হক বলেন, ডাক্তারি ভাষায় তার ডায়াবেটিস টাইপ টু পর্যায়ে আছেন। ফলে তাদের সকাল দুপুর ও রাতে ইনসুলিনের পাশাপাশি ওষুধও খেতে হয়। তবে অনিয়ম হলে শরীরে তেমন কোনো সিগন্যাল দেয় না। কিন্তু নানা সমস্যা অনুভব করেন।

নাজুমল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘২০ বছর ধরে এই রোগে ভুগছি। সকাল দুপর এক রকম, রাতে আরেক রকম ইনসুলিন নিতে হয়। নিয়মমতো চলি কিন্তু তবুও চোখের সমস্যায় দেখা দিয়েছিল। কিছু দিন আগে চোখে রক্তক্ষরণ হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সেই চোখে ইনজেকশন পুশ করেন। এরপর ভালো হয়ে গেছে।’ তার মতে, নিয়ম মানলেও অঙ্গহানি ঘটে, না মানলেও ঘটে।
উত্তরের জেলা নীলফামারীর বাসিন্দা সেকেন্দার আলীর ডায়াবেটিস ধরা পড়ে ২০০৯ সালে। চোখের সমস্যা ও পায়ের অবশ হয়ে গেছে ৬০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধের। ১৬ বছর ধরে এই রোগে আক্রান্ত সেকেন্দার এখন দৃষ্টি হারাতে বসেছেন। পা অবশ হয়ে যায় তারা। ভুগছেন উচ্চ রক্তচাপেও।
সেকেন্দার বলেন, ‘প্রতি রাতে পা জ্বলে ও অবশ হয়ে যায়। প্রায় এক বছর ধরে এই সমস্যায় ভুগছি। ইনসুলিন না নিলে ডায়াবেটিস বেশি হয়। তখন আর ট্যাবলেটে কাজ হয় না। ইনসুলিন বন্ধ করলে ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। ২০২১ সালে চোখের সমস্যা ধরা পড়ে। গত ঈদুল ফিতরে চোখের সমস্যায় ছানি অপারেশন করেছি।’
সেকেন্দার আলী আরও বলেন, ‘এখন রাতে ঘুম হয় না সেভাবে। ওষুধ খেলেও তেমন ঘুম হয় না। গত তিন চার বছর ধরে এই সমস্যায় ভুগছি। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছি। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন দুই থেকে তিন বেলা ইনসুলিন নেই।’

তবে তাদের বাইরেও আরও এমন রোগীকে খুঁজে পাওয়া গেছে, যাদের বাবা-মা এই রোগে কোনো সময় আক্রান্ত ছিলেন। সেই সূত্রে তাদের শরীরেও এই রোগ বাসা বেঁধেছে। তবে এই ডায়াবেটিকস দুটি ধাপে হওয়ায় প্রথম ধাপের ব্যক্তিরা অনেকটাই নিরাপদ থাকেন। তাদের ওষুধ খেলেই চলে।
ঢাকার ব্যবসায়ী ওয়াসিম আহমেদ ও তার স্ত্রী এই রোগে আক্রান্ত। তিনি ইনসুলিন নেন না। তবে তার স্ত্রীকে দুই বেলা ইনসুলিন নিতে হয়।
ওয়াসিম আহমেদ জানান, নিয়মমতো চলছে। খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করলে সুস্থ থাকা সম্ভব। গত পাঁচ বছর ধরে এই রোগে আক্রান্ত হলেও নিয়মমাফিক চলায় তেমন কোনো সমস্যায় পড়েননি তিনি।
আবারও কেউ কেউ আক্রান্ত হয়ে কয়েক বছরের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। তেমনি একজন নরসিংদীর মাসুদুল আলম। কয়েক বছর আগে তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। তার রক্তে কোলেস্টোরেল বেশি ছিল। কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেয়ে এখন তিনি ডায়াবেটিকস মুক্ত বলে জানিয়েছেন।
এমআইকে/এমআর














