কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) রামপুরা ভবনে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় বিএনপি নেতা শিমুল বিশ্বাস ও সাইফুল ইসলাম নিরবসহ সাতজনের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (২৯ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিজ্ঞাপন
শিমুল বিশ্বাস ও নিরব ছাড়াও যাদের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে তারা হলেন- রফিকুল ইসলাম মজনু, রশীদুজ্জামান মিল্লাত, সৈয়দ এহসানুল হুদা, মহিউদ্দিন হৃদয় ও তরিকুল ইসলাম।
সেতু ভবনে হামলার ঘটনায় বনানী থানার করা আরেক মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আজ তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষে না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরপর রামপুরায় বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগের মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত গ্রেফতারের আবেদন মঞ্জুর করে শুনানি শেষে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ১৮ জুলাই বিটিভির রামপুরা অফিসে হামলার ঘটনার পরের দিন বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তার বাদী হয়ে রামপুরা থানায় একটি মামলা করেন।
বিজ্ঞাপন
মামলার অভিযোগে বাদী মাহফুজা আক্তার উল্লেখ করেন, গত ১৮ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন লেখা সম্বলিত ব্যানার নিয়ে ডিআইটি রোডগামী রামপুরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও বিটিভি ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেন। এরপরই বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণে অজ্ঞাতনামা তিন-চার হাজার নেতাকর্মী বিটিভি ভবনের প্রধান চারটি গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যে ভবনের ভেতর ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।
তারা টেলিভিশন ভবনে কর্মরত বিভিন্ন কর্মকর্তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পরিকল্পিতভাবে অন্তর্ঘাতমূলক সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের সরকারি মালামাল ভাঙচুর ও ক্ষতিসাধন করে। ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা। একপর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবি রাত ৯টার দিকে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা লুটপাট, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস ও হত্যার উদ্দেশে লাঠিসোটা ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবৈধভাবে বিটিভি ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর তারা ভবনটিতে আক্রমণ চালায় এবং ইট পাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। একইসঙ্গে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি সম্প্রচারকাজে নিয়োজিত পোর্টেবল ডিএসএনজি সিস্টেমের সব সম্প্রচার যন্ত্রপাতি এবং এসব যন্ত্রপাতি পরিবহন কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, কেন্দ্রীয় শীতাতপ ব্যবস্থার প্রভূত ক্ষতিসাধন ও অগ্নিসংযোগ, ১৭টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ৯টি গাড়ি ভাঙচুর, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর, বিটিভির মূল ভবনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, ঢাকা কেন্দ্রের অভ্যর্থনা কেন্দ্র ও ট্রান্সপোর্ট ভবন, ক্যান্টিন, অডিটোরিয়াম, মেকআপ শাখা, ডিজাইন শাখার মেকআপ (ওয়ার্কশপ, স্টোর, ওয়ার্ড্রাবে ও গ্রাফিক্স রুম) রুমে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
এমআর