শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন বাড়ানো সম্ভব: ড. আতিউর

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২২, ০৭:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন বাড়ানো সম্ভব: ড. আতিউর

স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন দুটোই বাড়ানো সম্ভব বলে উল্লেখ করেছেন উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) দুপুরে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এবং উন্নয়ন সমন্বয় আয়োজিত ‘বাজেট ২০২২-২৩-এ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের পর্যালোচনা’ শীর্ষক অনলাইন জাতীয় সংলাপে এমন মন্তব্য করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


আতিউর রহমান বলেন, বিদ্যমান বাস্তবতার প্রতি সংবেদনশীল থেকেই ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে জনচাহিদার বিবেচনায় বরাদ্দের ক্ষেত্রে আরেকটু উদার হওয়া যেতো। গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রার্থীরা মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৮ শতাংশ নিজেরাই বহন করছেন। এবারের বাজেটে বাড়তি ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে এই অনুপাত ৫১ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, ‘আমরা সব সময় মনে করি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে মানুষের ওপর বিনিয়োগ। মানুষের ওপরে বিনিয়োগ আরও বেশি করে দীর্ঘমেয়াদে একটি উপযুক্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের মানব শক্তির উন্নয়ন করতে পারে। স্বাস্থ্যখাতে মানুষকে যদি বেশি ব্যয় করতে হয়, অন্য খাতে তার ব্যয় কমে যায়। ফলে অনেক পরিবার স্বাস্থ্যখাতে বড় ধরনের একটা ধাক্কা খেলে, যারা দারিদ্র্য রেখার একটু ওপরে রয়েছে তারা নিচে পড়ে যায়। সুতরাং বাজেটে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। নতুন বাজেটে কি ধরনের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, আরও কিছু বিকল্প বরাদ্দ এখনো কীভাবে দেওয়া সম্ভব, সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করব।

আতিউর রহমান বলেন, আমি মনে করি, স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ এবং বাস্তবায়নের হার এখনো বাড়ানো সম্ভব। যদি বাজেট আলোচনায় আমাদের সংসদ সদস্যবৃন্দ ও নাগরিক সমাজ সরকারকে বোঝাতে পারেন এটা মানুষের ওপরে বিনিয়োগ, বিনিয়োগ করলে সংকট মোকাবিলা আরও সহজতর হবে, তাহলে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন দুটোই বাড়বে।

সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী এবং কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু।


বিজ্ঞাপন


বিশেষ অতিথি ছিলেন কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য ড. প্রাণ গোপাল দত্ত এবং মহিলা আসন-৪৮ এর সংসদ সদস্য মিসেস লুৎফুন নেসা খান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু সার্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করে ওই পরিকল্পনা অনুসারে প্রতিটি বছরের স্বাস্থ্য বাজেট প্রণয়নের ওপর জোর দেন।

সকলের জন্য সুলভে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যবিমার বিকল্প নেই বলে মত দেন আরেক সংসদ সদস্য ড. প্রাণ গোপাল দত্ত। তিনি মনে করেন যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সার্বজনীন স্বাস্থ্যবিমা নিয়ে পরীক্ষামূলক উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

আলোচনায় আরও যেসব নীতি-প্রস্তাবনা উঠে এসেছে তার মধ্যে আছে- ‘আউট-অফ-পকেট হেলথ এক্সপেন্ডিচার’ কমানোর লক্ষ্যে সার্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যপ্তি বৃদ্ধি, সরকারি সেবাকেন্দ্রে বিনামূল্যে ওষুধের সরবরাহ বৃদ্ধি, এবং সকল ধরনের রোগ-নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর ও অভিমত পর্বে অংশ নেন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আসা জনস্বাস্থ্য-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, কর্মকর্তা এবং অন্যান্য অংশীজন। তাদের আলোচনায় জাতীয় বাজেটে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য বরাদ্দের অপ্রতুলতা, নগরাঞ্চলে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার অপ্রাপ্যতা, স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক ও হিসাব ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণের অভাবের বিষয়গুলো উঠে আসে।

রোগ নিয়ন্ত্রণ, ডিজিএইচএসের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নাজির আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এই সেক্টরে গুরুতর অব্যবস্থাপনা রয়েছে এবং এটি শুধুমাত্র অপর্যাপ্ত জনবলের কারণে। সঠিক মানুষ সঠিক জায়গায় নেই। আমরা উপজেলা পর্যায়ে সুসজ্জিত হাসপাতাল তৈরি করছি কিন্তু চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ, চিকিৎসক, নার্স ইত্যাদির অভাবে হাসপাতালগুলো খালি পড়ে আছে।

দেশের নগর স্বাস্থ্যের অবনতির দিকে ইঙ্গিত করে এই সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় সরকারকে আরও কার্যকরভাবে  পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক মোর্শেদা চৌধুরী সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার বিষয়ে জোর দিয়ে বলেন, ‘ইপিআই, ওআরএস ইত্যাদি প্রোগ্রাম এনজিও দ্বারা পরিচালিত হয় এবং খুব সফল হয়। এই ধরনের আরও সাফল্যের গল্প তৈরি করতে, সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় প্রয়োজন।"

আয়োজকদের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের থিমেটিক গ্রপের সভাপতি অধ্যাপক ড. রুমানা হক। সংলাপ সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের প্রকল্প সমন্বয়কারি জাহিদ রহমান।

বিইউ/ডিএইচডি/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর