বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

স্বাস্থ্যখাত ২০২৪: অভ্যুত্থান, সংঘর্ষ ও স্থবিরতার গল্প

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৯ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় শেখ হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে স্বাস্থ্যখাত সব সময়ই ছিল আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে দীর্ঘ স্বৈরাশাসনের পতনের বছরে তা হয়ে ওঠে আরও আমানবিক। ২০২৪ সাল ছিল বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের জন্য গভীর অস্থিরতা এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীর একটি বছর। প্রশাসনিক স্থবিরতা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং চিকিৎসাসেবার ব্যর্থতা অমানবিকতার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শিত হয় এই বছরে। বিশেষ করে জুলাই মাসের আন্দোলন চলাকালে আহতদের চিকিৎসায় বাধা দেওয়ার মতো অমানবিকতার সাক্ষী হয়েছে দেশবাসী।

পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যখাত আরও সংকটময় হয়ে ওঠে। স্বৈরাচারের আমলে দাপটের সঙ্গে স্বাস্থ্যখাত নিয়ন্ত্রণ করা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) চিকিৎসকদের আত্মগোপন, স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক নিয়োগ নিয়ে নানা ঘটনা, অভ্যুত্থানের পক্ষের দুই চিকিৎসক সংগঠন ডক্টটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও ন্যাশনাল ডক্টরম ফোরামের (এনডিএফ) মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং আহতদের চিকিৎসায় উদাসীনতা—এইসব বিষয় জনমনে তীব্র প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, নিপা ভাইরাসসহ নানা বিষয় বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল।


বিজ্ঞাপন


২০২৪ সালের সূচনায় স্বাস্থ্যখাতের আলোচিত বিষয় ছিল ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে চিকিৎসকদের অংশগ্রহণ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল উপাচার্যের মেয়াদ শেষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিশৃঙ্খলা। যা বছরের মাঝে এসে গণআন্দোলন ও আহতদের চিকিৎসা, স্বাস্থ্য প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল ও সর্বশেষ চিকিৎসকদের আন্দোলনের মাধ্যমে শেষ হওয়ার পথে।

এক বছরে চার উপাচার্য, শারফুদ্দিনের লজ্জাজনক বিদায়

বিগত বছরে নানা কারণে স্বাস্থ্যখাতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দেশের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই বিশ্ববিদ্যালয়টি চারজন উপাচার্য পেয়েছে। চার বছর মেয়াদ শেষে ২৮ মার্চ দায়িত্ব ছাড়েন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। 

3
নানান কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত হন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ

 

একইদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ডা. দীন মুহাম্মদ নূরুল হক। তবে জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর উপাচার্য হিসেবে ডা. দীন মুহাম্মদের অধ্যায়েরও শেষ হয়। সরকার পতনের পর দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার পর পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর ২৭ আগস্ট বিএসএমএমইউর উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানকে। তবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় উপচার্য পদ ছাড়তে হয় তাকে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম অস্থায়ীভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন

গ্যাস লাইনে কাজ করার সময় বিস্ফোরণে প্রকৌশলীসহ নিহত ৪

চলতি বছরে তিন উপচার্যের বিদায় হলেও সবচেয়ে আলোচিত ছিল অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদের দায়িত্ব হস্তান্তর। বিএসএমএমইউর ইতিহাসে এর আগে কোনো উপচার্য এতটা বিতর্ক ও লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে বিদায় নেননি। দায়িত্ব পালনকালে অধ্যাপক শারফুদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। বহুল আলোচিত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ পরীক্ষায় অর্থের বিনিময়ে প্রশ্নফাঁসের গুরতর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তবে সরকারের উচ্চমহলের আশির্বাদে দায়িত্ব থাকাকালীন সময়ে এ বিষয়গুলোকে তেমন পাত্তা না দিলেও শেষ সময়ে এসে তোপের মুখে পড়তে হয় শারফুদ্দিন আহমেদকে।


বিদায় বেলায় অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে স্থায়ী করা, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় অধ্যাপক শারফুদ্দিনকে। এমনকি দীর্ঘদিন উপাচার্যের সবচেয়ে সমর্থক হিসেবে পরিচিত কর্মচারীরাও তাকে অবরুদ্ধ করেন। নিজের রাজনৈতিক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) একাংশের রোষানলে পড়তে হয় তাকে। এমনকি উপাচার্যে রুমে ঢুকে তার ব্যক্তিগত সহকারীকে লাঞ্ছিত করে চিকিৎসকদের একাংশ।

জুলাই অভ্যুত্থান ও চিকিৎসক সমাজে প্রকাশ্য বিভক্তি

কোটাবিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন ফের আলোচনায় আসে দেশের স্বাস্থ্যখাত। গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালায় তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। এতে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী আহত হন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে, হাসপাতালে ঢুকে আরেক দফায় তাদের ওপর হামলা চালায় বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠনটি। তবে এ সময় রোগীদের সুরক্ষায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে আহত ও নিহত অসংখ্য ছাত্র-জনতা হাসপাতালে ভর্তি হয়। এসময় স্বাচিপপন্থী চিকিৎসকরা তাদের সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানান, পাশাপাশি সেবদানকারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সরকারবিরোধী হিসেবে মার্ক করেন। এমনকি কোথাও কোথাও গুলিবিদ্ধদের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ রয়েছে স্বাচিপপন্থী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন

আতশবাজি বন্ধে চলবে মোবাইল কোর্ট, হতে পারে জেল-জরিমানা

 

হাসপাতালের পাশাপাশি রাজপথেও সক্রিয় ছিলেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছাত্র-জনতাকে নির্বাচারে হত্যার প্রতিবাদে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সড়কে নেমে আসেন মেডিকেল শিক্ষার্থীরাও। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন মেডিকেলে ছাত্রলীগের হামলার শিকারও হন তারা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে মাঠে ছিলেন শিক্ষকরাও। ৩ আগস্ট সরকারের পক্ষে শহীদ মিনারে শান্তি সমাবেশ করেন স্বাচিপপন্থী চিকিৎসকরা। এতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বিএসএমএমইউ উপাচার্যসহ স্বাস্থ্য প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।

2
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিএসএমএমইউর ভেতরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা

এদিকে আন্দোলন চলকালে কে বা কারা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পুরাতন ভবনের সামনে রাখা গাড়িতে আগুন দেয়। যদিও এসব গাড়ি অকেজো অবস্থায় সেখানে পড়ে ছিল, তবে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন প্রায় শতকোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান। এসবের প্রতিবাদে এবং সরকারের সমর্থনে পুরো সময় জুড়েই স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা মাঠে ছিল। তারা সরকারবিরোধী যে কোনো কার্যক্রম প্রতিহত করতে সদা জাগ্রত থাকবেন বলেও ঘোষণা করেন। এরই অংশ হিসেবে ৪ আগস্ট ছাত্রলীগের পক্ষ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিএসএমএমইউর কতিপয় চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে থাকা বেশ কিছু গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য প্রশাসনে স্থবিরতা, ড্যাব-এনডিএফের মুখোমুখী অবস্থান

এদিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই স্থবিরতা নেমে আসে স্বাস্থ্য প্রশাসনে। কার্যত নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে রাজধানীর সরকারি মেডিকেল কলেজ, বড় হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন কয়েকটি দপ্তর। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সমর্থিত কর্মকর্তা ও চিকিৎসকেরা অফিসে না আসায় (বলা যায় আত্মগোপন) এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। 

গত ৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর একাধিক হাসপাতাল ও দপ্তরে স্বাস্থ্য খাতের শীর্ষ পদে থাকা অধিকাংশ কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিল থমথমে পরিবেশ। পাশাপাশি ভাঙচুরের দৃশ্যও দেখা গেছে। সারাদেশেই ছিল এমন চিত্র।

আরও পড়ুন

জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ স্থগিত হলো সিনিয়র ৫ সাংবাদিকের

 

এদিকে ছাত্র-জনতার চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তৎকালীন স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরে মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এর পর দুই অধিদফতরে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। তবে বিগত সরকারের আমলের গুরুত্বপূর্ণ এই স্বাস্থ্য প্রশাসকের নিয়োগ নিয়ে আপত্তি জানায় বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (ড্যাব) ও জামায়াতপন্থী ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। নিয়োগ পাওয়ার কয়েক সপ্তাহেও অধিদফতের প্রবেশ করতে পারেননি তিনি। তার নিয়োগকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সামনে টেবিলে ওঠে বিক্ষোভের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনাও ঘটে। এ সময় নিয়োগ পছন্দ না হলেই ‘স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যা নিয়ে বিক্ষোভের ঘটানাও ঘটে। এতে মাস খানেরও অধিক সময় অধিদফতরের ৭০ থেকে ৮০ শাতংশ কর্মকর্তা অফিসে অনুপস্থিত থাকেন। যার ফলে স্থবিরতা নেমে আসে স্বাস্থ্যখাতে।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়োগকে কেন্দ্র করে মুখোমুখী অবস্থান নেয় ড্যাব-এনডিএফপন্থী চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) পদে নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক ডা. এবিএম আবু হানিফের যোগদানকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ায় দুই চিকিৎসক সংগঠন। এতে একাধিক চিকিৎসক আহত হন। একইসঙ্গে নানা দাবি দাওয়া নিয়ে স্বাস্থ্য ভবন অবরোধ করেন টেকনোলজিস্টসহ বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা।

গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় নানা অভিযোগ

স্বাস্থ্য প্রসাশনের স্থবিরতা ও নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ ওঠে। জুলাই অভ্যুত্থান এবং এর পরবর্তী সময়ে আহতদের চিকিৎসা প্রদান নিয়ে বড় ধরনের ব্যর্থতার নজির তৈরি হয়। ফলে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান-নিটোর তথা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি আহতরা। তারা দাবি করেন, তাদের চিকিৎসায় বিলম্ব ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। দেশে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকার পরেও তাদের দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য না নেওয়ার অভিযোগ করেন তারা।

6
জুলাই আন্দোলনে আহতদের একাংশ

তবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমসহ স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়। আহতদের চিকিৎসায় যেকোনো ধরনের অবহেলায় কঠোর ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাদের চিকিৎসায় বিভিন্ন দেশ থেকে একাধিক চিকিৎসক দল বাংলাদেশে আসে। জটিল রোগীদের চিকিৎসায় থাইল্যান্ড সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়।

প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক আন্দোলন

বছরের শেষের দিকে স্বাস্থ্যখাত নতুন করে আলোচনায় আসে প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। মাসিক ভাতা বাড়িয়ে ৫০ হাজার করার দাবিতে রাজপথে নামেন বেসরকারি পোস্ট গ্রেজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ২০২২ সাল থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছে ট্রেইনি চিকিৎসকরা। তাদের আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে গত বছরের জুলাই মাসে মাসিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। ওই ভাতা ‘যৌক্তিক নয়’ দাবি করে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন আন্দোলনকারীরা।

7
ভাতা বাড়ানোর দাবিতে প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের আন্দোলন

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলে আবারও ভাতা বাড়ানোর দাবিতে সড়কে নামেন চিকিৎসকরা। গত ২২ ডিসেম্বর তারা শাহবাগে সড়ক অবরোধ করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমের কাছ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে তারা রাস্তা ছাড়েন।

পরে গত ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) এফসিপিএস প্রথম পর্ব পাস করা অবৈতনিক প্রশিক্ষণার্থীদের মাসিক পারিতোষিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সেটা প্রত্যাখ্যান করে রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। তাদের দাবি ভাতা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করতে হবে। পরে দুপুরের পর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের হেয়ার রোডের বাসায় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে ভাতা বাড়িয়ে ৩৫ করার সিদ্ধান্ত হয়, যা জুলাই থেকে কার্যকর হবে। ৩০ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হলে ট্রেইনি চিকিৎসকরা তা মেনে নিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন।

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ও ডেঙ্গুতে বিপুল প্রাণহানি

আওয়ামী শাসনামলে স্বাস্থ্যখাতের আরেকটি ব্যর্থতা হলো ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে না পারা। ২০২৪ সালেও যার থেকে বের হতে পারেনি বাংলাদেশ। চলতি বছর এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত প্রাণ গেছে ৫৭৩ জনের। ডেঙ্গুর শুরুটা হয়েছিল ২০১৯ সালে। দুই দশক পর সে বছর বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, মারা গিয়েছিলেন ১৭৯ জন। এরপর থেকে প্রতিবছরই বাড়তে থাকে মৃত্যুর সংখ্যা। যা গত বছর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এ সময় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। আর 

বছরের পর বছর ধরে মশার উপদ্রবে রীতিমতো অতিষ্ঠ ঢাকার দুই সিটির বাসিন্দারা। কয়েল, ওষুধ বা স্প্রে- কিছুতেই ঠেকানো যায় না এই উপদ্রব। প্রতি বছর শতকোটি টাকা খরচ করেও রাজধানীবাসীকে মশার কবল থেকে মুক্তি দিতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন, যা স্বাস্থ্যখাতে হাসিনা সরকারের অন্যতম বড় ব্যর্থতা।

এমএইচ/ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub