ঈদে মুক্তি প্রতীক্ষিত সিনেমার তালিকায় হুট করে যুক্ত হয়েছে মেগাস্টার শাকিব খানের ‘অন্তরাত্মা’। চার বছর আগে নির্মিত ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত ছবিটির মুক্তির পেছনের গল্পসহ বিবিধ বিষয় ঢাকা মেইলের কাছে ভাগ করেছেন প্রযোজক সোহানী হোসেন।
প্রচারণা ছাড়া ‘অন্তরাত্মা’ মুক্তির সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
বিজ্ঞাপন
ছবিটির বয়স চার বছর হয়ে গেছে। মেরিট কমে যাচ্ছিল। এতদিন করোনাসহ বিভিন্ন কারণে প্রেক্ষাগৃহে আসেনি। মুক্তি দেওয়ার পেছনে বাধাও ছিল। ছবিটির মুক্তি নিয়ে চিন্তা করছিলাম। শাকিবের সঙ্গে কথাও বলেছিলাম। ভাবলাম সেন্সর করিয়ে রাখি পরে একসময় মুক্তি দেওয়া যাবে। পরে বরবাদ আসবে কি আসবে না সেটি নিয়েও সম্ভবত একটু দ্বিধা কাজ করছিল। গুঞ্জনও উঠেছিল। তখন ভাবলাম শাকিব ছাড়া ঈদ— এটা কেমন কথা। যেহেতু ছবিটা চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডে জমা দিয়েছিলাম এবং সেন্সর হয়ে যাচ্ছিল তখন ভাবলাম— ঈদে শাকিবের সিনেমা থাকবে না এটা হতেই পারে না। তখন আমি সিনেমাটি মুক্তির সিদ্ধান্ত নিলাম।
‘বরবাদ’কে ঠেকাতে ‘অন্তরাত্মা’র মুক্তি— অনেকে এরকম ভাবছে…
না, সেরকম কিছু না। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ধরনের কথা বলবে। গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নাই। আর ‘বরবাদ’ অনেক বাজেটের ছবি। পুরোটাই দেশের বাইরে শুটিং। অনেক কালারফুল ছবি। এখনকার প্রজন্ম যেরকম চায় আরকি। অনেক বেশি নাচ, গান, ভায়োলেন্স। অন্যদিকে ‘অন্তরাত্মা’ একেবারেই সামাজিক ছবি। পরিবার নিয়ে দেখার মতো মিষ্টি গল্পের ছবি। আমার মনে হয়েছে মানুষ একটি অস্থিরতার ভেতর দিয়ে গেছে। মারামারি, হানাহানি, অরাজকতা এখনও বিভিন্ন দেশে চলছে। এরকম সময় মিষ্টি একটি গল্পের প্রয়োজন। কারণ আমি দেখেছি নারী দর্শকরা মারামারি এড়িয়ে চলে। আমার হল আছে। সেখানে দর্শক টিকিট কেটে ঢুকে কিন্তু একটু পরেই বেরিয়ে যান। ওই জায়গা থেকে মনে হয়েছে এই সময়ে এই ছবিটা দিলে নারী দর্শক যারা আছেন, যারা পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে আসেন তারা দেখবেন। তবে এখানে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা পলিটিক্সের বিষয় নেই।
বিজ্ঞাপন
নির্মাণের পর লম্বা সময় চলে গেছে। এ অবস্থায় ‘অন্তরাত্মা’ কতটা দর্শক টানতে পারবে বলে মনে হচ্ছে?
এটা শাকিবের সিনেমা। দর্শকের কাছে তার দারুণ গ্রহণযোগ্যতা। আমাদের সিনেমা হলে তার পুরনো ছবিগুলো চালালেও দর্শক আসেন। ওই জায়গা থেকে নতুন একটা সিনেমাকে (অন্তরাত্মা) ঘিরে তো এমনিতেই প্রত্যাশাটা একটু বেশি থাকে। ছবির গানগুলোও বেশ মিষ্টি। দুটি প্রকাশ পেয়েছে আরও একটা আছে। আমার বিশ্বাস দর্শকের গ্রহণযোগ্যতা পাবে ছবিটি।
শাকিবিয়ানরা ‘বরবাদ’ নিয়ে মেতে আছেন। ‘অন্তরাত্মা’ তাদের সমাদর পাচ্ছে না। এটি কি কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে হচ্ছে?
কেউ চিন্তা করেনি ‘অন্তরাত্মা’ আসবে। কেননা কোনো প্রচারণা চালানো হয়নি। তাছাড়া রমজান মাস। ওইভাবে কোনো প্রস্তুতি ছিল না। তারপরও আমার মনে হয় না কোনো প্রভাব পড়বে। ছবির গতিতেই ছবি চলবে।
শাকিব খানও ‘অন্তরাত্মা’র প্রচাণায় নীরবতা পালন করছেন…
এটা শাকিবের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে ওর সঙ্গে সেন্সরের জমা দেওয়ার আগেও ছবিটি নিয়ে কথা হয়েছে। কদিন আগেও মেসেজ দেওয়া হয়েছে। ও দেখেছে। হয়তো ‘বরবাদ’ নিয়ে ব্যস্ত। তাছাড়া চাইছিল ঈদে ‘বরবাদ’ আসুক পরে কোনো এক সময় ‘অন্তরাত্মা’ আসবে। কিন্তু আমি যখন শুনলাম ‘বরবাদ’ নাও আসতে পারে তখন সিদ্ধান্ত নিলাম ছবিটি মুক্তি দেওয়ার। আমার মনে হয় না ও কোনো নেতিবাচক ধারণা নিয়ে আছে।
কিং খান ঈদ পরবর্তী সময়ে ‘অন্তরাত্মা’র মুক্তির পক্ষে ছিলেন। তবে কি সেকারণেই ছবির প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে না তাকে?
হতে পারে আবার নাও হতে পারে। না জেনে বলা ঠিক না। ছবিটা চার বছর ধরে পড়ে ছিল। ঈদের পরে মুক্তি দিলে মেরিট থাকত না। আবেদন নষ্ট হয়ে যেত। কেননা সামনে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা। ওই সময়টা উপযুক্ত না। ফলে ক্রমাগত সিনেমার বয়স বেড়েই যেত। সে কারণেই মূলত মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ছবিটি মুক্তি পেছনে বাধা ছিল বলেছিলেন। এ ব্যাপারে জানতে চাই…
সেসময় করোনা ছিল। তাছাড়া রাজনৈতিক ক্ষোভের মুখে পড়েছিল ছবিটা। খুব ওপরের লেভেলের একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলেছিলেন, ছবিটি আমাকে দেন আমি মুক্তি দেই। আমি তার প্রস্তাব এড়িয়ে যাই। কেননা সেটা করলে একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতো।
তিনি কে ছিলেন?
বিগত ক্ষমতাসীন দলের। সর্বোচ্চ পর্যায়ে একজন। নামটা না বলি। আমরা তো এখন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি। চলাফেরা করতে পারছি। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো একসময় এই স্বাধীনতাটা ছিল না। বৈষম্যের শিকার ছিলাম সবাই।
নতুন কোনো সিনেমা নিয়ে ভাবছেন?
আমি মূলত একজন শিল্প উদ্যোক্তা। ছোটবেলা থেকে নাটক, মঞ্চ সবকিছুতেই বিচরণ ছিল। ভালোবাসাও ছিল। ওই জায়গা থেকেই সিনেমায় আসা। আর আমি মনে করি ছবির মতো ছবি দুই-একটা হলেই যথেষ্ট। যেমন আমার সত্তা জাতীয় পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছে, প্রশংসিত হয়েছে। তারপর এই ছবিটা আনলাম। হল না পাক অসুবিধা নেই। আমার হল আছে। সেখানে বসে দেখব। যদি দর্শকরা আসেন দেখবেন। এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই। আমি সিনেমার ব্যবসা করি না। সিনেমা আমার সৌখিনতা। ছবি বানিয়ে অনেক টাকা আয় করতে হবে, ব্যবসা করতে হবে এ ধরনের কোনো মানসিকতা আমার নেই। সত্তা সবাই গ্রহণ করেছে। পুরস্কৃত হয়েছে। ওই জায়গা থেকে মনে হয়েছিল এই ছবিটা বানাই।
আপনার দুটি সিনেমাই শাকিবকে নিয়ে। অন্যদের নিয়ে কাজ করবেন না?
নতুনদেরও সুযোগ দেওয়া উচিত। সিয়াম আহমেদ অনেক মেধাবী, শিক্ষিত ছেলে। অনেক সুন্দর অভিনয় করে। তাছাড়া আফরান নিশোও চমৎকার অভিনয় করেন। নতুন প্রজন্মের অনেকেই ভালো করছেন। পরবর্তীতে যদি কোনো কাজের চিন্তা মাথায় আসে আমি তাদের নিয়ে ভাবব।
ঈদের ছবিগুলোর মধ্যে ‘অন্তরাত্মা’ কতটা জায়গা করতে পারবে বলে মনে করছেন?
আমি ‘অন্তরাত্মা’কে ভালবাসি। আমার কলাকুশলী দর্শক শ্রোতারাও ভালোবাসেন। এটাই বড় প্রাপ্তি। কয়টা হল পেল, কত আয় করল— এটা বড় কথা না। ‘অন্তরাত্মা’ মুক্তির কথা শুনে সবাই স্বস্তি পাচ্ছে। গান দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছে। মনে হয় এটাই আমার বড় পাওয়া। ‘বরবাদ’ -এর মতো ‘বরবাদ’ চলবে, ‘অন্তরাত্মা’র মতো ‘অন্তরাত্মা’ চলবে। একই নায়কের দুটি ছবি আগেও এসেছে। এটা নতুন কিছু না। এখন কে কোন ছবি কীভাবে গ্রহণ করে সেটা দর্শকের ব্যাপার।
আরআর