সৌদি আরবের জেদ্দায় রেড সি ফিল্ম ফেস্টিভালের তৃতীয় সংস্করণের সমাপনী অনুষ্ঠান হয়েছে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায়। এবার আসরের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘গোল্ডেন ইউসর’ এবং নগদ এক লাখ মার্কিন ডলার জিতেছে পাকিস্তানি-কানাডিয়ান ভৌতিক সিনেমা ‘ইন ফ্লেমস’। ফিলিস্তিনে শান্তির আহ্বান জানিয়ে বানানো এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন জারার খান।
পুরস্কার ঘোষণার সময় দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন হলিউড তারকা নিকোলাস কেজ, গিনেথ প্যালট্রো, হ্যালি বেরি, জেসন স্ট্যাথাম এবং অ্যাড্রিয়েন ব্রডির মতো বিশ্ব সিনেমার মহাতারকারা।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
রেড সি উৎসবে একদিনে হলিউডের তিন মহাতারকা
‘রেড সি’র বাণিজ্যিক শাখায় সেরা ‘দ্য রিটার্ন অফ দ্য প্রডিগাল সন’
রেড সিতে এসে ধারণা পাল্টে গেছে বাজ লুহরম্যানের
জেদ্দার বিদেশিদের নিয়ে জার্মানি কনস্যুলেটের বিশেষ পার্টি
একজন মানুষ হিসাবে জিতে যাওয়াটাই বড় পাওয়া: উইল স্মিথ
জেদ্দায় একই দিনে ক্যাটরিনা ও ইয়াসমিন উন্মাদনা
জারার খান বলেন, স্বাধীনভাবে নির্মিত এই সিনেমার শুটিং এবং এডিটিংয়ে খরচ হয়েছিল মাত্র তিন লাখ মার্কিন ডলার। রেড সি ফান্ড থেকে এই অর্থ অনুদান হিসাবে দেওয়া হয়েছিল।
সিনেমার জন্য অনুদানপ্রাপ্তদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই পরিচালক বলেন, ‘ইন ফ্লেমস’ সিনেমাটি কোনো কিছু জয় করার জন্য তৈরি করা হয়নি। একটি মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র এখানে ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। তাই যারা অনুদান পাবেন মনোযোগ দিয়ে সেই অর্থ সঠিকভাবে খরচের চেষ্টা করবেন।
সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য ‘সিলভার ইউসর’ জিতেছে তারসেম সিং পরিচালিত ‘ডিয়ার জাসি’। ভারত, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সহ-প্রযোজনায় নির্মিত এই সিনেমাটি একজন কানাডিয়ান পাঞ্জাবি নারীর সত্য গল্পের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। যিনি তার পরিবারের প্রত্যাশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কানাডায় ছুটি গিয়েছিলেন। একসময় কর্মস্থলে এক ছেলের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তারা। বিষয়টি পরিবারের লোকজন জানতে পেরে তাকে হত্যা করেছিল।
বিজ্ঞাপন
পুরস্কার জয়ের পর সিনেমার পরিচালক তারসেম সিং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ করে বলেন, কাউকে হত্যার মধ্যে গর্বের কিছু থাকে না। আপনার মেয়ে বা বোন যদি নিজেদের ক্লাসের বাইরে গিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন, তবে তাকে বুঝিয়ে বলতে পারেন। কিন্তু তাকে হত্যা করার মাঝে সম্মানের কিছু নেই।
পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে ফিলিস্তিনে শান্তির জন্য আবেগপূর্ণ আহ্বান ছিল।
এবারের উৎসবে জুরি পুরস্কার জিতেছে ‘দ্য টিচার’। ব্রিটিশ-ফিলিস্তিনি নির্মাতা এবং মানবাধিকার কর্মী ফারাহ নাবুলসি এই সিনেমাটি তৈরি করেছেন। সিনেমাটির শুটিং হয়েছিল কয়েক বছর আগে ফিলিস্তিনে। ওই সময় যে সমস্যাগুলো অনুরণিত হয়েছিল, এখন সংঘাতের সময় সেগুলোরই বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গাজায় বর্তমান ধ্বংসযজ্ঞের কথা না বলাটা হবে আমাদের জন্য সবচেয়ে লজ্জার। তার এই বক্তব্যের সময় দর্শক সারি থেকে উচ্চস্বরে উল্লাস ও করতালি দিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়েছিল।
ফারাহ নাবুলসি বক্তব্যের সময় ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের একটি মন্তব্য স্মরণ করেছেন। ১৯৭০ সালে রাসেল ফিলিস্তিনির দুর্দশার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, বিশ্ব আর কতকাল এই অমানবিক নিষ্ঠুরতার দৃশ্য সহ্য করবে?
এই সিনেমাকে জুরি পুরস্কার দেওয়া প্রসঙ্গে জুরি চেয়ারম্যান অস্ট্রেলিয়ান পরিচালক বাজ লুহরম্যান বলেছেন, এই সিনেমায় আলো জ্বালানোর একটি প্রচেষ্টা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। যা পুরস্কারের জন্য এগিয়ে ছিল।
এবার সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন ফিলিস্তিনি অভিনেতা সালেহ বাকরি।
কেজের জন্য একটি বিশেষ পুরস্কার ছিল, যিনি মন্তব্য করেছিলেন যে যখন তিনি ছোটবেলায় এডমন্ড রোস্ট্যান্ডের সাইরানো ডি বার্গেরাকের গল্প পড়েছিলেন।
অন্যান্য পুরস্কার যারা পেয়েছেন
সেরা পরিচালক— শোকির খলিকভ (সানডে)।
সেরা অভিনেত্রী— মৌনা হাওয়া (ইনশাল্লাহ আ বয়)।
সেরা ফিচার চিত্রনাট্য— করিম বেনসালাহ এবং জামাল বেলমাহি (সিক্স ফিট ওভার)।
সেরা সিনেমাটিক অবদান— ‘ওমেন’ পরিচালক বালোজি।
সেরা শর্ট ফিল্ম— ‘স্যুটকেস’ সামান হোসেনপুর ও আকো জানকারিম।
শর্ট জুরি পুরস্কার— ডাহলিয়া নেমলিচের ‘সামহোয়্যার ইন বিটুইন’।
অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট সৌদি ফিল্ম: ‘নোরাহ’ পরিচালন করেছেন তৌফিক আলজাইদি।
সেরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র— ‘হোপলেস’ কিম চ্যাং-হুন।
সেরা ডকুমেন্টারি— কাওথার বেন হানিয়া (ফোর ডটার)