জীবনে মানুষ হিসাবে জিতে যাওয়ার চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই। লোক দেখানো কাজে প্রশংসা পাওয়ার মাঝে কোনো গর্ব থাকে না। শনিবার রাতে সৌদি আরবের জেদ্দায় রেড সি ফিল্ম ফেস্টিভালের তৃতীয় আসরে কনভারসেশান প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন হলিউড অভিনেতা উইল স্মিথ।
রেড সি মলের বক্স সিনেমার এক নম্বর অডিটরিয়ামে এক ঘণ্টার বেশি সময় তিনি কথা বলেছেন তার নতুন সিনেমা ‘আই অ্যাম লিজেন্ড’-এর সিক্যুয়েল, প্রথমবার সৌদি আরবে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, তার মনের অবস্থা, অতীত এবং ভবিষ্যতের অনেক বিষয় নিয়ে।
বিজ্ঞাপন
এদিন উইল স্মিথকে এক নজর দেখার জন্য ভক্তদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় স্মিথ যখন রেড সি মলে প্রবেশ করেন, তখন স্মিথ, স্মিথ ধ্বনিতে অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। নিরাপত্তাকর্মীদের কড়াকড়ির কারণে ভক্তরা তার কাছে ভিড়তে পারেনি। তবে স্মিথ গ্রুপ সেলফি তোলার সুযোগ দিয়েছেন অনেককে। সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে অডিটরিয়ামে প্রবেশের পর উপস্থিত দর্শকদের প্রতি হাত নেড়ে, হাসি দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে আরবিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, শুকরান, শুকরান!
অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের প্রশ্নের আগেই মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে তিনি বললেন, জানি আমার সমস্যাগুলো নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করা হবে। তার আগেই সবাইকে একটি বিষয় জানিয়ে রাখি, ছোটবেলা থেকেই আমি গণিত ও বিজ্ঞানে ভালো ছিলাম। ধাঁধা ও সমস্যা তৈরি করা আমার পছন্দ। এ কারণেই আমি মাঝে মাঝে সমস্যা তৈরি করি এবং এখন অনেক ভালো আছি।
এটি মূলত ২০২২ সালে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে (অস্কার) ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনার রেফারেন্স হিসাবে তিনি বলেছেন। কারণ ওই ঘটনার পর তিনি যেখানেই গেছেন সব জায়গায় ওই ‘চড় কাণ্ড’র বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। ওই বছর মঞ্চে সঞ্চালক ক্রিস রককে চড় মারার ঘটনা নিয়ে হলিউডে তোরপাড় শুরু হয়েছিল। স্ত্রী জাডা পিঙ্কেটের সম্মান বাঁচাতে গিয়েই যে এমনটা করেছিলেন উইল স্মিথ, তা তিনি স্পষ্ট করেছেন বহুবার। জাডা অ্যালোপেশিয়া রোগে আক্রান্ত। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ায় জাডার মাথা থেকে চুল পড়ে যায়। সঞ্চালক ক্রিস তা নিয়েই রসিকতা করেন। যা মেনে নিতে পারেননি স্মিথ। পরবর্তীতে অবশ্য এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন স্মিথ।
শনিবার রাতে এ বিষয়টি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে অনেক ভুল কাজ আছে।’ এ সময় দর্শক সারি থেকে একজন চিৎকার করে বলেন, ‘আমরা আপনার ভুলগুলি ভালোবাসি।’ উইল স্মিথ বলেন, আমার দুঃখ-কষ্ট ভাগ করার মতো একজন বিশ্বস্ত উপদেষ্টা ও পরামর্শদাতা রয়েছেন। তিনি হলেন কুইন্সি জোন্স (হলিউডের বিখ্যাত প্রযোজক, লেখক ও গীতিকার)। তিনি সবসময় আমাকে বলেন, নিজেকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। একজন শিল্পীর চেয়ে মানুষ হিসেবে কেউ যদি তোমার প্রতি অনুগত হয়, সেটাই জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। আমিও মনে করি, একজন মানুষ হিসেবে জিতে যাওয়ার চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু নেই।
অডিটরিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, খ্যাতি হচ্ছে এক দানবের মতো। মানুষ যখন আপনার প্রশংসা করবে, ভালো কথা বলবে, তখন আপনি খুব বেশি উত্তেজিত হতে পারবেন না। কারণ পরবর্তীতে লোকেরা যখন আপনার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করবে তখন আপনি লড়াই করতে পারবেন না, কষ্ট পাবেন। সবসময় নিজেকে প্রশ্ন করবেন, আমি কে? পৃথিবীতে কি করার চেষ্টা করছি, সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। নিজের লক্ষ্যে মনোনিবেশ করার জন্য অন্যদের প্রশংসা করার প্রয়োজন নেই। নিজেকে যখন সত্যিকারের মানুষ ভাবতে পারবেন, সবসময় মনে হবে একটি পুণ্য কাজের মধ্যে রয়েছি। এর মধ্য দিয়েই আপনি ভালো বোধ করতে থাকবেন।
এবার উপস্থাপকের প্রশ্ন নিলেন স্মিথ। প্রথমেই জানতে চাইলেন, তারকা হওয়ার স্বপ্নটা কিভাবে জাগ্রত হয়েছিল মনের মধ্যে? উত্তরে বললেন, ছোট বেলায় আমার র্যাপার হওয়ার ইচ্ছে ছিল। ১৯৭৮ বা ১৯৭৯ সালে দ্যা সুগারহিল গ্যাং-এর ‘র্যাপারস ডিলাইট’ শোনার পর চিন্তার মধ্যে বড় রকমের পরিবর্তন আসে। তখন বিজ্ঞানের ফোকাসটা শোবিজের দিকে চলে আসে। তিনি বলেন, তখন আমার কাছে মনে হয়েছিল শিল্পের শাখা যাই হোক না কেন আমি সেখানে যুক্ত হতে চাই। আসলে র্যাপ মিউজিকই ছিল প্রথম সত্যিকারের বিনোদন যা আমার ইচ্ছাকে ধারণ করেছিল।
স্মিথ তার নতুন সিনেমা ‘দ্যা লিজেন্ড’ নিয়ে বলেন, ছবির গল্পটা তৈরি হয়েছে একজন ব্যক্তির লড়াই নিয়ে। যিনি কিছু একটা করতে চান এবং সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে তিনি লক্ষ্যে পৌঁছে যান।
নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মের যারা চলচ্চিত্র নির্মাণে আসতে চান, আমি তাদের পরামর্শদাতা হয়ে নির্মাণের নৈপুণ্য শেখাতে চাই। এই বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই সিরিয়াস, কারণ আমি চাই জ্ঞানের স্থানান্তর। আমি সত্যিই চলচ্চিত্র নির্মাণ শেখাতে চাই।
সৌদি আরবের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, সৌদি আরবে এসে আমার অনেক ভালো লেগেছে। চলচ্চিত্রের দুনিয়ায় তারা নবীন। সিনেমার গল্পকে বৈশ্বিক বানানোর একটি শৈলি রয়েছে। যা এরই মধ্যে বিশ্ব ভ্রমণ শুরু করেছে। আমি এখানকার নির্মাতাদের স্থানীয় গল্পগুলো গ্রহণ করে সেগুলোকে বিশ্বমানের জন্য উপস্থাপনের পরামর্শ দেব। আমার বিশ্বাস হলিউডের সঙ্গে সৌদি আরবের একটি যোগসূত্র তৈরি হলে এখানকার নির্মাতারা অনেক ভালো করবেন। আমি মনে করি রাজনীতির পরিবর্তনের চেয়ে গল্পের অভিনবত্ব সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।