সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ঢাকা

রেড সি উৎসবে একদিনে হলিউডের তিন মহাতারকা

আলমগীর কবির, জেদ্দা থেকে
প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

রেড সি উৎসবে একদিনে হলিউডের তিন মহাতারকা

এ যেন অস্কার বিজয়ীদের মেলা। অল্প সময়ের ব্যবধানে বুধবার রেড সি ফিল্ম ফেস্টিভালের কানভারসেশন প্রোগ্রামে হাজির হয়েছিলেন হলিউড অভিনেত্রী গিনেথ প্যালট্রো, হ্যালি বেরি ও পরিচালক বাজ লুহরম্যান।

বিশ্ব চলচ্চিত্রের বিখ্যাত এই তিনজনের আগমন ঘিরে সকাল থেকেই হোটেল রিটজ কার্লটনের সউক সিনেমা থিয়েটারের আশপাশে লোকজনের ভিড় ছিল অন্যদিনের চেয়ে অনেক বেশি। যদিও পূর্বনির্ধারিত টিকিট বুকিং ছাড়া থিয়েটারের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই কারো। আমন্ত্রিত অতিথি এবং অনুষ্ঠানে অ্যাক্রিডেশনপ্রাপ্তরা আইডি কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন। অন্যরা এই টিকিট সংগ্রহ করতে চাইলে পকেটের অর্থ খরচ করতে হয়।


বিজ্ঞাপন


একই দিনে তিনজনকে মঞ্চে আনার উদ্যোগটা ছিল সৌদি রিসার্চ অ্যান্ড মিডিয়া গ্রুপের (এসআরএমজি)। কোম্পানিটির সিইও জোমানা আল-রাশেদ কথোপকথনের শুরুতে গিনেথ প্যালট্রোকে নিজের রোল মডেল হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর প্যালট্রো হলিউডে অভিনয়ের পাশাপাশি কিভাবে একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন সে বিষয়ে প্রশ্ন করেন। সম্প্রতি এই তারকা তার আধুনিক লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘গুপ’-এর ১৫ বছর পূর্তি উদযাপন করেছেন।

আরও পড়ুন

‘রেড সি’র বাণিজ্যিক শাখায় সেরা ‘দ্য রিটার্ন অফ দ্য প্রডিগাল সন’
রেড সিতে এসে ধারণা পাল্টে গেছে বাজ লুহরম্যানের

জেদ্দার বিদেশিদের নিয়ে জার্মানি কনস্যুলেটের বিশেষ পার্টি
একজন মানুষ হিসাবে জিতে যাওয়াটাই বড় পাওয়া: উইল স্মিথ
জেদ্দায় একই দিনে ক্যাটরিনা ও ইয়াসমিন উন্মাদনা

‘গুপ’ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্যালট্রো বলেন, উদ্যোক্তা ও অভিনয় প্রায় একই রকম। উভয়ের জন্য একই ধরনের শক্তি প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, সত্যিই খুশি যে আমি এটি করেছি কারণ। এই কোম্পানির অগ্রযাত্রা ও এই দলের সাথে কাজ করার প্রক্রিয়া এবং সব চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখেছি, সেটা ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট হোক বা এক্সেল। আমি কখনো ভাবিনি যে আমাকে কিভাবে পিএন্ডএল পড়তে হয় তা শিখতে হবে। এই ব্যবসাটি তৈরি করা এবং এখনও আমি যা করতে পছন্দ করি তা করা খুবই রোমাঞ্চকর মনে হয় আমার কাছে।

দর্শক সারিতে থাকা একজন চলচ্চিত্রের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের (এমসিইউ) প্রজেক্টে কাজ করার সময় কেমন অনুভব করেছিলেন— এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে অস্কার জয়ী এই অভিনেত্রী বলেন, ওই প্রজেক্টে কাজ করার সময় আমি কিছুদি চলচ্চিত্র দেখা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম’ সিনেমাটাও দেখেননি। অথচ ওই সিনেমায় তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


এমসিইউ ফিল্মের সঙ্গে এই অভিনেত্রী প্রথম কাজ করেছিলেন ২০০৮ সালে ‘আয়রন ম্যান’ সিনেমায়। যেখানে নাম ভূমিকায় ছিলেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র। এই সিনেমা সম্পর্কে প্যালট্রো বলেন, ‘এমসিইউ’র সঙ্গে আমার প্রথম কাজটি ছিল অন্যদের চেয়ে আলাদা। কারণ প্রযোজনা সংস্থাটি তখন ভাবেনি যে সিনেমাটি সুপার হিট হতে চলেছে। তারা সিনেমাটি পরিচালনার জন্য জোন ফাভরেউকে নিযুক্ত করেছিলেন। মূল চরিত্রে রাখা হয়েছিল রবার্ট ডাউনি জুনিয়রকে। তখন ওনার ক্যারিয়ার ছিল খুব ছোট। কোনো প্রজেক্টের জন্য দীর্ঘমেয়াদে কেউ ওনার সাথে চুক্তি করতে চাইতেন না।

red-conv-d--Inner-01

এখনো মনে আছে তারা আমাকে ডেকে বলেছিল, আসুন আমাদের সঙ্গে একটি কাজ করুন। আমি তখন বলেছিলাম, সুপারহিরো মুভিতে কাজ করব না। উত্তরে প্রযোজনা সংস্থাটি বলেছিল, এটি একটি স্বাধীন চলচ্চিত্র। আমরা হাল্কা মেজাজের একটি সিনেমা তৈরি করতে যাচ্ছি। এখানে আপনাকে খুব একটা অ্যাকশন দৃশ্যে থাকতে হবে না। কিছুক্ষণ চিন্তা করে আমি তখন বলেছিলাম, ‘ওহ, ঠিক আছে।’ আমাদের সময়টা তখন এতটাই ভালো যাচ্ছিল যে প্রতিটি দৃশ্যেই আমরা উন্নতি করছিলাম। সিনেমার প্রথম ট্রেলারেও আমার এটিকে স্বাধীন চলচ্চিত্র হিসাবে উল্লেখ করেছিলাম। কিন্তু মুক্তির পর সিনেমাটি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলে ছিল। আমাদের ক্যারিয়ারে সিনেমাটি সবসময় মাইল ফলক হয়ে থাকবে। ওই সিনেমার আমার কাছে সব সময় আনন্দের স্মৃতি হয়ে থাকবে।

এই অভিনেত্রীকে সর্বশেষ দেখা গেছে ‘দ্য পলিটিশিয়ান’ সিনেমায়। যেটি মুক্তি পেয়েছে নেটফ্লিক্সে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় হলিউডের সিমেনায় আবার কবে দেখা যাবে? ‘আমি কখনো না বলি না। আমি এখন যা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি তাতে খুশি। তবে আবার কবে হলিউডের সিনেমায় ফিরব তা এখন বলতে পারছি না। কারণ ভবিষ্যতে কি হবে সেটা আমি কখনোই জানি না।’

হ্যালি বেরির অস্কারের অনুভূতি

হ্যালি বেরি, প্রথম এবং একমাত্র আফ্রিকান-আমেরিকান অভিনেত্রী যিনি সেরা অভিনেত্রী হিসাবে একাডেমি পুরস্কার (অস্কার) জিতেছেন। রেড সি ফিল্ম ফেস্টিভালে এসে বুধবার ওই পুরস্কারের অনুভূতি, আসন্ন প্রজেক্ট এবং জেদ্দায় তার পরবর্তী সিনেমার কিছু অংশের শুটিংয়ের ব্যাপারে কথা বলেছেন।

হ্যালি অডিটরিয়ামে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে কারতালির মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানানো হয়। চেয়ারে বসার পর তিনি বলেন, ফ্লাইটে বসে জেদ্দা নিয়ে চমৎকার একটি গল্প আমার মাথায় এসেছে। আমি এই গল্প নিয়ে একটি সিনেমা তৈরি করতে চাই।

বলে রাখা ভালো, এই অভিনেত্রী সম্প্রতি ‘হ্যালিহোল‘ নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা গড়েছেন। যেখানে তিনি অংশীদার হিসেবে রেখেছেন ডব্লিউএমই মোশন পিকচার বিভাগের অংশীদার হলি জেটারকে। নতুন গল্প সম্পর্কে এই অভিনেত্রী বলেন, বিমানে আসার পথে একটি গল্প আমার হৃদয়ে গেঁথে গেছে। সিনেমার মাধ্যমে আমি সেটা ভাগ করতে চাই।

red-conv-d--Inner-02

মঞ্চে তার সঙ্গে উপস্থাপক হিসেবে ছিলেন রায়া আবিরচেদ। তিনি লেবানিজ উপস্থাপক। তার এক প্রশ্নের জবাবে হ্যালি বেরি বলেন, এটির মূলে একটি প্রেমের গল্প, তবে এটি খুবই ন্যাচারাল, যা সময়কে ভ্রমণের মাধ্যমে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত।

‘মনস্টারস বল’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ২০২২ সালে তিনি অস্কার জয় করেছেন। ওই পুরস্কার জয় এবং অস্কার মঞ্চের বক্তৃতা সম্পর্কে হ্যালি বলেন, অস্কার জয়ের মুহূর্তটা আমার কাছে স্মরণীয় কোনো ঘটনা নয়। কারণ আমি যখন এই পুরস্কারটি জয়ের আশা করিনি তখন পেয়েছি। আমি জানি না অন্য কারো ক্ষেত্রে এমন অনুভূতি হয়েছে কিনা। কারণ আমি যখন গোল্ডেন গ্লোব জিতেছিলাম। তখনই মনে হয়েছিল আমি অস্কার পাচ্ছি। কিন্তু ওই বছর যখন পুরস্কারটি হাতে পাইনি তখন আমার মন ভেঙ্গে গিয়েছিল।

‘মনস্টারস বল’ সিনেমার যাত্রা প্রসঙ্গে এই অভিনেত্রী বলেন, আমি যখন 'মনস্টার বল'-এ কাজের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তখন আমার সব এজেন্ট এবং চারপাশের মানুষজন বলছিল যে এটি আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দেবে। কিন্তু আমি সিনেমাটিকে নিয়েছিলাম এক্সপেরিমেন্ট হিসাবে। তাই গত বছর একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন তালিকায় নাম থাকার পরও লিখিত কোনো বক্তব্য তৈরি করিনি। কারণ আমি ওই মুহূর্তটাকে এনজয় করতে চেয়েছিলাম। সত্যি কথা বলতে আমি পুরস্কারের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কারণ আশা ভঙ্গের কষ্ট আমি বুঝি। তাই পুরস্কারের জন্য আমি প্রস্তুতও ছিলাম না।

যখন অস্কারের মঞ্চে আমার নাম ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন আমি অনুভূতিশূন্য হয়ে গিয়েছিলাম। মনে আছে রাসেল ক্রো হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে এসে মুখের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, নিঃশ্বাস নিন। আমি তখন বড় করে নিঃশ্বাস নিয়েছিলাম। তখনও আমার ঘোর কাটছিল না। পুরস্কারটি গ্রহণের পর বারবার মনে হয়েছিল এটিই কি অস্কার!

এই অভিনেত্রী কথা বলেছেন তার পরবর্তী অ্যাকশন-কমেডি প্রজেক্ট নিয়েও। ‘মউস ভার্স মাউড’ নামের ওই প্রজেক্ট তিনি করছেন যৌথভাবে অ্যাঞ্জেলিনা জোলির সঙ্গে। হ্যালি বলেন, দুজন মহিলা মিলে সংবেদনশীল এই প্রজেক্টটি হাতে নিতে পেরে বেশ রোমাঞ্চিত। অধিকাংশ সিনেমায় নেপথ্যে পুরুষদের বড় ভূমিকা থাকে। এই ভূমিকার একটি ছাপ পর্দায়ও ফুটে ওঠে। সেই জায়গা থেকে আমাদের কাজটি ভিন্ন রকম হবে। কারণ এখনে কাজের মূল অর্থায়নের জায়গায় রয়েছি আমরা দুই নারী।

 

হিট মাস্টার বাজ লুহরম্যান

‘রেড সি’র তৃতীয় সংস্করণে প্রধান বিচারকের ভূমিকায় রয়েছেন বাজ লুহরম্যান। অস্ট্রেলিয়ান এই লেখক ও পরিচালকে সিনেমার হিট মাস্টার বলেও ডাকা হয়। ৩০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার হিট সিনেমার অভাব নেই। ‘রোমিও+জুলিয়েট’, ‘মৌলিন রুজ’, ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’ এবং ‘এলভিস’ এর মতো বিখ্যাত সব চলচ্চিত্রের নির্মাতা তিনি।

বুধবার অডিটরিয়ামে উপস্থাপক রায়া আবিরচেদ তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন ক্যারিয়ারে এত হিট সিনেমা উপহার দেওয়ার নেপথ্য কাহিনী। জবাব দিতে গিয়ে তিনি উদাহরণ হিসেবে এনেছেন ‘এলভিস’ সিনেমার কথা। তার মতে, একটি সিনেমায় যখন সবাই মন প্রাণ দিয়ে কাজ করেন তখন সেটা হিট হতে বাধ্য। করোনার কারণে আমি ‘এলভিস’ সিনেমার সফলতার ব্যপারে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ছবির মূল অভিনেতা অস্টিন বাটলার কখনোই হাল ছাড়েননি।

red-conv-d--Inner-03

বিখ্যাত এই পরিচালক বলেন, অস্ট্রিন আমার সঙ্গে তখন মূল্যবান একটি সত্য গোপন করেছিল। আমাদের কাজ শেষ হওয়ার অনেক পরে সে আমাদের জানিয়ে ছিল যে তার মা মারা গেছে। অথচ মা-ই ছিলেন তার কাজের মূল অনুপ্রেরণা। অডিশন থেকে শুরু করে শুটিং সব জায়গায় মাকে সে সঙ্গে রাখতো।

অস্টিন বাটলারকে আমি চিনতাম না। সে ডেনজেলের সঙ্গে এক মঞ্চে কাজ করেছিল। সে আমাকে বলেছিল, আমি কখনো একজন তরুণ অভিনেতাকে এত পরিশ্রম করতে দেখিনি। ডেনজেল বলেছিল, আপনি তার ওপর আস্থা রাখতে পারেন। আমি তাই রেখেছিলাম। এর ফলটাও আপনারা দেখেছেন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর