লোহিত সাগর পাড়ের শহর জেদ্দায় রেড সি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালের পুরস্কার ঘোষণা শুরু হবে আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা থেকে। ধাপে ধাপে এই পুরস্কার দেওয়া হবে আরও দুই দিন। তার আগে সোমবার রাতে সেরা চলচ্চিত্রের বাছাই প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন ফেস্টিভ্যালের জুরি বোর্ড প্রধান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক, পরিচালক ও প্রযোজক বাজ লুহরম্যান।
তিনি বলেন, এখানে কাজ করতে এসে আমার ধারণা পাল্টে গেছে। লরেন্স অফ এরাবিয়ার মতো ঐতিহাসিক সিনেমার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। সেই সময় থেকে আরব বিশ্বের প্রতি আমার একটি স্থায়ী আবেগ ছিল। সর্বশেষ সৌদি আরব সফর করার পর আমি সত্যিই অনুপ্রাণিত ছিলাম যে এ অঞ্চলে অসাধারণ সব তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা উঠে আসছে। বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ কাড়তে যথেষ্ট প্রতিভা নিয়েই তারা বেড়ে উঠছে।
বিজ্ঞাপন
বাজ লুহরম্যান বলেন, আরব, এশিয়া ও আফ্রিকা জুড়ে সিনেমার মাধ্যমে এক ধরনের যোগাযোগ ঘটছে যার অংশ হতে পারাটা সম্মানের। এ উৎসবের মাধ্যমে এই সংযোগটা আরো বেশি প্রকাশিত এবং উদ্ভাসিত হতে শুরু করেছে।
বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, আগে কখনো এটা করিনি। আমি কখনই দিনে তিন থেকে চারটি সিনেমা দেখতে বসে থাকতে বাধ্য হইনি। এটি সাংবাদিক ও বিচারকদের প্রতি আমার সহানুভূতি ও সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা খুবই ভালো একটি অভিজ্ঞতা, কারণ আমি এটি থেকে অবিশ্বাস্য রকম মানসিক শক্তি পেয়েছি। আর আপনি যে পরিমাণ সিনেমাই দেখেন না কেন, বিচার কাজটা কিন্তু সহজ না। এটা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ সংবেদশীল একটি বিষয়। আমাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আসলে সিনেমা সত্যিই শক্তিশালী এবং সত্যিই ভালো হতে পারে। যা সমাজ পরিবর্তনের নিয়ামক হিসাবে কাজ করে।
আরও পড়ুন
জেদ্দার বিদেশিদের নিয়ে জার্মানি কনস্যুলেটের বিশেষ পার্টি
একজন মানুষ হিসাবে জিতে যাওয়াটাই বড় পাওয়া: উইল স্মিথ
জেদ্দায় একই দিনে ক্যাটরিনা ও ইয়াসমিন উন্মাদনা
তিনি আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ফলাফল ঘোষণার পর অনেকেই আমাকে নিয়ে সমালোচনা করবে। তবে আমি উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের আমার মতামতের পক্ষে যুক্তি দেখাতে পারব।
‘এলভিস’ খ্যাত অস্ট্রেলিয়ান এই পরিচালক বলেন, লোকে যখন রেড সি ফিল্ম ফেস্টিভাল নিয়ে প্রশ্ন করেন, তখন আমার উত্তর দেওয়া সত্যিই সহজ হয়। সবাইকে আমি বলে দেই, যান এবং সিনেমা দেখুন, তারপর এখানে কি ঘটছে সে সম্পর্কে আমার সঙ্গে কথা বলবেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রত্যেকটা স্তরই বেশ আশ্চর্যজনক। তবে আমি এখানে জেদ্দায় দর্শকদের সঙ্গে বসে দেখেছি যে প্রত্যেকটা বিষয় বেশ শক্তভাবে দর্শকদের মনে নাড়া দেয়। বিষয়টি আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে।
২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা ‘এলভিস’র পর নতুন কোনো সিনেমা না করা প্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান এই পরিচালক বলেন, আমি আসলে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমি সিনেমার বাইরে থিয়েটারেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করেছি। এখন এসব নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। এই কারণে নয় যে আমি কিছু লুকানোর চেষ্টা করছি। কোনো কিছুর পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি না নিয়ে যদি কিছু বলে ফেলি তাহলে পরিবেশ যেমনই হোক আমাকে সেটা করতে হবে। ডায়েরিতে নিজের জন্য একটি সময়সীমা তৈরি করেছি, যেখানে বছরের শেষ নাগাদ কি করতে যাচ্ছি তার জন্য আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকব। আমি কখনো হুটহাট সিনেমা তৈরি করি না। যেকোনো প্রজেক্ট হাতে নিলে কয়েক বছর সময় নেই। তাই ভুল হতে পারে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। সিনেমায় কখনো ভুল কাস্ট করা উচিত নয়। স্ক্রিপ্টের সঙ্গে মিল রেখে কাজ এগিয়ে নিতে হয়। ভুল হলে আপনারাই আবার প্রশ্ন করবেন কেন আমি এই পথে নেমেছিলাম।
সিনেমায় কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, যখন আমি গ্যাটসবি (দ্য গ্রেট গ্যাটসবি) সিনেমা বানাই তখন ১৮ মাসের জন্য গ্রেসল্যান্ডে একটি অফিস নিয়ে ছিলাম। আমরা যখন সিনেমার শুটিং শুরু করি তখন ওখানকার সবকিছু ছিল আমাদের চেনা-জানা। ফলে আনন্দের সঙ্গে আমরা কাজটি করতে সক্ষম হয়েছিলাম এবং বিশ্বজুড়ে সিনেমাটি প্রসংসিত হয়েছিল।
মনে রাখা প্রয়োজন যে বিশ্বব্যপী সর্বাধিক আয় করা ১০টি অস্ট্রেলিয়ান সিনেমার মধ্যে চারটিরই পরিচালক বাজ লুহরম্যান।