প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার ঘাটতি নিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন এই বাজেটের আকার চূড়ান্ত করা হয়েছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। যা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি বা ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।
# ঘাটতি-২,৪৫,০৬৪ কোটি
# ব্যাংক ঋণ ১,০৬,৩৩৪ কোটি
# জিডিপি প্রবৃদ্ধি-৭.৫%
# মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশ
চলতি অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে পাঁচ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করা হবে।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য যে বাজেটটি উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে তাতে ঘাটতি থাকবে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। জিডিপি’র অংশ হিসেবে যা সাড়ে ৫ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ছিল দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ হলেও সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে বেশি নির্ভর করতে হবে ব্যাংকিং খাতের ওপর। এই খাত থেকে নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে এক লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৬৮ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। এবং স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৩৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণ লক্ষ্য ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৮৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আগামী অর্থবছরের ব্যাংক বর্হিভূত ঋণের মধ্যে শুধুমাত্র সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরে বিদেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিট ঋণ নেওয়া হবে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। এবং ঋণ পরিশোধে ব্যয় করা হবে ১৭৮ হাজার কোটি টাকা।
আয় আসবে কোথা থেকে
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য মোট কর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। মোট কর রাজস্বের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আদায় করা হবে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বর্হিভূত খাত থেকে আদায় করা হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতিত প্রাপ্তি থেকে আদায় লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে তিন লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
আগামী অর্থব ছরে তিন হাজার ২৭১ কোটি টাকা বিদেশি অনুদান পাওয়া যাবে বলে বাজেটে উল্লেখ থাকবে।
কোথায় ব্যয় করা হবে
আগামী অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে চার লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদ দিতেই ব্যয় করতে হবে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। এই সুদের মধ্যে আবার দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় হবে ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। এবং বিদেশি ঋণের সুদ গুণতে হবে সাত হাজার ২০০ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয়ের জন্য ধরা রয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)
আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপি’র আকার ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে দুই লাখ ৯ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
জিডিপি
আগামী অর্থবছরে জন্য জিডিপি’র আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু এই উচ্চাভিলাষী প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
মূল্যস্ফীতি
আগামী অর্থছরের মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
এইচজে/এমআর