শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

‘বাজেট ঘাটতি মেটাতে টাকা ছাপানো যাবে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২৪, ০৬:৪৯ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

বাজেট ঘাটতি মেটাতে টাকা ছাপানো যাবে না বলে জানিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর মুদ্রানীতি প্রণয়ন করতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে টাকা ছাপানো যাবে না। তাতে ছয় থেকে ৯ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

বুধবার (১২ জুন) রাজধানীর গুলশানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ব্যবসায়ী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকা এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।


বিজ্ঞাপন


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিময় হারের উদারীকরণ একটি ভালো পদক্ষেপ। ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে মূলধন, সক্ষমতা, তারল্য, ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা– এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে একীভূতকরণ করা উচিত।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নতুন অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অবস্থান শক্ত রাখতে হবে। বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনতে হবে। সুদহার বাজারভিত্তিক করতে হবে। ব্যাংক খাত নিয়ে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। জবাবদিহি ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ বন্ধ করতে হবে।

পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাজেটের আকার ছোট হলেও অর্থায়নের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা রয়ে গেছে। তা হচ্ছে ব্যাংক খাত থেকে সরকারকে টাকা নিতেই হবে। ব্যাংক খাত তো সবল নয়। বরং অনেক দুর্বল। ব্যাংকে আমানত প্রবৃদ্ধি গত বছর সাড়ে সাত শতাংশের মতো ছিল। এবার যদি আমানতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, তাহলে ব্যাংকগুলোতে এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আমানত আসবে।

তিনি বলেন, সরকার এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেলে ব্যক্তি খাতের ঋণের জন্য ব্যাংকে থাকবে মাত্র ৩৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকে এ বছর যে আমানত আসবে তার থেকে ৮০ শতাংশ ঋণ নেবে সরকার। বাকি ২০ শতাংশ ঋণ নিতে পারবে বেসরকারি খাত। তাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। তাই সরকারের উচিত, ব্যয় আরও অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা সংকোচন করা। একই সঙ্গে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে ৯০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে আসা উচিত।


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ যেভাবে বাড়ছে তাতে অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। ব্যাংক খাতে সংস্কার করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের বর্তমান ভঙ্গুর অবস্থা থেকে সরে আসতে না পারলে ভবিষ্যতে সরকার কিংবা ব্যক্তি কেউই ঋণ নিতে পারবে না। তাই ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা বন্ধ করতে হবে কিছু দিনের জন্য। কারণ দুর্বল ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করতে গিয়ে অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে দেওয়া ঠিক হবে না।

ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে উদ্যোগ নিয়েছিল তাতে রাজনৈতিক সমর্থনের অভাব ছিল। একীভূত হওয়ার কাঠামোতে ত্রুটি থাকায় উদ্যোগটি ব্যর্থ হয়েছে।

পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, কেউ কেউ বলছেন যে এ বাজেট সংকোচনমূলক। তবে এটি সংশোধিত বাজেটের তুলনায় কিছুটা সম্প্রসারণমূলক। গত ১৫ বছরের মধ্যে এবারই বাজেটে ঘাটতি কম, যা সংকোচনমূলক রাজস্ব ও আর্থিক নীতি সমর্থন করে।

টিএই/এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন