কোনো মানুষ দিয়ে নয়, কোটি টাকার খামার পাহারার দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে বিদেশি জাতের ২টি কুকুর দিয়ে। চোরের হাত থেকে রেহাই এবং শৃগালের উৎপাত থেকে রেহাই পেতে গবাদিপশুর পাহারায় কাজ করছে কুকুর দুটি।
৮ মাস আগে নওগাঁর পোরশা উপজেলার ছাওড় ইউনিয়নের সারক ডাংগার মাঠ নোনাহার (পশ্চিম পাঁড়ায়) একটি গরুর খামার গড়ে তোলেন উদ্যোক্তা মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ। সেখানে বর্তমানে তার ১৪০টি বিভিন্ন জাতের গরু আছে। আর এই খামারের নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা হয়েছে বিদেশি (জার্মান) জাতের দুটি কুকুর। তাদের নাম রাখা হয়েছে জ্যাক ও হান্না। এমন পদক্ষেপ নেওয়ার সুফলও পাচ্ছেন তিনি। অনেকটা শখের বসে হলেও বেশ সাড়া ফেলেছে। এছাড়াও তার এই খামারে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে আরও ৬-৭ জন মানুষের।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে কথা হলে মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ ঢাকা মেইলের এই প্রতিবেদককে জানান, ৮ মাস আগে আমি এই গরুর খামার শুরু করি। এরপর শখের বসে ঢাকার একটি ফার্ম থেকে খামার দেখাশোনা করার জন্য বিদেশি জাতের দুটি কুকুর কিনে নিয়ে আসি। রাত ৮টার পরে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয় আবার সকালে তাদের আটকে রাখা হয়। খামারের চারপাশে বাউন্ডারি থাকায় তারা বাইরে কোথায় যেতে পারে না। এছাড়াও খামার দেখাশোনার জন্য ৬-৭ জন মানুষ আছে। তারা দিনের বেলা দেখাশোনা করেন।
মানুষ ছেড়ে কেন কুকুরকে বিশ্বাস করলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মানুষের চেয়ে কুকুর বিশ্বস্ত বেশি। মানুষের সবচেয়ে পোষা প্রাণী হচ্ছে কুকুর। দেখা গেল, আমি খুব বিশ্বস্ত মানুষ পেলাম কিন্তু সারাদিন কাজ করার পর রাতে সেই মানুষটি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে। এসময় চোর এসে কিছু চুরি করে নিয়ে গেল সে বুঝতেই পারলো না। কিন্তু কুকুর রাতে ঘুমাবে না আর ঘুমিয়ে গেলেও শব্দ পেলে জেগে যাবে। সেই চিন্তা থেকেই এই পরিকল্পনা করা।
তিনি বলেন, কয়েকবার চোর ভিতরে প্রবেশের চেষ্টাও করেছে। কিন্তু কুকুরগুলো হইচই করে টের পাইয়ে দিয়েছে। এছাড়াও দিনে বা রাতে অপরিচিত কোনো মানুষকে প্রবেশ করতে দেখলেই ডাক শুরু করে দেয়। সহজে কুকুরকে ফাঁকি দিয়ে কেউ ভিতরে ঢুকতে পারে না।
মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, আমার বাড়ি বগুড়াতে। মূলত আমের বাগান করার জন্য এখানে থাকা হয়। ভাবলাম বাগানের জন্য জৈব সারের প্রয়োজন এই জন্য গরুর খামার দিয়েছি। গরুর গোবর থেকে সহজেই জৈব সার তৈরি করা যাবে। এই ভাবনা থেকে গরুর খামার দেওয়া। এছাড়াও দেখা গেল হঠাৎ করে ৫ লাখ টাকার দরকার কিন্তু কাছে টাকা নেই, তখন হয়তো গরু বিক্রি করলে হাতে টাকা চলে আসবে এটাও একটি চিন্তা-ভাবনা ছিল।
বিজ্ঞাপন
ওই খামারে কাজ করেন আমিনুল ইসলাম দুলাল। তিনি বলেন, আমরা কয়েকজন সারাদিন এসব গরু দেখাশুনা করি। সন্ধ্যা হলেই দুই কুকুরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রাতে নিরাপত্তা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হয় না। বাইরের কোন মানুষ আসলে কুকুরগুলো হইচই শুরু করে। আমরা তখন সজাগ হয়ে যাই। কুকুরগুলো থাকাতে রাতে চুরি নিয়ে আমাদের আর কোনো চিন্তা করতে হয় না।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন বলেন, কুকুর যে কেউ পালতে পারে। কেউ যদি এই ধরনের কুকুর রাখতে চায় তাকে অবশ্যই জলাতঙ্কের টিকা দিতে হবে। দেখা গেল কোনো চোরকে কুকুর কামড় দিলো। এবং এর কারণে সেই ব্যক্তিটা মারা গেল, তখন এর দায়ভার কে নিবে? এছাড়া যারা পোষে তাদেরও তো ক্ষতি হতে পারে। এজন্য অবশ্যই জলাতঙ্ক’র টিকা দিতে হবে।
তিনি বলেন, যারা গ্রামে বাস করে কম-বেশি সবার বাড়িতেই কুকুর থাকে। কুকুর যে বাড়িতে থাকে অপরিচিত কেউ গেলে চিৎকার করে ডাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কুকুর দিয়ে এ ধরনের কার্যক্রম হয় কিনা আমার জানা নেই। তবে মনে করি এখন যেহেতু সিসি ক্যামেরা যুগ তাই সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা যেতে পারে।
টিবি