বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ব্যবসায়ীকে মামলার ভয় দেখিয়ে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ!

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২৩, ১১:০৯ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার এক ব্যবসায়ীর ভাংড়ি দোকানে তল্লাশিসহ ব্যবসায়ীকে মামলার ভয় দেখিয়ে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ আদায় ও চোখ বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী লাভলু ইসলাম সোমবার (১৫ মে) সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।


বিজ্ঞাপন


একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি), অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (রাজশাহী) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর সার্কেল) অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগে জানা যায়, গত (১৩ মে) শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর থানার উপ-পরিদর্শক আবুল হোসেন ও শহিদুল ইসলাম শহিদসহ সঙ্গীয় ২ জন ফোর্স নিয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানাধীন রতনকান্দি ইউনিয়নের একডালা গ্রামের মৃত কোরবান আলীর ছেলে ভাংড়ি ব্যবসায়ী লাভলু ইসলামের বাড়িতে কোনো অভিযোগ বা মামলা ছাড়াই অনাধিকার প্রবেশ করে তাকে ধরে নিয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যায়। স্থানীয় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন লোকের উপস্থিতিতে তল্লাশি চালায়।

এসময় লাভলু ইসলাম এমন তল্লাশির কারণ জানতে চাইলে এসআই আবুল হোসেন তাকে নানাবিধ গালিগালাজ ও হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স চেক করতে হবে মর্মে তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে প্রায় ২ কিলোমিটার উত্তরে মহিষামুড়া চৌরাস্তা বাজারের পূর্বপাশে মহিলা মাদরাসার পেছনে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে এবং তার নিকটে থাকা সিমেন্ট বিক্রির ৩০ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়।

এরপরও লাভলু ইসলামের চোখ বেঁধে আরও ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসানোসহ বেদধড়ক মারপিটের ভয় দেখানো হয়। নিরুপায় হয়ে লাভলু ইসলাম রতনকান্দি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ওসমান গনি ও আব্দুস সাত্তারকে ফোন দিয়ে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে মহিষামুড়া মহিলা মাদরাসার পেছনে আসতে বলেন।


বিজ্ঞাপন


লাভলু ইসলামের ফোনের সূত্র ধরে রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, একডালা গ্রামের বাসিন্দা মৃত ঘাটুর পুত্র আব্দুস সাত্তারসহ ৫ থেকে ৭ জন ঘটনাস্থল মহিষামুড়া এসে উপস্থিত হন।

এসময় লাভলু ইসলামের কাছে দাবি করা ৩০ হাজার টাকা নিয়ে উপ-পরিদর্শক (এস. আই) আবুল হোসেন ও এস, আই শহিদুল ইসলাম শহিদের সঙ্গে দেন-দরবার হয়। এক পর্যায়ে আরও ১০ হাজার টাকা তাদের দেওয়া হয়।

এভাবে লাভলুর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ৩০ হাজার ও পরবর্তীতে দরবারের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকাসহ মোট ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে লাভলুকে দুই পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে ছেড়ে নেওয়া হয়।

এ ঘটনায় একডালাসহ রতনকান্দি ইউনিয়নের সাধারণ জনগণের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর সোমবার (১৫ মে) ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী লাভলু ইসলাম ন্যায় বিচার দাবিসহ তদন্তপূর্বক দুই পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তি চেয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

স্থানীয় রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ভেন্নাবাড়ি এলাকার এক নেশাগ্রস্ত পাগলের কথা মতো ভাংড়ি ব্যবসায়ী লাভলুকে বাড়ি থেকে আটক করে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তল্লাশি চালায় কাজিপুর থানার পুলিশ।

তল্লাশি শেষে লাভলুকে কাজিপুর থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় মহিষামুড়া মাদরাসা এলাকায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে লাভলু ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। তবে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি আমার জানা নেই।

সোমবার সন্ধ্যায় বর্তমানে ব্যবসায়ী লাভলুর সঙ্গে বিষয়টি সমাধানের জন্য ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা আমার কাছে এসেছিল। বিষয়টি সমাধানের জন্য আমি লাভলু ডেকেছি। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত কাজিপুর থানার উপ-পরিদর্শক আবুল হোসেন ও শহিদুল ইসলাম শহিদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, একটি চুরি করা সাইকেল তার দোকানে বিক্রি করা হয়েছে মর্মে আমরা সিরাজগঞ্জ সদরের লাভলু ইসলাম নামের এক ভাংড়ি ব্যবসায়ীর দোকানে তল্লাশি চালিয়েছি। তবে কোনো অভিযোগ বা মামলা ছাড়া অন্য থানা এলাকায় গিয়ে তল্লাশি চালাতে পারেন কিনা এমন প্রশ্ন দুই পুলিশ কর্মকর্তা করলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। অপরদিকে তারা তল্লাশির বিষয়টি স্বীকার করলেও ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি এড়িয়ে যান। 

কাজিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শ্যামল কুমার দত্ত বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে কোনো অভিযোগ ও বা মামলা ছাড়া তাদের অভিযান বা তল্লাশি করার কোনো এখতিয়ার নেই। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে এক থানা থেকে অন্য থানায় গিয়ে অভিযান পরিচালনা অবৈধ। তবে এ অভিযোগে কোনো পুলিশ সদস্য অভিযুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য সোমবার (১৫ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডলকে মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি। ফলে এ ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub