পাঁচ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর প্রথম ঈদ। মনের আনন্দে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ছুটি কাটাতে হাজারও দর্শনার্থীর পদচারণায় ভরপুর হয়ে উঠেছে মিরসরাইয়ের পর্যটন স্পটগুলো। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীদের নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন এসব স্পটে।
জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটিতে উপজেলার পর্যটন স্পটগুলো ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। পতেঙ্গা সি-বিচ কিংবা কক্সবাজারের মতো না হলেও মিরসরাইয়ের সবুজ পরিবেশ, নির্মল হৃদ, ঝরনা, সমুদ্রসৈকত প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে টানছে। দর্শনার্থীরা দিন দিন এই উপজেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
মিরসরাইয়ের পর্যটন স্পটগুলো মুহুরী প্রজেক্ট, ডোমখালী সমুদ্র সৈকত, শিল্পনগর সমুদ্র সৈকত, আরশী নগর ফিউচার পার্ক, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া সেচ প্রকল্প ও হৃদ, খৈয়াছড়া ঝর্ণা, রূপসী ঝর্ণা, বাওয়াছড়া প্রকল্প, বোয়ালিয়া ঝর্ণা ও মেলখুম ট্রেইল।
শিল্পনগর সমুদ্র সৈকত
মিরসরাইয়ের বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গড়ে ওঠা শিল্পনগর সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণপিপাসু মানুষদের উপচে পড়া ভিড়। সাগরে জোয়ার-ভাটার খেলায় অপরূপ হয়ে ওঠে এই সৈকত। শিল্পনগরের পাশেই এই সুপার ডাইকে। ডাইকের পাশেই সমুদ্র সৈকত। বৃষ্টিতে সুপার ডাইকের কাছাকাছি পানি টইটম্বুর থাকে। বর্তমানে পর্যটকদের কাছে এটি মিনি পতেঙ্গা সি-বিচ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ঈদের ছুটি ছাড়াও সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনে মানুষের ভিড় থাকে এখানটায়।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, একটা সময় এখানে ছিল না কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা। খাল দিয়ে নৌকা করে জেলেরা মাছ ধরতে যেত সমুদ্রে। মিরসরাইয়ে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধনের পর থেকে এখানকার চিত্র পাল্টে যায়। সাগর ঘেঁষে নির্মাণ করা হয় সুপার ডাইক। সুরক্ষার জন্য বসানো হয়েছে বক্ল। অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবাদে এখানে তৈরি হয়। মূলত এরপর আবিষ্কার হয় এই সৈকতের।
ফেনী জেলা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসা তৌফিকুর রহমান বলেন, এটা বলতে গেলে বাংলাদেশের নতুন একটা সমুদ্র সৈকত। যদিওবা এটি তেমন একটা পরিচিতি লাভ করেনি। কিন্তু যারা অল্প টাকায় ঘুরতে চান তারা এই সমুদ্র সৈকতে ঘুরে যেতে পারেন। এখানে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। আমার ধারণা খুব অল্প সময়ের মধ্যে এটি বাংলাদেশের মিনি কক্সবাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
জাহেদ নামে আরেক পর্যটক বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। এই প্রথম এখানে আসলাম, এসে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। এখানে কোনো ধরণের ঝামেলা নেই। খুবই নিরিবিলি পরিবেশ।
তুহিন নামে এক পর্যটক বলেন, আমরা ৮ জন বন্ধু মোটরসাইকেল করে ফেনী থেকে এখানে ঘুরতে এসেছে। এখানে এতো সুন্দর জায়গা আছে আগে জানতাম না, খুব ভালো লাগছে এবং আমরা অনেক আনন্দ করছি। আমাদের কাছে এটি পতেঙ্গা সি-বিচের মতো মনে হচ্ছে। তবে এখানে কয়েকটি দোকান হলে খুবই ভালো লাগতো। এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকরা খাবার দাবার খেতে পারত।
আরশী নগর ফিউচার পার্ক
মিরসরাই উপজেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র আরশিনগর ফিউচার পার্ক। এখানে রয়েছে কটেজ, খেলার রাইডার, চকলেট শপ, রেস্টুরেন্ট, ফুডজোন, কৃত্রিম লেক, অনেক রাইড। বিশেষ করে শিশুদের বিনোদনের জন্য অন্যতম স্পট এটি। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে মেরি-গো-রাউন্ড, বেবি ট্রেনসহ প্রায় অর্ধশত ভাষ্কর্য ও রাইডস। রয়েছে কটেজ ও নাইট ক্যাম্পিং সুবিধা।
ঈদের তৃতীয় দিন আরশি নগর ফিউচার পার্কে গিয়ে দেখা গেছে, মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। এ যেন অন্যরকম আরশিনগর। নানা বয়সের মানুষজন এখানে বেড়াতে এসেছেন। কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা একসঙ্গে বসে গল্প করছেন। সবচেয়ে বেশি আনন্দ করতে দেখা গেছে শিশুদের। বিভিন্ন রাইডসে তাদের চড়তে দেখা গেছে। অনেকে আবার বিভিন্ন জীবের আকৃতির সঙ্গে ছবি তুলছেন।
পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছ, ১০০ টাকায় টিকেট কিনে অনেক কিছু দেখার সুযোগ করেছে এখানে। প্রায় ৫ হাজারের বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া সেচ প্রকল্প ও হৃদ
চারদিকে সবুজে মোড়ানো পাহাড়, তার ভাঁজে ভাঁজে স্বচ্ছ জল তরঙ্গ। মহামায়ার ‘মায়া’ কেবল এ বর্ণনায় সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। মহামায়া এ যেন শিল্পীর ক্যানভাসে কল্পনার রঙে আঁকা ছবি। এ সৌন্দর্যের মায়ায় দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত এখন মিরসরাইয়ের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া সেচ প্রকল্প ও হৃদ। ঈদুল ফিতরের চতুর্থ দিন সেখানে গিয়ে দেখা যায় আগের তুলনায় পর্যটকদের তেমন ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি।
টিকেট কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা একজন নিজের নাম না জানানো শর্তে বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিন ভালো পর্যটক ছিল। কিন্তু আজ সাপ্তাহিক ছুটির তুলনায় পর্যটক খুবই কম। বিশেষ করে এখানে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষরা ছুটে আসেন।
মেলখুম ট্রেইল
বন বিভাগ থেকে নিষিদ্ধ হওয়া মিরসরাইয়ের আলোচিত মেলখুম ঝিরিপথে ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। জানা গেছে ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন প্রায় শত পর্যটক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে ছুটে আসেন।
উপেজলার ঝরনাগুলো রাস্তার মুখে দাঁড়ানো গাড়ি দেখে বুঝা যাচ্ছে কী পরিমাণ ভ্রমণপিপাসু মানুষজন ঝরনায় ছুটে গেছে। যদিও বর্ষা মৌসুমের মতো পানি এখন নেই। তারপরও ঝরনায় আনন্দের কমতি নেই। এভাবে মিরসরাই প্রতিটি পর্যটন স্পটে ছুটে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। কয়েকটি স্পটে শুধুমাত্র ইজারার কারণে টিকেট সংগ্রহ করে যেতে হয়। বেশির ভাই পর্যটন স্পট উন্মুক্ত।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন বলেন, ঈদের ছুটি থাকায় এবার পর্যটক বেড়েছে। অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সারাবছর পর্যটক থাকেন। ঝরনায় বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে আসা-যাওয়া করতে বলা হয়েছে। গাইড ছাড়া কেউ যেন ঝরনায় যেতে না পারেন, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া আছে।
প্রতিনিধি/এসএস