পঞ্চগড়সহ দেশের উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় সমতল ভূমিতে এবার চায়ের উৎপাদন কমেছে। সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার ১৫১ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে, যা আগের মৌসুমের চেয়ে ৩৫ লাখ ৫৭ হাজার কেজি কম। আর গত মৌসুমে জাতীয় উৎপাদনের ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ চা সমতল ভূমি থেকে যুক্ত হলেও এবার যুক্ত হয়েছে ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
সিলেট ও চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের পর দেশের উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট দেশের তৃতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। চায়ের উৎপাদনের দিক থেকে এবারও উত্তরাঞ্চল টানা চতুর্থবারের মতো দ্বিতীয় অবস্থান দখল করেছে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার সারাদেশে চায়ের উৎপাদন হয়েছে ৯ কোটি ৩০ লাখ কেজি। গত মৌসুমে উৎপাদিত হয়েছিল ১০ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার কেজি। সেই হিসাবে এবার জাতীয়ভাবে প্রায় ১ কোটি কেজি উৎপাদন কমেছে। উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার গত মৌসুমে উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি। এর আগে ২০২২ সালে উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ ৫৯ হাজার ২২৬ কেজি।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে বেশ কয়েকটি কোম্পানি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় চায়ের বাগান গড়ে তোলে। এর পর থেকে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ক্ষুদ্র চাষি পর্যায়ে চা চাষ ছড়িয়ে পড়ে। পঞ্চগড়ের পর ২০০৭ সালে লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও এবং ২০১৪ সালে দিনাজপুর ও নীলফামারীতে চা চাষ শুরু হয়। পাঁচ জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত ১০টি ও অনিবন্ধিত ২০টি বড় চা-বাগান (২৫ একরের ওপরে) রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ১৭৪টি নিবন্ধিত ও ৬ হাজার ১৯৭টি অনিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তনের চা-বাগান (২৫ একরের কম) আছে। ২০২৩ সালে উত্তরাঞ্চলে ১২ হাজার ১৩২ দশমিক ১৮ একর জমিতে চা চাষ হলেও এবার কিছুটা কমেছে। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলে ১১ হাজার ৫২৬ দশমিক ৮৭ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। এদিকে উত্তরাঞ্চলের চা চাষের পরিধি ও উৎপাদন বিবেচনায় ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ে চায়ের তৃতীয় নিলাম কেন্দ্র (অনলাইনভিত্তিক) চালু হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে এখন পর্যন্ত ৫৩টি চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা অনুমোদন নিয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলায় ২৮টি ও ঠাকুরগাঁও জেলায় একটি কারখানা চালু রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফ খান জানান, এবার মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে অতিরিক্ত খরায় উৎপাদনে কিছুটা বাধা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সঙ্গে সমতলে কাঁচা চা পাতার দাম না পেয়ে চাষিরা চা-বাগান পরিচর্যায় অনীহা থাকায় কিছু বাগান নষ্ট করে ফেলেছিলেন।
তিনি বলেন, আমরা যে হিসাব পেয়েছি, এর চেয়েও চা বেশি উৎপাদন হয়েছে বলে মনে করি। কিন্তু সেটি রেকর্ডে আসেনি। কারণ, কারখানার মালিকেরা চাষিদের কাছ থেকে কাঁচা পাতা কেনার সময় যখন শতাংশ হিসাবে কর্তন করেন, সেই হিসাবটা কিন্তু রেকর্ডে থাকে না। কর্তন করা কাঁচা চা পাতা থেকে যে চা উৎপাদিত হয়, সেটিও উৎপাদনের হিসাবে থাকে না। এসব বিষয় চায়ের উৎপাদন কম দেখানোর একটি অন্যতম কারণ।
প্রতিনিধি/এসএস