বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে বাধা

জেলা প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০২৪, ১০:৫০ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন ও সিনিয়র স্টাফ নার্স সাইফুল ইসলামের অপসারণ এবং শাস্তির দাবিতে আয়োজিত ঘেরাও কর্মসূচি, বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই হাসপাতালের খাবারের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার মো. জসিম মিয়া এবং তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের দিকে জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।


বিজ্ঞাপন


জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বাহাউদ্দিন কক্ষে ডেকে নিয়ে সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহীনুর রহমানকে প্রথমে গালিগালাজ করেন, শাহীন গালিগালাজের প্রতিবাদ জানালে একপর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক তাঁর কোমর থেকে বেল্ট খুলে শাহীনকে বেধরক পেটাতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় ওই তত্ত্বাবধায়ক তাঁর অনুসারী সিনিয়র স্টাফ নার্স সাইফুল ইসলাম এবং আউট সোর্সিংয়ের কর্মচারীদের ফোনে ডেকে এনে শাহীনকে মেরে লাশ গুম করার হুমকি দেন।

পরে শাহীন বাদী হয়ে তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে জীবন নাশের হুমকির বিষয়ে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। একই দিন তত্ত্বাবধায়কের পক্ষে হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হাবু মিয়া বাদী হয়ে নার্স শাহীনুরের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর ঘটনার সাতদিন পর গত মঙ্গলবার সকাল সারে দশটায় মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন এবং তাঁর অনুসারী সাইফুল ইসলামের অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন সিনিয়র নার্স শাহীনুর রহমানের গ্রামবাসী। অপরদিকে বেলা ১২ টার দিকে অফিস সময়ে শাহীনুরের অপসারণের দাবিতে হাসপাতাল চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ওই তত্ত্বাবধায়কের অনুসারী নার্স আউট সোসিংয়ের কর্মচারীরা।

ওই ঘটনার জেরে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহীনুর রহমানের গ্রামবাসী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন এবং সিনিয়র নার্স সাইফুল ইসলামের অপসারণ এবং শাস্তির দাবিতে ঘেরাও কর্মসূচি, বিক্ষোভ মিছিল করেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঘেরাও কর্মসূচি ও প্রতিবাদ মিছিলটি হাসপাতালে প্রবেশ করার পর হাসপাতালের খাবারের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার ও সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মো. জসিম মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের সামনে বাধা দেওয়া হয়। মিছিলের ব্যানার ছিনিয়ে নেওয়ায় কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।

অভিযোগের বিষয়ে সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মো. জসিম মিয়া বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে সেবা নিতে এসে দেখি বহিরাগত কিছু লোক হাসপাতালের ভেতরে এসে তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। এটা হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের ডিস্টার্ব হচ্ছে। এরা কারা যারা হাসপাতালের ভেতরে রাজনীতি ঢোকাতে চাচ্ছে এবং হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছি।’


বিজ্ঞাপন


অপরদিকে হাসপাতাল ঘেরাও কর্মসূচি পালন করার বিষয়ে শাহীনুর রহমান বলেন, ‘আমি ভোরে জরুরি কাজে ঢাকায় গিয়েছিলাম। আমি শুনেছি, আমার এলাকাবাসী আমার পক্ষে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। আমি বিপদে আছি হয়তো বিষয়টি জেনে আমার এলাকাবাসী আমাকে ভালোবেসে গিয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক ঘটনা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক পুলিশ এবং বহিরাগত গুন্ডা দিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়েছেন।’

সেবাকেন্দ্রে গিয়ে স্লোগান দেওয়া আপনি সমর্থন করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শাহীনুর বলেন, ‘অবশ্যই আমি সমর্থন করি না। গ্রামবাসী আমাকে ভালোবেসে গিয়েছেন কোথায় কি করতে হবে তারা হয়তো নিয়ম নীতি অতোটা বুঝেন না।’

সদর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, ‘গত মঙ্গলবার তিনি (শাহীনুর রহমান) সরকারি চাকরি অবস্থায় থেকে প্রশাসনের বিরুদ্ধে বহিরাগতদের দিয়ে মানববন্ধন করিয়েছেন। যা সরকারি চাকরির বিধির মধ্যে পড়ে না। হাসপাতালের কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ বা ক্ষোভ থাকলে সে তাঁর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবে। কিন্তু সে কোন চেইন অব কমান্ড মানে না।  হাসপাতাল একটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এখানে গণ জমায়েত করা যায় না। আমি হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে হিসেবে বিধি মেনে পদক্ষেপ নিতে পারি। আজকের ঘেরাও কর্মসূচি এবং মিছিলের বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

বহিরাগতদের দিয়ে বিক্ষোভকারীদের বাধা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. বাহাউদ্দিন বলেন, কে এসেছে, কারা জমায়েত হচ্ছে, কারা বাধা দিয়েছে তা আমার জানা নেই। আমি কোন না কোন ভাবে জেনেছি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় বহিরাগতরা বাধা দিতে পারে সেই বিষয়টি পুলিশকে অবগত করেছি।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিল হোসেন বলেন, ‘বহিরাগতরা হাসপাতালের সেবা বিঘ্নিত করতে পারে কর্তৃপক্ষ এমনটা জানানোর পর আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। পরে সেখানে কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। দায়িত্বপালনকালে পুলিশের গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub