‘আস্তে কথা কন মানে? আমি জাকির কথা বলিই এইভাবে। আপনাগের মতো তিনদিনের সাংবাদিকরে আমি বালেও দাম দেইনে।’
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বোর্ড অফিসের পাশেই জমিজমা নিয়ে বিবাদে দুই ভাইয়ের মারামারির বিষয়ে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি এভাবেই চরম অসৌজন্যমূলক অসাদাচারণ ও দম্ভোক্তি করেন।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে রায়পুর ইউপি কার্যালয়ে চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে।
‘আপনারা যানতো, যা পারেন লেইখে দিয়েন, বের হন, এখনই বের হন।’ প্যান্টের জিপার দেখিয়ে বলেন, আপনাগের মতো সাংবাদিকগে চ্যাটেরও দাম দেইনে আমি। এসবই খুচোয় বেড়ান আপনারা’ গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে এভাবেই দম্ভোক্তি করতে দেখা যায় এই ইউপি চেয়ারম্যানকে। জাকির হোসেন বলেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, রায়পুর বোর্ড অফিসের পাশেই মৃত আব্দুল হাই কাজীর তিন সন্তানের মধ্যে এজমালি সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ। এদের মধ্যে বড় সন্তান কাশেম কাজী ছোট ভাই কাজী ইউনুস কাজীর চলাচলের পথে দু’পাশে বড় বড় গর্ত কেটে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে এ নিয়ে দু’ভাইয়ের মধ্যে মারামারি হয়। এতে বড় ভাই কাশেম কাজী বাঁশ দিয়ে আঘাত করলে ছোটভাই ইউনুসের মাথা ফেটে যায় বলে তারা অভিযোগ করেন। অপরপক্ষে কাশেম কাজীও তাকে মারপিট করা হয় বলে অভিযোগ করেন। দু’ভাই মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলে একই ওয়ার্ডের পাশাপাশি দুই বেডে তাদের ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে তথ্য জানতে যান। এরপর তারা পারিবারিক জমিজমা নিয়ে বিবাদের বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে আহত দুই সহোদরের মায়ের বক্তব্য নেন। তাদের বয়োবৃদ্ধ মা আমেনা বেগম (৮০) বলেন, বড় সন্তান কাশেম কাজী ছোট সন্তান ইউনুস কাজীর বাড়িতে চলাচলের পথে বাঁধা দেন বলে তিনি তার ভাগের ৬ শতাংশ জমি ছোট ছেলের নামে দলিল করে লিখে দিয়েছেন। এরপর থেকে বড় সন্তান ও মেজো সন্তান দু’জনে মিলে ছোটজনের বিরুদ্ধে লেগেছে। তারা রাস্তার ওপর বড় বড় গর্ত খনন করে, ইট ও গোবর রেখে চলাচলে বাধা দিচ্ছে। এনিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বর অনেকবার সালিশ করে দিছে। কিন্তু বড়জন মানে নাই।
বিজ্ঞাপন
এ তথ্য জানতে পেরে রাস্তার পাশেই অবস্থিত ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে যান সাংবাদিকেরা। সেখানে অফিস কক্ষের মধ্যে তিন চারজনকে নিয়ে ধুমপান ও সিগারেট খেতে দেখা যায় তাদের। এসময় সাংবাদিকেরা তাদের পরিচয় দিয়ে দুই ভাইয়ের বিবাদের বিষয়টি জানতে চাইলে একেবারে শুরু থেকেই উত্তেজিত হয়ে উঠেন ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন।
রাগান্বিত কণ্ঠে বলেন, আমি এ বিষয়ে আপনাদের কিছুই বলব না৷ এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা তাকে বলেন, আপনি উত্তেজিত হবেন না। আমরা কারও পক্ষে-বিপক্ষে কিছু জানতে চাইছি না। এ বিষয়ে আপনি কিছু বলতে পারবেন না, এ কথাটুকুই ক্যামেরার সামনে বলেন। এ কথা শুনে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন তিনি উল্টো আরও উত্তেজিত হয়ে অশ্রাব্য উক্তি করতে থাকেন। এবং শেষে বলেন, আপনি যাবেন নাকি? যান বাইরে যান এখনই।
এদিকে, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বের হয়ে রাস্তায় উঠে দেখা যায় সেখানে একটি হাইয়েজ মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে। উপস্থিত দু’জন জানান, ওই গাড়ি থেকে সাত আটজন যুবক নেমে কাশেম কাজীর বাড়িতে প্রবেশ করেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়।
প্রতিনিধি/এসএস